আবদুল্লাহ আল মহসিন ।।
ফেব্রুয়ারি মাস আমাদের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মাস। মায়ের ভাষায় কথা বলা বা ভাব প্রকাশ করার নাম হলো মাতৃভাষা। ইসলাম মাতৃভাষাকে খুবই গুরুত্ব প্রদান করেছে। নবী রাসুলগণ মাতৃভাষার মাধ্যমেই দ্বীন প্রচার করেছেন। সাহাবায়ে কেরাম রাঃ পৃথিবীর যে ভূখন্ডেই গেছেন আগে সেখান ভাষা শিখেছেন তারপর দাওয়াতী কাজ করেছেন। বড় বড় আসমানী কিতাব স্ব-স্ব নবী-রাসুলগণের মাতৃভাষায় অবতীর্ণ হয়েছিল। হযরত মূসা আঃ-এর জাতি কথা বলতো ইবরানী ভাষায়। এজন্য তাওরাত কিতাব অবতীর্ণ হয়েছিল ইবরানীতে। হযরত দাউদ আঃ-এর জাতির ভাষা ছিল ইউনানী। যাবুর অবতীর্ণ হয়েছিল ইউনানী ভাষায়। হযরত ঈসা আঃ-এর জাতির মাতৃভাষা ছিল সূরিয়ানী। ইনজিল শরিফ নাযিল হয়েছিল সূরিয়ানী ভাষায়। হযরত মুহাম্মদ সাঃ-এর মাতৃভাষা ছিল আরবী। এজন্য কুরআন আরবী ভাষায় নাযিল হয়েছে। মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জাতির কাছে সহজ পন্থায় বোধগম্য ভাষায় ইসলামের আহবান পৌছিয়ে দেয়া। ভাষা আল্লাহতায়ালার দান। তিনি অসংখ্য ভাষা সৃষ্টি করে তার কুদরতের নিদর্শন প্রকাশ করেছেন। মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, আর নিদর্শনাবলীর মধ্যে রয়েছে আসমান ও জমিনের সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা।
নিশ্চয় এর মাঝে বোধসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে নিদর্শন (সূরা রুম আয়াত ২২)। ভাষাবিদদের মতে, ভাষার বৈচিত্রে পৃথিবীতে প্রায় ৩হাজার ভাষা রয়েছে। কোন কোন গবেষকদের মতে প্রায় ৮ হাজার ভাষা আছে। ঈথনোলোগ নামের বিশ্বকোষের ২০০৯ সালে প্রকাশিত সংস্করণে বলা হয়েছে, জীবিত ভাষার সংখ্যা ৬০৯০৯টি। উইকিপিডিয়ার মতে বর্তমানে ৭৩৩০টি ভাষার সন্ধান পাওয়া যায়। পৃথিবীর সব ভাষাই আল্লাহ তায়ালার দান। মানুষকে তিনি বাকশক্তি দান করেছেন। তাই ভাষার সাহায্যে মানুষ তার ভাব, কল্পনা, ইচ্ছা, স্বাধ কথা বলা-লিখার মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারছে। আল্লাহতায়ালা এরশাদ করছেন, “পরম করুণাময় তিনি কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি ভাষা শিখিয়েছেন” (সূরা রাহমান ১ -৪)। পৃথিবীর সকল কওম বা জাতি-গোষ্ঠীতে নবী-রাসুল এসেছেন। সকল নবী-রাসুল প্রত্যেক জাতির মাতৃভাষায় দাওয়াতী কাজ করেছেন। রাসুল সাঃ বিশুদ্ধ মাতৃভাষায় কথা বলতেন। বিশুদ্ধ মাতৃভাষায় কথা বলা সুন্নাত। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এ জন্য উলামায়ে কেরামের উচিত বিশুদ্ধ বাংলা ভাষা শিক্ষা ও চর্চা করা।