নজরুল ইসলাম তোফা ।।
পরিচালক শিমুল সরকার। সময়ের তরুণ জনপ্রিয় একজন পরিচালক। শত শত পর্বের নাটক নির্মাণে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন টেলিভিশন মিডিয়াতে। তার জনপ্রিয় ধারাবাহিক নাটকের মধ্যে আছে ডাইরেক্টার (বাংলাভিশন), চোরকাব্য (আরটিভি), মামার হাতের মোয়া (একুশে টিভি), হানিমুন ঠ্যালাগাড়ি (আরটিভি), জবের ব্যাপার (আরটিভি) এবং দর্শক প্রশংসিত একক নাটক ও টেলিফিল্মের মধ্যে সায়াহ্নে সূর্যোদয় (চ্যানেল আই), বউ চুরি (একুশে টিভি), আগুনের ফুল (বাংলাভিশন), শাস্তি (বাংলাভিশন), মা কে আমার পড়ে না মনে (বিটিভি), অচ্ছুত (আরটিভি), ওয়ান লাখ ইলেভেন হাজার (আরটিভি), আরজু (আরটিভি), কেস নম্বর ৯৯ (একুশে টিভি) উল্লেখযোগ্য। বেশ কিছুদিন থেকেই তিনি নাটক থেকে একটু দূরে আছেন কেননা এই সময়ে তিনি ৩ টি চলচ্চিত্রের প্রস্তুতি সারছেন। খুব শিঘ্রই চলচ্চিত্রগুলির কাজ শুরুও হয়ে যাবে একে একে। হুট করেই ভাল একটা গল্প মাথায় আসাতে তিনি এবার নাকি সেটি চ্যানেল আই এর জন্য নির্মাণ করেছেন। টেলিফিল্মের নাম ‘গুপ্তধন এবং একজন বৃদ্ধের গল্প’ যেটি ২৫ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩ টায় প্রচারিত হবে। অভিনয় করেছেন ফজলুর রহমান বাবু ও আ খ ম হাসান। সাথে আছেন নির্মাতা শিমুল সরকার নিজেও।
ক্যামেরায় অভিনয় এটি তার ২য়। প্রথমটি ছিল তার নিজের অনলাইন টেলিভিশন লাভ টিভির জন্য নির্মিত রাজকাহিনী HD . কেন অভিনয়ে আসা ? প্রশ্নের উত্তরে শিমুল সরকার জানান – অভিনয়টা আমার রক্তের সাথে মিশে গেছে। মঞ্চে কাজ করছি দীর্ঘ ২৩ বছর। এসময়টাতে নির্দেশনার পাশাপাশি প্রায় ৪০ টি নাটকের চার শতাধিক শোতে অভিনয় করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বিতার্কিক এবং অভিনেতা হিসেবেই বেশ খ্যাতি হয়েছিল বলতে পারেন। কিন্তু টেলিভিশনে আমার সব সময় ক্যামেরার পিছনে থাকাটাকেই শ্রেয় মনে হয়েছে।নির্মাতা হতেই লাইট ক্যামেরা একশানের এই মাঠে আসা আমার। কিন্তু বলতে পারেন অনেকটা ক্ষোভ নিয়েই অভিনয়টা শুরু করা এবার ক্যামেরার সামনে। আমাদের টিভি নাটক এবং চলচ্চিত্রে ভাল অভিনয়টা খুব কমে গেছে। কমে গেছে ভাল অভিনেতা অভিনেত্রীদের সংখ্যাও। এখন যারা অভিনয় করছেন তাদের শতকরা ৯০ ভাগেরও বেশি অদক্ষ এবং ততটাই বাণিজ্যিক। এই বাণিজ্যিক মনোভাবটাকে আবার প্রফেশনালিজমের সাথে মিলিয়ে ফেলা যাবে না। এটা নিছক টাকা কামানোর মাঠ হয়ে গেছে কারো কারো কাছে। সেটে আসবেন দুপুর ১টায়। এসেই আবার বলবেন আমি কিন্তু ৮ টার পরে কাজ করিনা। আমি কিন্তু উত্তরার বাইরে হলে ৯ টা পর্যন্ত কাজ করি। আমি কিন্তু ১০ টার পর ১ সেকেন্ডও থাকবো না জাতীয় বাণী প্রণেতা এরা। ৯৮% ই স্ক্রিপ্ট পড়েন না বাসায়। সেটে এসে মোবাইলে কথা বলতে বলতে এক দুইবার রিহার্সেল, এবং তারপরের ডাইলগ হলো পুরোটা তো মাস্টারে যাওয়া যাবে না, কেটে কেটে নেন। একটা করে সংলাপ বলে দেন আর ক্লোজ নেন। দিয়ে দিচ্ছি। এই শতকরা ৯৮ জনই কিন্তু ক্লোজ শটের খেলোয়াড়। অথচ দেখুন আমাদের একজন ফেরদৌসী মজুমদার আছেন, আছেন এটিএম শামসুজ্জামান, মামুনুর রশিদ, আলী যাকের, আবুল হায়াত, আসাদুজ্জামান নূর।
ফেরদৌসী দিদিকে নিয়ে একটা ঈদের নাটক করছি, একটা দৃশ্য ছিল ৭ মিনিটের। একা একাই কথা বলবেন। আমি বলেছিলাম দিদি আমি এই দৃশ্যটা এক টেকে নিতে চাই। উনি বললেন আমাকে ২ মিনিট সময় দাও আমি শুধু একবার রিভাইজ টা দিয়ে নিবো। তারপর দুই ক্যামেরায় তিনি আমাকে বিস্ময়ের সাগরে ফেলে এক টেকে শট দিলেন। হাসি কান্না ভালবাসা অভিমান কত রকম অভিব্যক্তিই না ছিল সেখানে। শুটিং এর আগে তিনি অন্তত ১০ বার আমাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞাসা করেছেন শিমুল এই যায়গাটা কেমন হবে একটু বলো তো ভাই, আমি এরকম ভাবছি ঠিক আছে কী? কোথায় পাবেন য়ার একজন ফেরদৌসী মজুমদারকে? প্রফেশনালিজম এর কথা বলবেন? উনি অনেক বেশি প্রফেশনাল। ফাইনাল মিটিং এ সম্মানী নিয়েও কথা পাকা করে নিয়েছেন। জিজ্ঞাসা করে বলেছেন একজন স্ক্রিপ্ট টা দেখে বললো এটি তো টেলিফিল্মের মত বড়। তুমি কি টেলিফিল্ম করবে নাকি? টেলিফিল্মের সম্মানী নাকি নাটকের চাইতে বেশি? আমি মুগ্ধ হয়েছি তার সারল্যে। বিনয়ের সাথে বলেছি যাদেরকে দেবতা জ্ঞান করে বড় হয়েছি তাদের কাছে কী ভক্তরা কিছু লুকোয় দিদি? উনি আদর করে দিয়েছেন।উনি কিন্তু সেটে গিয়ে বলেননি আমি স্যান্ডুইচ ছাড়া নাস্তা করি না !! বলেননি কারণ তার বাসায় ভাতের অভাব নেই। যারা বাসায় পান্তা ভাত খেয়ে বের হয় ঐসব মুখেই ওগুলো মানায় ইদানীং।
এটিএম শামসুজ্জামান কে নিয়ে শত শত পর্বের নাটক করেছি। জীবনে একবার দেখিনি যে কোন শট শেষ করে আমাকে জিজ্ঞাসা করতে ভুলেছেন- শিমুল ঠিক ছিল তো? না হলে আবার দিই। আর আমাদের তথাচকথিত তারকারা সেকেন্ড টেক নিতে চাইলে আরে না ঠিকই তো ছিল। আর ঐটা তো মাস্টারে আছেই, এই যায়গায় মাস্টারে চলে যাইয়েন।
এগুলোই আমার অভিনয় শুরু করার পিছনের কিছু ক্ষোভ বলতে পারেন। অভিনয়টা নিয়মিতই করতে চাই কেননা আমি জানি যে অভিনয়টা আমি মোটামুটি পারি। তবে তারকা হবার জন্য অভিনয় করা আমার ইচ্ছা নয়। কিন্তু করতে চাই যদি সুযোগ আসে ভাল কিছু করার।
আমার এই গল্পটা সবার আশা করি ভাল লাগবে। এখানে গুপ্তধনটাই আসল রহস্য। সবার গতানুগতিক যে ধারনা গুপ্তধন সম্পর্কে সেখানে একটা হোচট খাওয়াতে চেয়েছি আমি। গল্পটা লিখার পর এখানে অসাধারন কিছু ইনপুট দিয়েছেন হাসান ভাই (ইবনে হাসান খান)। কৃতজ্ঞতা তার প্রতি।ও হা এখানে কাজও করেছেন দুজন অসাধারন অভিনেতা যারা আমার খুবই প্রিয় মানুষ এবং প্রিয় অভিনেতা। আশা করি দর্শক নিরাশ হবেন না।