মো. আবু মুছা স্বপন, ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি
সীমান্তবর্তী ভারতের কোলঘেঁষা নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলা। ভারতের তারকাঁটা কেটে চোরাইপথে গরু-মহিষ, ফেন্সিডিল, হেরোইন ও ইয়াবাসহ আমদানি নিষিদ্ধ অনেক পণ্য এবং মাদকের অনুপ্রবেশ বাংলাদেশে অনেক পুরোনো কথা। এই উপজেলাটি সীমান্তবর্তী হওয়ায় মাদকের ছড়াছড়ি এক সময় থাকলেও সম্প্রতি সরকারের পুলিশ-বিজিবি-র্যাবসহ সামাজিক সচেতনতায় অনেকটা কম হলেও মাদবসেবীরা এসবের বিকল্প নেশায় জড়িয়ে পড়েছে। তারা নিজেদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে মনে করছে বাজারের ওষুধের দোকানগুলোকে। সেই সাথে বিপথগামী হচ্ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাজারের এসব ওষুধের দোকানগুলোতে “পেন্টাডল ও টাপেন্টা” নামক ৫০, ৭৫ ও ১০০ এমজি পাওয়ারের ট্যাবলেটে আসক্ত হচ্ছে মাদকসেবীসহ তরুণ যুব সমাজ। ধামইরহাট উপজেলা সদর থেকে ফার্শিপাড়া মোড় পর্যন্ত ২৫ থেকে ৩০টি ওষুধের দোকান রয়েছে। মাদকসেবীরা দোকানগুলোতে গিয়ে ১৪ থেকে ১৫ টাকার প্রতিটি ট্যাবলেট ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় কিনে এবং তা বিভিন্ন গোপন স্থানে পুড়িয়ে খেয়ে তাদের নেশা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়াও গ্রামের বিভিন্ন স্থানে, মোড়ে মোড়ে যত্রতত্র ওষুধের দোকানগুলোতে এসব ট্যাবলেট পাওয়া যায়, যা মাদকসেবীরা হেরোইন ও ইয়াবার বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করছে।
ধামইরহাট থানার ওসি জাকিরুল ইসলাম জানান, “পেন্টাডল ও টাপেন্টা” ট্যাবলেট দু’টি মূলত দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্তদের ঘুম ও শরীরের ব্যথা নিরাময়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা লিখে থাকেন; কিন্তু মাদকসেবীরা পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযান ও ধরপাকড় থেকে বাঁচতে ইয়াবা এবং হেরোইনের বিকল্প হিসেবে ওষুধের দোকান থেকে বিনা প্রেসক্রিপশনে ১৪ টাকার ট্যাবলেট ১০০ থেকে ১৫০ টাকায় কিনে সেবন করে।”
উৎপাদনকারী ওষধ কোম্পানি স্কয়ারকে ইতিমধ্যে এ বিষয়ে অবগত করা হয়েছে জানিয়ে ইউএনও গনপতি রায় জানান, স্কয়ার কোম্পানি যুব সমাজকে রক্ষার্থে পেন্টাডল নামক ট্যাবলেটটি তাদের উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। তবে এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যাল-এর টাপেন্টা নামক ট্যাবলেটটির বাজারজাত বন্ধে খুব দ্রুত যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।
সম্প্রতি ওষধ প্রশাসন দপ্তরের উদাসীনতার কারণে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের বিভিন্ন জায়গায় যত্রযত্র ওষুধের দোকান তৈরি হয়েছে। এসবের কোন মনিটরিং না থাকায় ওষুধ ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার আশায় যুব সমাজ ধ্বংসের এসব ওষুধ বিক্রি করছে। মাদকসেবীরা এসব “পেন্টাডল ও টাপেন্টা” ট্যাবলেট আত্রাই নদীর পাড়ে, বিভিন্ন বন জঙ্গলে, ঝোপ-ঝাড়ে পরিত্যক্ত টয়লেটে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে খাচ্ছে। যুব সমাজকে রক্ষার্থে নেশাজাতীয় সকল ওষুধ বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন সচেতন মহল।