মাহমুদ আল আজাদ, হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি ।।
চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে মাদক বিক্রির অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত আব্বাছিয়ার পুল এলাকা। দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় এই এলাকাতে মাদকের রাজ্যে পরিণত করেছে বিজলী (৪৫) নামের এক নারী। পৌরসভার আব্বাছিয়ার পুল এলাকার একটি ছড়ার পাশে সরকারি খাস জায়গা অবৈধভাবে দখল করে বসতঘর তৈরি করে। সেখান থেকে দেশীয় চোলাই মদ, গাঁজা, ইয়াবার মতো মরণব্যাধি ট্যাবলেট বিক্রয় করে। অথচ স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় বিজলী নামের এই নারী মাদক বিক্রয় করলেও তাদের নজরে পড়ে না। যুব সমাজকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে সে। স্থানীয়দের অভিযোগ থানার কিছু সোর্স তার কাছ থেকে মাসোহারাও নেয়।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা যায়, বিজলী দুই মেয়ে নিয়ে দখলকৃত জায়গাতে বসবাস করে। প্রতিদিন সন্ধ্যা হওয়ামাত্র মাদক কিনতে ব্যক্তিরা বিভিন্ন ছদ্মবেশে আসে। তবে ঘরের মধ্যে এসব মাদক রাখে না। বিজলীর মেয়েদের মাধ্যমে ওই ব্যক্তিদের কাছে মাদক পৌছায় বিভিন্ন কৌশলে, যেন কেউ বুঝতে না পারে। বিজলীর রয়েছে মাদক বিক্রয়ের বড় একটি সিন্ডিকেট; যার কারণে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এ অপরাধমূলক কাজ করতে পারে।
গত কয়েকদিন আগেও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিসের কর্মকর্তারা রাতে তল্লাশী করার সময় বাকবিতণ্ডা সৃষ্টি হয়। কিন্তু কোন কিছু পায়নি। কেননা এখানে কিছুই রাখে না। শুধু টাকা লেনদেন হয় ওই ঘরে।
এদিকে গত কিছুদিন আগেও রাত আটটার দিকে গাঁজা কিনতে আসা এক ব্যক্তিকে গাঁজার পুরিয়াসহ আটক করে স্থানীয় জনগণ। এমন সময় বিজলীর মেয়ে কৌশলে সটকে পড়ে। সে তখন সবার কাছে বিজলী থেকে গাঁজার পুরিয়া কিনেছে বলে স্বীকার করেন। পরে কান ধরিয়ে ছেড়ে দেয় তাকে। জনগণের দাবি বিজলীর নিজের বসতঘর থাকার পরেও সরকারি জায়গা দখল করে সড়কের পাশে থাকে। সেখান থেকে ওই মহিলা মাদক বিক্রয় করে তার মেয়েদের দিয়ে।
বিজলীর এহেন কাজে জড়িত আছে লাকি নামের আরেক মহিলাও। লাকি মাদক সম্রাট বলেও পরিচিত। স্থানীয়দের অভিযোগ পুলিশ মাঝে মধ্যে অভিযানে আসলে সড়কে সাধারণ লোকদের তল্লাশী করে। কিন্তু আসল মাদক বিক্রেতাকে ধরতে পারে না। তাই প্রশাসনের কাছে জোর দাবি বিজলীর অবৈধ দখলকৃত জায়গাটি উচ্ছেদ করলে মাদকের আখড়া বন্ধ হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, মাদকের টাকা আগে ওই ঘরে দিতে হয়। কিছুক্ষণ পরে কোনো এক স্থান থেকে মাদক এনে দেয়। তার এই কৌশলের জন্য ধরা পড়ে না। কিন্তু পুলিশ প্রশাসনও জানে বিজলী একজন মাদক বিক্রেতা।
বিজলী নিয়মিত বিভিন্ন এলাকাতেও মাদক পাচার করে তার মেয়েদের দিয়ে। বিভিন্ন সময় আইন শৃংখলা বাহিনী তল্লাশী করলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে সে। তার অভিনব পদ্ধতিতে জমজমাট মাদক ব্যবসা দীর্ঘ দেড় যুগের বেশি পার হচ্ছে বলেও স্থানীয় নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক ব্যক্তি জানান। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানান তার দখলকৃত জায়গা থেকে উচ্ছেদ করে মাদকমুক্ত পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে।
হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মাসুম জানান, বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। অতি দ্রুত মাদকের আখড়া উচ্ছেদ করে বিক্রেতাদের আইনের আওতায় নিয়ে আনা হবে।