মোমিন মেহেদী ।।
দেখা ও কথা বলার সুযোগ হয়েছিলো মাত্র ৭ মিনিটের জন্য। অনেকেই ছিলেন আমার সাথে। বিশেষ করে রাজনীতিতে তারুণ্যের অভিভাবক হিসেবে নিবেদিতজন নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবির প্রেমিডয়াম বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান শান্তা ফারজানা প্রমুখ। উদ্দেশ্য একটাই নতুন প্রজন্মের রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে চাই। আমি একটি রাজনৈতিকধারার প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান জেনে আপ্লুত হয়ে হিন্দিতে বলেছিলেন, তোমার সাহস ও চেষ্টায় অবাক হয়েছি। সেই স্বপ্নজ হাস্যেজ্জ্বল সময়ের রাজনীতিকে কোন নোটিশ না দিয়েই চলে গেলেন ভারতীয় জনতা দলের অন্যতম প্রধান নেত্রী ছিলেন সুষমা স্বরাজ। একসময় তিনি সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ছিলেন। সেই সময়ে অন্য অনেক আইনজীবীর মত তিনি দিনের অধিকাংশ সময় কাটয়েছেন কোর্ট কাচারিতে।
যতদূর জেনেছি- রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পর থেকে কোন না কোনভাবে বাড়তে থাকে কাজ-জনপ্রিয়তা। তাই আর পরে আর হয়নি সেই পেশায় স্থায়ী হওয়া। ২০১৪ সালের ২৬ মে তিনি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর দায়িত্ব নেন এবং পরবর্তী পাঁচ বছর সেই দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সাতবার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন এবং তিনবার বিধানসভার সদস্য হয়েছেন। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তিনি বিদিশা কেন্দ্র থেকে সাংসদ হন। ১৯৯৮ সালের ১৩ অক্টোবর দিল্লির পঞ্চম মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন সুষমা। তিনিই ছিলেন দিল্লির প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বিভিন্ন পরিসরের বহু সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। ২০১৯ সালে শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ান।
সি -৭ সিভিল লাইন, প্রফেসর কলোনি, ভোপাল – ৪৬২০০২। এই ঠিকানায় এখন না পাওয়া গেলেও একসময় এখানেই তিনি নিজের রাজনৈতিক আবাাস গেড়েছিলেন। পরে অবশ্য ৮, সফদারজং লেন, নতুনদিল্লি – ১১০০১১ তে গড়েন নিজস্ব আবাস। সেই ঠিকানাকেও বিদায় জানালেন নতুন প্রজন্মের এই প্রতিনিধির চোখে দেখা অনন্যা নেত্রী সুষমা স্বরাজ। তিনি নিবেদিত ছিলেন দেশের জন্য-মানুষের জন্য। ক্ষমতা বা টাকার জন্য কখনো তিনি ছোটেন নি কোনদিকে। যতদূর জানা যায়, সাহিত্যানুরাগী ছিলেন জীবনজুড়ে। আইনের ছাত্রী থেকে তুখোড় রাজনীতিবিদ হিসেবে বেড়ে উঠেছিলেন নিজের যোগ্যতায়। সুষমা স্বরাজের রাজনীতি ছিলো সবার চেয়ে ভিন্ন-অনন্য। যে কারণে দলমত নির্বিশেষে সমান জনপ্রিয় ছিলেন। মাত্র ৬৭ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী তথা বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেত্রী সুষমা স্বরাজ। দিল্লির এইমস হাসপাতালে সুষমা স্বরাজকে ভর্তি করা হয়। এরপরে এখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ভারতীয় জনতা পার্টির অন্যতম শীর্ষ নেত্রী ছিলেন তিনি। দলের মধ্যে যে ক’জন নেতা-নেত্রী সর্বজনগ্রাহ্য হয়ে উঠতে পেরেছিলেন সুষমা ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম।
এ প্রসঙ্গে বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে-মত নির্বিশেষে তাঁকে সকলের শ্রদ্ধা করতেন, ভালোবাসতেন। এবারের লোকসভা নির্বাচনে শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি ভোটে লড়েননি। তবে সেজন্য দলের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তা বিন্দুমাত্র কমেনি।
দিল্লির প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ খুব কম বয়সে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৫ তম লোকসভায় তিনি লোকসভার বিরোধী দলনেত্রী নির্বাচিত হন। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮২ এবং ১৯৮৭ থেকে ১৯৯০ সাল – দুবার তিনি হরিয়ানা থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৮ সালে দিল্লির প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন। গত কয়েক দশকে ভারতীয় রাজনীতিতে তাঁর উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি লক্ষ্য করা গিয়েছে। সর্বকনিষ্ঠ সাংসদ হন ১৯৭৭ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ সংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন সুষমা স্বরাজ। ১৯৯৬ সালে ১৩ দিনের বাজপেয়ী সরকারের সময় লোকসভার বিতর্ক তিনি তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হিসেবে লাইভ টেলিকাস্ট করেছিলেন। ১৯৫২ সালে জন্ম ১৯৫২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আম্বালা ক্যান্টনমেন্টে তাঁর জন্ম হয়। পিতা ছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের একজন অন্যতম সদস্য। মায়ের নাম ছিল লক্ষ্মী দেবী। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক পাস করার পর সুষমা পাঞ্জাব ইউনিভার্সিটি থেকে এলএলবি করেন। সাহিত্য অনুরাগী সুষমা ১৯৭০ সালে আম্বালা ক্যান্টনমেন্টের এসডি কলেজ থেকে তিনি সেরা ছাত্রীর পুরস্কার পান। রাজনীতির পাশাপাশি সঙ্গীত এবং বিভিন্ন শিল্পকলার প্রতি সুষমার গভীর অনুরাগ ছিল। সাহিত্যের প্রতি অপরিসীম ভালোবাসা ছিল। কলেজে থাকাকালীন তিনি পরপর তিনবার সেরা হিন্দি বক্তার পুরস্কার জেতেন। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীনও তিনি সেরা হিন্দি বক্তার পুরষ্কার জিতেছিলেন। রাজনীতিতে প্রবেশ ১৯৭৫ সালে সুষমা স্বরাজের বিয়ে হয় আইনজীবী স্বরাজ কৌশলের সঙ্গে। ১৯৯০ সালে স্বরাজ কৌশল দেশের সর্বকনিষ্ঠ রাজ্যপাল হিসেবে দায়িত্ব নেন। তিনি ছিলেন মিজোরামের রাজ্যপাল। ১৯৭৩ সাল থেকে সুষমা স্বরাজ সুপ্রিম কোর্টে প্র্যাকটিস শুরু করেন। তার আগে ১৯৭০ সালে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। একের পরর এক কৃতিত্ব ইন্দিরা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর বিরুদ্ধে অনেক পথসভা করেন সুষমা। তিনি ভারতীয় জনতা পার্টিতে প্রবেশের পর জরুরি অবস্থার সময় রাজনীতিতে জডড়য়ে পড়েন। তিনি এভাবেই ধীরে ধীরে রাজনীতিতে হাত পাকান। মাত্র ২৭ বছর বয়সে হরিয়ানার জনতা পার্টির রাজ্য সভানেত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন সুষমা। ১৯৭৭ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে দেশের সর্বকনিষ্ঠ সংসদ নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে মাত্র ২৭ বছর বয়সে হরিয়ানা জনতা পার্টির সভানেত্রী নির্বাচিত হন। কোনও একটি জাতীয় দলের প্রথম মহিলা মুখপাত্র হিসেবে সুষমা স্বরাজই প্রথম দায়িত্বভার সামলে ছিলেন। দিল্লির প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার কৃতিত্বও তাঁর দখলে। বিদেশমন্ত্রী হিসাবে সফল লোকসভায় বিরোধী দলের প্রথম মহিলা দলনেত্রীও নির্বাচিত হন সুষমা স্বরাজ। ২০১৪ সালের ২৬ মে কেন্দ্রের বিদেশমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার সামলান। এর পরে টানা ৫ বছর তিনি বিদেশ মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন। তবে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে শারীরিক অসুস্থতার কারণে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি তিনি। মাঝখানে একবার কিডনির অসুখ হয়েছিল। মানুষের হৃদয় মাঝে বেঁচে থাকবেন নিজের কাজের কারণে, একথা যেমন সত্য; তেমন সত্য তিনি নিরবে নিভৃতে ভারতের জন্য অনেক কাজ করেছেন। নিজের জন্য নিজের পরিবারের জন্য এমন কোন অর্থও যোগাড় করেন নি ৫ বছরের মন্ত্রী আর ৩৫ বছরের এমপি থাকার পরও।
সুষমা স্বরাজের মত মানুষকে দেখেও শেখে না বাংলাদেশের রাজনীতিকরা। বরং দেশে ক্যাসিনো এনে নিজেদের ধনী হওয়ার রাস্তা পাকা করে, দিনে মাদকের বিরুদ্ধে কথা বলে রাতে ইয়াবার হোল এজেন্ট হিসেবে কাজ করে, দিনে সন্ত্রাসের কথা বলে রাতে ফুটপাতে চাঁদা ওঠায়; এমন নেতা দিয়ে আজ বাংলাদেশ ভরেছে; কিন্তু ভারত? তারা পেয়েছে মোদিও মত প্রধানমন্ত্রী। যার কাাছে সবার আগে দেশের স্বার্থ। অথচ আমাদের বেলা! ক্ষমতায় আসার আর থাকার প্রতিযোগিতায় টিকতে গিয়ে অহরহ হারাচ্ছি কোরিডোর, মাটি, টাকা, মান-সম্মান সব। ব্রিটিশ বেনিয়াদের কাছ থেকে ভারত পাকিস্তান স্বাধীন হয়েছে ঠিকই; কিন্তু বাংলাদেশ ৪৭ বছরেও স্বাধীনতা পায়নি এই ক্ষমতার লড়াইয়ের কারণে। প্রতিদিন আমরা হেরে যাই একটু একটু করে।
সুষমা মোমিন মেহেদীর বা নতুনধারারই শুধু নয়; সারা বাংলাদেশ, সারা বিশ্বকে মোদির পথে হেটে দেখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে দেশকে- দেশের মানুষকে ভালোবাসতে হয়। আমরা ভালোবাসায় আবদ্ধ দেশকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই বিধায় ‘বিন্দু থেকে বৃত্ত’র স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলছি। জানি একদিন নিবেদিত মানুষদের ঠিকানা হয় লক্ষ কোটি মানুষের মনে। যেমন হয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের। তাকে নিয়ে, তাঁর রাজনীতি নিয়ে, তার জীবন-চরিত্র নিয়ে ছবি নির্মিত হয়েছে।
এমন ছবি হয়ে থাকার রাস্তায় অগ্রসর হোক বাংলাদেশ; শুধু নিজের নয়; দেশের কথা ভেবে বাংলাদেশের প্রকৃ দেশপ্রেমিকরা এগিয়ে আসুক। ছাত্র-যুব-জনতার সম্মিলনে নিরন্তর এগিয়ে যাক বাংলাদেশ। সেই দেশ সুষমা স্বরাজময় আগামী মানুষের জন্য নিবেদিত থাকুক-ডাকুক আলোর পথে ভালোর পথে…
মোমিন মেহেদী : চেয়ারম্যান, নতুনধারা বাংলাদেশ এনডিবি
Email: mominmahadi@gmail.com