হালদা পাড়ে হ্যাচারিগুলোতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ডিম সংগ্রহকারীরা

মাহমুদ আল আজাদ, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি ।।

প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীতে রুই জাতীয় মা-মাছের ডিম থেকে রেণু উৎপাদনের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন হালদা পাড়ের জেলেরা। তারা কেউ নিজের তৈরি সনাতন পদ্ধতিতে কুয়ায়, আবার কেউ সরকারি হ্যাচারীতে ডিম পরিস্ফুটনে কাজ করছেন। তবে ডিম আহরণকারীরা জানিয়েছেন, এবার গত বছরের চেয়ে কম ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। যার পরিমাণ প্রায় ৮ হাজার কেজির মতো।

সরেজমিন দেখা গেছে, শনিবার সকাল থেকে হালদা পাড়ের জেলেরা প্রথমে সনাতন পদ্ধতিতে মশারির নেট দিয়ে তৈরি বিশেষভাবে এক ধরনের জাল পেতে ডিম তুলে নিয়েছিল নৌকায়। তার আগে নৌকার মাঝে তক্তা ও মাটি দিয়ে কৃত্রিম পুকুরের মতো তৈরি করেছিল। আর এই গর্তে সূতির মিহি কাপড় দিয়ে তাতে ডিম রাখার ব্যবস্থা করে। এরপর নদীর তীরে মাটির তৈরি অগভীর কুয়ায় ছেড়ে দিয়েছিল সংগৃহীত ডিম। ডিম থেকে রেনু পরিপূর্ণতা লাভ করার পর এক কেজি রেণু প্রায় ৩৫-৪০ হাজার টাকা দামে বাজারজাত করে ডিম সংগ্রহকারীরা।

এদিকে ডিম সংগ্রহকারীরা জানান, এ বছর প্রতিটি নৌকায় গড়ে প্রায় ৫-৬ বালতি করে ৬টি নৌকায় প্রায় ৩৫ বালতি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। অংকুরি ঘোনা এলাকার বিধান বড়ুয়া জানান, তিনটি নৌকা দিয়ে গড়ে ৩-৪ বালতি পর্যন্ত ডিম সংগ্রহ করেছেন। হাটহাজারী ও রাউজান দুই উপজেলায় সাতটি হ্যাচারী রয়েছে। এসব হ্যাচারীগুলো হল-হাটহাজারী উপজেলার মদুনাঘাট হ্যাচারী, মাদারীপুর হ্যাচারী, মাছুয়াঘোনা হ্যাচারী, গড়দুয়ারা নয়াহাট হ্যাচারী ও রাউজান উপজেলার কাগতিয়া হ্যাচারী, পশ্চিম গহিরা হ্যাচারী, সিপাহীরঘাট হ্যাচারী। পূর্বে হ্যাচারীগুলোর অবস্থা বেশ শোচনীয় ছিল তবে এবার হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনের উদ্যেগে ও উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে হ্যাচারিগুলোর সংস্কারে পরিবর্তন হয় কুয়াগুলো। বর্তমানে সবগুলো হ্যাচারিতে ডিম সংগ্রহকারীরা ডিম থেকে রেণু তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

হাটহাজারী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজহারুল ইসলাম জানান, হালদা নদী থেকে সংগ্রহ করা ৮ হাজার কেজি ডিম সরকারি ৪টি হ্যাচারি ও সংগ্রহকারীদের ব্যবস্থাপনায় বেসরকারি ১৭৯টি কুয়াতে রাখা এবং নিয়মানুযায়ী সেখানে প্রতি ৪০ কেজি ডিম থেকে ১ কেজি রেণু উৎপাদন করা হবে বলেও তিনি জানান।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ রুহুল আমিন সাংবাদিকদের জানান, মাছুয়া ঘোনা, শাহ মাদারি এবং মদুনাঘাটসহ ৩টি হ্যাচারির কুয়াগুলো হালদার নদী থেকে সংগৃহীত ডিম সংরক্ষণের জন্য আগে থেকেই প্রস্তুত করে রাখা হয়েছিল। হালদায় জেলেদের ডিম সংগ্রহে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহায়তা দিতে চান বলেও জানান তিনি। হালদার রেনুতে ভেজালকারীদের তথ্য পেলে সাথে সাথেই উপজেলা নির্বাহী অফিসার কিংবা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে জানানোর জন্য পরামর্শ দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ রুহুল আমিন।

Similar Posts

error: Content is protected !!