মাহমুদ আল আজাদ, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি ।।
দেশদ্রোহী প্রিয়া সাহাকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকন নিষিদ্ধ ঘোষণা, ভারত জুড়ে মুসলমানদের ওপর রাষ্ট্রীয় হত্যাযজ্ঞ বন্ধ এবং পাঠ্যপুস্তকে ডারউইনের কুফরী বিবর্তনবাদ সংযোজনের প্রতিবাদে (২৪ জুলাই ২০১৯) বাদ আসর হাটহাজারী ডাক বাংলো চত্বরে হেফাজতে ইসলাম হাটহাজারী শাখার উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে আমিরে হেফাজত, বেফাক চেয়ারম্যান ও দারুল উলুম হাটহাজারীর মহাপরিচালক শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী দা.বা. বলেন, প্রিয়া সাহা ট্রাম্পের কাছে বাংলাদেশের মুসলমানদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলক নালিশ দিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বে আমাদের মাতৃভূমির ইমেজ কলঙ্কিত করে সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছে। এই দেশদ্রোহী প্রিয়া সাহার ভয়ঙ্কর মিথ্যাচার দেশের ভাবমর্যাদা ও আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট করে সাম্রাজ্যবাদের চক্রান্ত সফল করার গভীর ষড়যন্ত্রেরই অংশ।
তিনি সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী প্রিয়া সাহাকে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করুন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত “হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ” এবং উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন “ইসকন” নিষিদ্ধ করুন। প্রিয়া সাহা পরিচালিত “শারিথ” নামের এনজিওর লাইসেন্স বাতিল করুন। অন্যথায় দেশপ্রেমিক তৌহিদী জনতাকে সাথে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে যে কোন ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
প্রধান আলোচকের বক্তব্যে হেফাজত মহাসচিব আল্লামা জুনাইদ বাবুনগরী বলেন, ইসলামী ধর্মবিশ্বাস মতে বিবর্তনবাদের পাঠ কুফরী শিক্ষা। দেশের জাতীয় শিক্ষায় এই কুফরী শিক্ষার সন্নিবেশ ঘটিয়ে পুরো জাতিকে নাস্তিক্যবাদি ধ্যান-ধারণায় গড়ে তোলার সর্বনাশা উদ্যোগ আমরা নিরবে সহ্য করতে পারি না। অবিলম্বে পাঠ্যবই থেকে ইসলামী আক্বিদা-বিশ্বাস এবং সংবিধান বিরোধী বিবর্তনবাদ শিক্ষা বাতিল করতে হবে। একই সঙ্গে বিবর্তনবাদ অন্তর্ভুক্তির সাথে যারা জড়িত, তাদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকন কর্তৃক স্কুলের কোমলমতি শিশু-কিশোরদের দেবদেবীকে উৎসর্গকৃত প্রসাদ খাওয়ানো এবং তাদের মুখ দিয়ে হিন্দুদের ধর্মীয় মন্ত্র পাঠ করানো গভীর চক্রান্তেরই অংশ। কিছুদিন আগে সম্প্রীতি বাংলাদেশ নামে পীযূষ বন্দোপাধ্যায়রা ইসলামের বিধি-বিধানকে জঙ্গিবাদের নিয়ামক হিসাবে চিহ্নিত করে পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়েছিল। এখন উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকন দেবদেবীকে উৎসর্গকৃত প্রসাদ মুসলিম শিশু-কিশোরদের খাইয়ে তাদেরকে ‘হরে কৃষ্ণ হরে রাম হরে হরে’ বলিয়েছে। বাংলাদেশের মতো একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশে ইস্কনের এহেন ধর্মীয় উস্কানি সহ্য করা যায় না। তারা কোটি কোটি মুসলিম তৌহিদি জনতার হৃদয়ে আঘাত হেনেছে। এদের প্রতিহত করতে হবে।
ভারতের বিভিন্ন এলাকায় মুসলিম হত্যার বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে হেফাজত মহাসচিব বলেন, ভারতের বিজেপি সরকার মুসলমানদের রক্ত নিয়ে হোলি খেলায় মেতে উঠেছে। উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা সুকৌশলে মুসলমানদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে। মুসলিম উম্মাহর মধ্যে সুদৃঢ় ঐক্য থাকলে ভারতসহ ইসলামবিদ্বেষী রাষ্ট্রগুলো মুসলমানদের ওপর নির্যাতন চালানোর সাহস করতো না। তিনি মোদী সরকারের উদ্দেশ্যে বলেন, মুসলিম জনগণের ওপর হত্যা-নির্যাতন বন্ধ করুন। অন্যথায় পরিণাম ভাল হবে না।
বুধবার (২৪ জুলাই ২০১৯) বাদ আসর হাটহাজারী ডাক বাংলো চত্বরে হেফাজত ইসলাম হাটহাজারী শাখার উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে সভাপত্বি করেন সংগঠনের হাটহাজারী উপজেলা সভাপতি মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফতেহপুরী।
হাটহাজারী উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মাওলানা নাসির উদ্দিন মুনির ও হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ হাটহাজারী উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়জির যৌথ সঞ্চালনায় এতে আরো বক্তব্য রাখেন প্রচার সম্পাদক মাওলানা আনাস মাদানী, চট্টগ্রাম ওমর গণী এমইএস কলেজের সাবেক অধ্যাপক ড. আ ফ ম খালিদ হোসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, হাটহাজারী ওলামা পরিষদ সেক্রেটারী মাওলানা জাফর আহমদ, মাওলানা নসিম, উত্তর জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মীর ইদরীস, মুফতী আব্দুল আজিজ, মাস্টার আহসান উল্লাহ, মাওলানা কাজী সফিউল্লাহ, মাওলানা মাহমুদ হোসাইন, মাওলানা হোসাইন ফয়জি, মাওলানা কামরুল ইসলাম, মাওলানা আবুল হাসেম, মাওলানা তকিউদ্দীন আজিজ, নূর মুহাম্মদ, নিজাম সাইয়্যিদ, মাওলানা আনাস জমীরী, মাওলানা মুহাম্মদ ইদরীস প্রমুখ।