আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশ অংশে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন সাগরে সব ধরনের মাছ ধরায় সম্পূর্ণভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার এ নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হয়। এর ফলে বুধবার থেকে দেশের সমুদ্রের অংশে মাছ ধরতে পারবেন জেলেরা।
তবে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কার্যকারিতার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলেরা। তাদের দাবি, বাংলাদেশের সমুদ্রের অংশে নিষেধাজ্ঞার সময় মাছ ধরেছে ভারতীয় জেলেরা। তারা বলছেন, ভারতে আর বাংলাদেশে একই সময়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা উচিত। এতে দুই দেশের কেউই সমুদ্রে মাছ ধরতে পারবে না।
এর আগে সাগরে মাছ ধরা বন্ধে সরকারের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে উপকূলীয় মৎস্যজীবী ও জেলে মৎস্য ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কয়েক হাজার শ্রমিক বেশ কয়েকটি মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছিলেন।
এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছিলেন। বাংলাদেশের জলসীমায় ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞা দিলেও পার্শ্ববর্তী দেশের জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমানায় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে সরকারের নিষেধাজ্ঞা না মেনে বঙ্গোপসাগরসহ উপকূলীয় এলাকায় এসে ছোট ছোট মাছ শিকার করে নিয়ে যায়। এমন অভিযোগ তুলে সরকারের কাছে এগুলো বন্ধের আহ্বান জানিয়েছিলেন জেলেরা।
তবে সাগরে মাছ ধরা বন্ধ রাখতে সরকার জেলেদের পরিবারকে ৪০ কেজি করে চাল দিয়ে থাকে। নিবন্ধিত জেলেদের এ সব চাল দেয়া হয়। স্থানীয় জেলে আবদুল রাজ্জাক গণমাধ্যমকে বলেন, বহু জেলে আছেন যারা সরকারের খাতায় নিজেদের নাম নিবন্ধন করাতে পারেননি।
তিনি বলেন, আমি যখন মাছ ধরতে সাগরে গেছি, তখন কার্ড কইরা ওরা চইল্যা গেছে। এই রকম আমার মতো হাজার হাজার জেলে আছে কার্ড করতে পারে নাই।
জেলা মৎস্য অফিস জানায়, বরগুনায় ৪৫ হাজার নিবন্ধিত জেলে আছে। তাদের মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার জেলেকে ৪০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে।
বরগুনা জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির মালিক সমিতির সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ভারতে বাংলা পহেলা বৈশাখ থেকে ৩০ জ্যৈষ্ঠ পর্যন্ত মাছ ধরার উপরে অবরোধ। আমাদের এখানে মাছ ধরার উপর অবরোধ ৬ জ্যৈষ্ঠ থেকে ১০ শ্রাবণ। বঙ্গোপসাগর একটাই। সাগরে তো কোনো ওয়াল দেয়া নেই যে, ইলিশ মাছ ওপাশে যাবে না। তার দাবি, ভারত ও বাংলাদেশের সঙ্গে একই সময় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হোক। একই সাগরে দুই রকম আইন হয় কি করে।
এ নিয়ে বরগুনা জেলা মৎস্য অফিস বলছে, বিচার-বিশ্লেষণ করেই এ সময়টিতে সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ভারতীয় জেলেরা মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে অভিযোগ করেন মৎস্য আহরণকারীরা। ৭ জুলাই পটুয়াখালীর কলাপাড়ার বঙ্গোপসাগরের মোহনা রামনাবাদ চ্যানেল থেকে ৩২টি ভারতীয় ট্রলারসহ পাঁচ শতাধিক জেলেকে আটক করেছে উপকূলীয় কোস্টগার্ড সদস্যরা। এমন সংবাদ দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল।
বরগুনার ট্রলার মালিক এবং জেলেরা তাদের অভিযোগ জানাতে এ বিষয়টির কথা উল্লেখ করেছেন।
ওই সময় জেলা মৎস্য বিভাগ জানিয়েছে, যেহেতু তাদের ট্রলারে জাল রয়েছে তারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারীর আওতায় পড়ার কথা।
পটুয়াখালী পুলিশ সুপার মো. মইনুল হাসান এবং জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী কোস্টগার্ডের বরাত দিয়ে জানিয়েছিলেন, ভারতীয় জেলেরা ঝড়ের কবলে পরে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাংলাদেশের জলসীমানায় ঢুকে পরে। পরে তারা নিরাপদে বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন রামনাবাদ চ্যানেল এলাকার নদীতে আশ্রয় নেয়।
বরগুনা জেলার মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, ভারতীয় জেলেদের বাংলাদেশে এসে মাছ ধরার বিষয়টি সরকারের নজরে রয়েছে। সাগরে কোস্টগার্ড এবং নৌবাহিনী সজাগ রয়েছে বলেও তিনি জানান।
সাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধ রাখার বিষয়টি ২০১৫ সাল থেকে শুরু হলেও চলতি বছর সবচেয়ে বেশি কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
জেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, প্রতিবছর আশ্বিন মাসে (৭-২৮ অক্টোবর) গভীর সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ উপকূলের দিকে এসে ডিম ছাড়ে। ইলিশের ডিম থেকে জাটকা এবং পরে জাটকা বড় ইলিশে পরিণত হয়। কয়েক বছর ধরে প্রজনন মৌসুমে ইলিশ আহরণ বন্ধ থাকায় ইলিশের উৎপাদন বেড়েছে। এর সুফল জেলে থেকে ইলিশ ব্যবসায়ী, ক্রেতা-বিক্রেতা সবাই পাচ্ছে। দেশে আমিষের ঘাটতি মেটাতে ইলিশ সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
সূত্র : যুগান্তর