মোঃ নজরুল ইসলাম, অষ্টগ্রাম প্রতিনিধি ।।
দীর্ঘদিন ধরেই ঔষধ ও জনবল সংকটে আক্রান্ত হয়ে আছে প্রায় দু’লক্ষ জনসংখ্যা অধ্যুষিত কিশোরগঞ্জের হাওর উপজেলা অষ্টগ্রাম স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ২০১২ সালে এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও ৩১ শয্যার জনবল নিয়েই খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে হাসপাতালটি। এখানে ১৬ জন ডাক্তারের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র চারজন। এরমধ্যে একজন ডেপুটেশনে ময়মনসিংহে কর্মরত আছেন।
উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদে নয় জনের বিপরীতে আছেন মাত্র দু’জন। এরমধ্যে একজন ডেপুটেশনে টাঙ্গাইলে কর্মরত। ল্যাব টেকনেশিয়ান না থাকায় প্রায় তিন বছর ধরে বন্ধ রয়েছে হাসপাতালের ল্যাবরেটরী। এতে বিভিন্ন রোগের পরীক্ষা নিরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এক্সরে মেশিন থাকলেও টেকনেশিয়ানের অভাবে মেশিনটি দীর্ঘদিন যাবৎ বন্ধ রয়েছে। ওয়ার্ডবয়ের তিনটি পদের বিপরীতে একজন কর্মরত থাকলেও তিনি ডেপুটেশনে কিশোরগঞ্জ ও দুইজন নিরাপত্তা প্রহরীর স্থলে কাগজে কলমে একজন কর্মরত থাকলেও তিনি ডেপুটেশনে ভৈরবে কর্মরত আছেন। ক্লিনারের পাঁচটি পদ থাকলেও চারটি পদই রয়েছে শূণ্য।
এছাড়া সনোলজিষ্ট, ডেন্টাল সার্জন, নার্সিং সুপারভাইজার, পরিসংখ্যানবিদ, স্টোর কিপার, মালি, জুনিয়র মেকানিকের পদ দীর্ঘদিন যাবৎ শূণ্য রয়েছে।
হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতাল নিজেই বিভিন্ন রোগ জীবানু দ্বারা আক্রান্ত। হাসপাতালের ওয়ার্ড ও ওয়াশরুম অত্যন্ত নোংরা অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। ঔষধ নিয়েও রয়েছে রোগীদের বিস্তর অভিযোগ। পুরুষ ওয়ার্ডের ১৩নং বেডে ভর্তি সোহেল ভূঁইয়া ও ১০নং বেডে ভর্তি শুক্কুর আলী অভিযোগ করে বলেন, এখানে ঠিকমত কোন ঔষধপত্র দেওয়া হয় না, প্রয়োজনীয় ঔষধ বাইরে থেকেই কিনে নিতে হয়।
মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডের ২৯নং বেডের সারা মনির মা রীমা আক্তার ও ২৫ নং বেডের মাহিন খানের দাদী অভিযোগ করে বলেন, ভর্তির পর থেকে আমাদের শিশুরোগীদের খাবার স্যালাইন ছাড়া কোন ঔষধপত্র দেওয়া হয়নি। প্রয়োজনীয় সকল ঔষধ আমরা বাইরে থেকে কিনে নিয়েছি।
বহিঃবিভাগের রোগীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখান থেকে প্যারাসিটামল, হিস্টাসিন, এন্টাসিড ও মেট্রোনিডাজল ছাড়া অন্য কোন ঔষধ দেওয়া হয় না। আবার অনেকে ঔষধ না পেয়ে খালি হাতেই ফিরে যায়।
ঔষধ ও জনবল সংকটের কথা স্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ ইসহাক বাবু এ প্রতিবেদককে জানান, নতুনভাবে ঔষধ কেনার নিয়ম হয়েছে, সে কারণে ঔষধের কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। ঔষধের জন্য চাহিদাপত্র স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়েছে। আশা করি জানুয়ারি মাসের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান হবে।
তিনি আরও বলেন, জনবল সংকট এ হাসপাতালের দীর্ঘ দিনের সমস্যা। এজন্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বারবার লিখেও কোন সমাধান হচ্ছে না। ইতিপূর্বে আউট সোর্সিং-এর মাধ্যমে আটজন লোক নিয়োগ দেওয়া হলেও তারা আট মাস যাবৎ কোন বেতন-ভাতা না পেয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন।
এ বিষয়ে কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাঃ মোস্তাফিজুর রহমান এ প্রতিনিধিকে জানান, নতুন নিয়ম অনুযায়ী এখন স্থানীয়ভাবে অষ্টগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী ঔষধ সরবরাহ করবে, তাই সাময়িক এ সংকট। অচিরেই এর সমাধান হবে বলে আশা করছি। তিনি আরও বলেন, শূণ্য পদ পূরণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। নতুন নিয়োগ হলেই এ পদগুলি পূরণ হবে বলে আশা করছি।
তিনি জানান, আউট সোর্সিং-এ নিয়োগপ্রাপ্ত আটজনের জুন মাস পর্যন্ত বেতনের জন্য চিঠি লিখা হয়েছে। আশা করি শীঘ্রই
তারা তাদের প্রাপ্য বেতন-ভাতা পেয়ে যাবেন।