অষ্টগ্রাম-বাজিতপুর সড়কের বেহাল দশা

মোঃ নজরুল ইসলাম, অষ্টগ্রাম প্রতিনিধি ।।

নির্মাণের পাঁচ বছর না যেতেই অষ্টগ্রাম-বাজিতপুর সড়কের বেহাল দশায় বিপাকে পড়েছে কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রামের আটটি ইউনিয়নের প্রায় দুই লাখ মানুষ। অষ্টগ্রামের একমাত্র ও জনগুরুত্বপূর্ণ এ রাস্তাটির বেহাল দশায় বাজিতপুরের সাথে সড়ক যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ কিশোরগঞ্জের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ সালেহীন জানান, ১২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ২১ কিঃমিঃ দীর্ঘ এ রাস্তাটির নির্মাণ কাজ এমবি.ইএল.এসই.এলজেআই.জেবি, এম.এম. বিল্ডার্স ও এমবি.ইএল.এসটি.জেবি ২০১১ সালে যৌথভাবে শুরু করে এবং ২০১৪ সালে শেষ করে। কিন্তু কাজটি শেষ করার আগেই স্রোতের টানে সবুরেরভাঙ্গা ব্রিজের সংযোগ সড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলেও অদ্যাবধি তা মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

অভিযোগ রয়েছে প্রতিবছরই একটি প্রভাবশালী মহলের সহায়তায় সওজ ও অষ্টগ্রাম উপজেলা প্রশাসনের নিরব সম্মতিতে এ ভাঙ্গা ব্রীজে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ টোল বাণিজ্য। হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। এ বিষয়ে প্রকৌশলী মোঃ সালেহীন বলেন, চলতি বছরে সবুরের ভাঙ্গাব্রীজে সওজের উদ্যোগেই সাঁকো নির্মাণ করে এ অবৈধ টোল বাণিজ্য বন্ধ করা হবে।

কারানল ব্রীজের উত্তর-পূর্ব পাশের সংযোগ সড়কের প্রায় ৮০ ভাগ ধসে গেছে। যে কোন সময় ঘটতে পারে বড় রকমের দুর্ঘটনা। বাহাদুরপুর ও কাস্তুল পশ্চিমপাড়া বক্স কালভার্ট এবং মসজিদজাম ব্রীজের সংযোগ সড়কে ভাঙ্গন সৃষ্টি হয়েছে। যা যে কোন মুহূর্তে ধসে গিয়ে ঘটতে পারে বড় রকমের দুর্ঘটনা। উল্লেখ্য, গত ১৭ আগস্ট স্রোতের টানে অষ্টগ্রাম-বাজিতপুর সড়কের বড়ভাঙ্গা ব্রীজটি ধসে পড়লে স্থানীয় সংসদ সদস্যের নির্দেশে ও একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বর্তমানে এখানে বেইলী ব্রীজ নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের পথে।

রাস্তাটি পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, বাজিতপুরের ঘোড়াউত্রা নদীর দীঘিরপাড় ঘাটে প্রায় ৮০ মিটার রাস্তা স্রোতের টানে ভেঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার পার্শ্ব দেয়াল ধসে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ব্রীজ-কালভার্টের সংযোগ সড়ক বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে।

‘হাওরাঞ্চলবাসী ঢাকা’র সাধারণ সম্পাদক রোটারিয়ান কামরুল হাসান বাবু বলেন, এখানে আবুরা সড়ক নির্মাণের আগে কোনো সমীক্ষা করা হয়নি। হাওরের পানিপ্রবাহ, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রতিবেশ এবং হাওরের ব্যতিক্রম প্রাকৃতিক আচরণ বিবেচনা করা হয়নি। পানিপ্রবাহের জন্য পর্যাপ্ত কালভার্ট, ব্রীজ অথবা উড়াল সেতু নেই ফলে হাওরের পানিপ্রবাহ মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলশ্রুতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। সমীক্ষার মাধ্যমে হাওরবান্ধব পরিকল্পনা গ্রহণ করা না হলে হাওর জনপদ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আবুরা সড়ক রক্ষা করাও কঠিন হয়ে পড়বে এবং এক সময় মরণ ফাঁদে পরিণত হবে স্বপ্নের আবুরা সড়ক।

এ বিষয়ে অষ্টগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম জেমস বলেন, আমরা হাওরের মানুষ। আমরা বুঝি হাওর ও হাওরের পানির গতি-প্রকৃতি। এখানে হাওরের ভারসাম্য বজায় রেখেই কাজ করতে হবে। না হলে প্রকৃতি আমাদের সাথে বৈরী আচরণ করবেই। সড়ক নির্মাণের আগে এ কথাটি আমি ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বারবার সওজ কর্তৃপক্ষকে বুঝাতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু তারা আমলে নেয়নি। তাই সোয়া কোটি টাকায় নির্মিত রাস্তাটির আজকে এ দূরবস্থা।

রাস্তাটির দূরবস্তার কথা স্বীকার করে সড়ক ও জনপথ (সওজ)-এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল আলম বলেন, অষ্টগ্রাম ইটনা মিটামইন আবুরা সড়ক নির্মাণের ফলে পানির গতি প্রবাহ পরিবর্তন হয়েছে, তাই রাস্তাটির এ অবস্থা। তবে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের কথা অগ্রাহ্য করে এ রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে তা তিনি অস্বীকার করেন।

Similar Posts

error: Content is protected !!