বিশেষ প্রতিনিধি ।।
নিকলীতে শামছুদ্দিন ওরফে শামছু মিয়া (৫৫) নামে এক পাথরশ্রমিককে বাড়ির সামনে থেকে তুলে নিয়ে ছুরি, বাটখারার পাথর ও ইটের আঘাতে হত্যার ঘটনায় ১১ দিনেও মামলা নেয়নি পুলিশ। উল্টো নিকলী থানার ওসি নাসির উদ্দিন ভূঁইয়া নিহতের ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। এ পরিস্থিতিতে জাহাঙ্গীর আলম মঙ্গলবার (১১ জুন ২০১৯) আদালতে মামলা করেছেন। নিহত শামছুদ্দিন ওরফে শামছু মিয়া নিকলী উপজেলার কারপাশা গ্রামের মৃত মারাজ মিয়ার ছেলে। মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেছেন নিহতের পরিবারের লোকজন।
কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের গৌরাঙ্গ বাজারে স্থানীয় একটি অনলাইন দৈনিকের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করেন তারা। সংবাদ সম্মেলনে নিহত শামছুদ্দিন ওরফে শামছু মিয়ার স্ত্রী রওশন আরা, দুই ছেলে জাহাঙ্গীর আলম ও শরীফুল আলম দীপু, ছোট ভাই নূর মিয়া ও চাচা বজলুর রহমানসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন নিহতের বড় ছেলে জাহাঙ্গীর আলম।
লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, প্রতিবেশী আবদুল লতিফ সালকারুম (৩৮) ও তার পরিবারের লোকজনের সাথে দীর্ঘদিন ধরে বাড়ির সীমানা নিয়ে শামছুদ্দিন ওরফে শামছু মিয়ার বিরোধ চলে আসছিল। পরবর্তিতে ২০১১ সালের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে কারপাশা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য পদে সালকারুম এবং শামছুদ্দিন ওরফে শামছু মিয়ার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম প্রার্থী হলে দুই পরিবারের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে উঠে। এই বিরোধের জেরে দুই পরিবারের মধ্যে ঝগড়াঝাটিও হয়। এ রকম পরিস্থিতিতে গত ২৯ মে ভোর ৬টার দিকে শামছুদ্দিন ওরফে শামছু মিয়া নিকলীর মির্জাপুরে পাথরের নৌকায় শ্রমিকের কাজের দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে বাড়ির সামনের রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সড়কে পৌঁছলে আবদুল লতিফ সালকারুম, তার পিতা নূর হোসেন, খালাতো ভাই মামুন, খালু কডু মিয়া ও তার মামাতো ভাই ইয়াসিন মিলে নাক মুখে চেপে ধরে মামুনের অটোরিক্সাতে জোর করে তুলে নেয়।
প্রায় এক কিলোমিটার দূরে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সড়কের মজলিশপুর ভূঁইয়া বাড়ির মোড়ে নিয়ে চলন্ত অটোরিক্সাতেই শামছুদ্দিনের মাথায় বাটখারার পাথর ও ইট দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে মাথা থেতলে দেয়। এছাড়া ধারালো ছুরির আঘাতে রক্তাক্ত করলে শামছুদ্দিন ওরফে শামছু মিয়া অটোরিক্সাতেই অচেতন হয়ে পড়েন। পরে চলন্ত অটোরিক্সা থেকে তাকে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হয়। এ সময় এলাকাবাসী শামছুদ্দিন ওরফে শামছু মিয়াকে উদ্ধার করে মুমূর্ষু অবস্থায় নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে স্বজনেরা তাকে বাজিতপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।
ওইদিনই দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শামছুদ্দিন ওরফে শামছু মিয়াকে ভর্তি করা হয়। চার দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে ১ জুন দুপুর সাড়ে ১২টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় গত ৩ জুন নিহতের ছেলে জাহাঙ্গীর আলম নিকলী থানায় মামলা করতে গেলে ওসি নাসির উদ্দিন ভূঁইয়া মামলা নিতে গড়িমসি করেন। জাহাঙ্গীর আলমের কান্নাকাটিতে এক পর্যায়ে ওসি মামলা নিতে রাজি হলেও তিনি নিজের মতো করে এজাহার তৈরি করে মূল আসামিদের বাদ দিয়ে জোর করে বাদী হিসেবে জাহাঙ্গীর আলমের স্বাক্ষর নেন। এ পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার আদালতে মামলা দায়ের করেন জাহাঙ্গীর আলম।
মামলার বাদী জাহাঙ্গীর আলম অভিযোগ করেন, নিকলী থানার ওসি নাসির উদ্দিন ভূঁইয়া বিষয়টি আপস করার জন্য চাপ দিচ্ছেন। ফলে তিনি ও তার পরিবার এখন নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।
তবে নিকলী থানার ওসি নাসির উদ্দিন ভূঁইয়া দাবি করেন, তার কাছে এ ধরনের কোনো অভিযোগ নিয়ে কেউ আসেনি। তাই মামলা নিতে গড়িমসি, মনগড়া এজাহারে স্বাক্ষর আদায় এসবের প্রশ্নই আসে না। এছাড়া কোন ঘটনায় আপস করা পুলিশের কাজ না, পুলিশের কাজ অভিযোগ অনুযায়ী তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া বলেও তিনি মন্তব্য করেন।