আজিজুল হক বিপুল, মহাস্থান (বগুড়া) প্রতিনিধি ।।
মা!! সে এক মধুর ডাক। মা হলো পৃথিবীর মধ্যে অমূল্য ধন। যার মা আছে সে বড়ই ভাগ্যবান আর যার মা নেই সে দুর্ভাগাদের দলে। অনেকেই বলে থাকে, “যার মা বেঁচে আছে তার দুনিয়াতে সব আছে, আর যা মা নেই তার কিছুই নেই”। বলছি কপাল পোড়া এক নাবালক বালকের কথা! এরকম এক হতভাগার তালিকায় জন্মের শুরুতেই যার নাম লেখা হয়েছে তার নাম হলো বাহাদুর বাদশা। বয়স বড়জোর ১১। নাম বাহাদুর বাদশা হলেও বাস্তবতার সাথে নেই ন্যূনতম কোনো মিল। এই বিশাল দুনিয়ায় সে একা। তার রাজত্বে সে রাজা। আর রাজকার্য পরিচালনার জন্য সে নিয়োগ দিয়ে রেখেছে মন্ত্রী, সেনাপতি আর সৈন্য। যারা বিনা বেতনে ও বিনা স্বার্থে বাহাদুর বাদশার রাজত্বের অংশিদার। এই বাহিনী হলো একটি কুকুরের দল।
বগুড়া সদরের ঘোড়াধাপ বন্দর এলাকায় ৮/১০টি কুকুর নিয়ে বাহাদুর বাদশার রাজত্ব। বাহাদুর বাদশা কুকুরদের কাছে একটি বিশ্বস্ত মুখ। এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বগুড়া সদরের নুনগোলা ইউনিয়নের শশীবদনী পূর্বপাড়া এলাকার ফারুক পাগলা ও মালেকা পাগলীর ঘরে জন্ম বাহাদুরের। ফারুক ও মালেকা মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় শিশুটির লালন পালন নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। পরে স্থানীয় কিছু মহিলার তত্ত্বাবধানে লালন পালন হতে থাকে বাহাদুর।
লোক মুখে শোনা যায়, সে কুকুরের দুগ্ধ পান করে তার শিশুকাল কাটিয়েছে। সেই জন্যই কুকুরদের সাথে তার এত নিবিড় সম্পর্ক। ক্ষুদা লাগলে সে মানুষজনের কাছে হাত পেতে টাকা চায়, অনেকে দয়া করে তাকে টাকা কিংবা খাবারও কিনে দেয়। সেই টাকা দিয়ে সে খাবার কিনে নিজে খায় আবার প্রাণীগুলোকেও খাওয়ায়।
স্থানীয় বাসিন্দা সৈকত আলম বলেন, বাহাদুর বাদশা এলাকার একটি পরিচিত মুখ। সে কুকুরদের সাথে খেলা করে, ঘুরে বেড়ায় এবং তাদের সাথেই নির্ভয়ে ঘুমিয়ে রাত কাটায়। নুনগোলা ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন বিজয়-এর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, “প্রায় ২ বছর আগে বাহাদুর বাদশার মা মালেকা পাগলী (৫০) অসুস্থতায় মারা যায়। সহায় সম্বলহীন শিশু বাহাদুরের কথা বিবেচনা করে ইউপি চেয়ারম্যান আলীম উদ্দীনের নির্দেশে শশীবদনী এলাকার মতিয়ার রহমান মতির পরিচালিত মা হালিমা হাফেজিয়া মাদরাসায় আমরা বাহাদুরকে ভর্তি করিয়ে দেই। কিন্তু শিশুকাল থেকেই খাপছাড়া পরিবেশে বেড়ে ওঠা বাহাদুর বদ্ধ পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারেনি। বেশ কিছুদিন থাকার পরে সে চলে আসে মাদরাসা থেকে। মা হারা এই এতিম ছেলেটির সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য আমরা সকলেই চেষ্টা করে যাচ্ছি”।
প্রাণিদের কেউ আঘাত পেলে যেমন বাহাদুরের কষ্টের অন্ত নেই ঠিক তেমনই তাদের ভালো থাকা দেখলে তার সুখেরও সীমা থাকে না। এভাবেই কুকুরদের সাথে হেসে খেলে আর খুনসুটি করে দিন চলে যাচ্ছে অনাথ বাহাদুরের। তবে এই নাবালক শিশুটির বেড়ে ওঠার জন্য সঠিক পরিচর্যা, পরিবেশ ও সুচিকিৎসা দরকার বলে জানিয়েছেন গ্রামবাসী। প্রবাদ আছে, “জীবে দয়া করে যেজন, সেজন সেবিছে ঈশ্বর” এরই জ্বলন্ত উদাহরণ মানসিক ভারসাম্যহীন দম্পতির নিষ্পাপ বালক বাহাদুর বাদশা।