জটিল রোগ প্রতিরোধ করে হাতের কাছের ‍”পেয়ারা”!

আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।

অপরাহ্ন এসে গেছে সে কখন। গাছের পেয়ারাতে তখন কাঠবিড়ালির মুখ। একটা একটা করে সে পরখ করে দেখছে– কোন পেয়ারাটা আগে খাওয়া যায়! এ ফলটির সঙ্গে তার সম্পর্ক দীর্ঘকালের।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কাঠবিড়ালির পেয়ারা খাওয়া নিয়ে দারুণ একটি শিশুতোষ কবিতা লিখেছিলেন। যুগে যুগে মানুষের লাগানো গাছের পেয়ারায় ভাগ বসিয়েছে কাঠবিড়ালি। প্রকৃতিতে টিকে থাকার সংগ্রামে সে পেয়ারাকে তার খাদ্যতালিকার অন্যতম সহজ একটি খাবার হিসেবে বেছে নিয়েছে।

কিন্তু সময় এখন ভিন্ন কথা বলছে। সময় এখন সবুজ শাক-সবজি আর টাটকা ফলের দাবি তুলছে। মানবদেহে নানা রোগব্যাধি থেকে মুক্তির জন্য বিশেষজ্ঞরা মৌসুমী ফলের দিকে দৃষ্টি রাখতে বলছেন। তাতেই নাকি শরীরের নানা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

পেয়ারা তেমনই একটি “বিস্ময়কর” মৌসুমী ফল। মানবদেহের নানা জটিল রোগ নিরাময়ে পেয়ারা দারুণ কার্যকর। ক্যানসার, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, কোষ্ঠকাঠিন্য, গর্ভবতী নারীদের সুস্থতা, চোখের দৃষ্টিশক্তিজনিত রোগ প্রভৃতির ক্ষেত্রে সরাসরি কাজ করে এ ফল। এছাড়াও দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে পেয়ারা। এটি মোটামুটি সর্বগুণসম্পন্ন ফল। পেয়ারার ইংরেজি নাম Common Guava এবং বৈজ্ঞানিক নাম Psidium guajava।

বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (বারটান) সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক প্রধান ড. মো. আবদুর রাজ্জাক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, পেয়ারা বেরিজাতীয় ফল। এ ফলটি বিভিন্ন রঙের হয়। তার মধ্যে সবুজ এবং লাল রঙের পেয়ারা বেশি সমাদৃত। এর প্রায় ১শ’টারও বেশি প্রজাতি রয়েছে।

পেয়ারার উপকারিতা সম্পর্কে এ গবেষক বলেন, পেয়ারা অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ফল। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। এই ভিটামিন ‘সি’ এর ফলে মানবদেহে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। পেয়ারাতে বিদ্যমান লাইকোপেন কোয়ার্কেটিং এবং ভিটামিন ‘সি’ শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। যা বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কমায়। বিশেষ করে প্রোস্টেট ও ব্রেস্ট ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা কমায়।

তিনি আরও বলেন, পেয়ারাতে ফাইবার বা আঁশ এবং গ্লাইসেমিক থাকার কারণে রক্তের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এর ফলে ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি অনেক কম থাকে। ফাইবার এবং আঁশ থাকার কারণে পেয়ারা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।

এ পুষ্টি গবেষক আরও বলেন, এ ফলটিতে সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম পাওয়া যায়। যা আমাদের শরীরের নিয়ন্ত্রণক্ষমতা বাড়ায়। যা পরবর্তীতের আমাদের ব্লাডপ্রেসার বা রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। পেয়ারার আরেকটি দারুণ গুণ হলো ট্রাইগ্লিসারাইড এবং এলডিএল নামক একটি খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। ফলে হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়।

পেয়ারাতে ভিটামিন ‘এ’ এবং ফলিক অ্যাসিড থাকার কারণে চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় এবং চোখের ছানিপড়া রোধ করে। এছাড়াও ফলিক অ্যাসিড থাকায় এ ফলটি গর্ভবতী নারীদের জন্যও বিশেষ উপকারি। আমাদের সুস্থ ও রোগমুক্ত থাকতে হলে নিয়মিতভাবে এই ফলটি খেতে হবে বলে যোগ করেন ফল গবেষক ড. মো. আবদুর রাজ্জাক।

সূত্র : বাংলানিউজ২৪

Similar Posts

error: Content is protected !!