আবারও জ্বলেছে আলো!

খাইরুল মোমেন স্বপন, বিশেষ প্রতিনিধি ।।

স্বাধীনতা ৫০ বছরে পদার্পন করলেও দ্বিতীয়বারের মতো কিশোরগঞ্জের নিকলী কেন্দ্রীয় শ্মশ্বানখোলায় আবার জ্বলেছে আলো। উপজেলার সর্ববৃহৎ বদ্ধভূমিতে মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যায় মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে এ আলো জ্বালায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামছুদ্দিন মুন্না। এসময় উপস্থিত ছিলেন নিকলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আহসান মো. রুহুল কুদ্দুছ ভূইয়া, থানা অফিসার্স ইনচার্জ সামশুল আলম সিদ্দিকী, নিকলী প্রেসক্লাব সম্পাদক দিলীপ কুমার সাহা প্রমুখ।

২০১৯ সালে তৎকালীন নিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাম্মৎ শাহীনা আক্তার প্রথমবারের মতো বদ্ধভূমিটিতে প্রশাসনিক আনুষ্ঠানিকতায় মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করেছিলেন।

‘৭১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর, বাংলা সালের ৬ আশ্বিন। উপজেলার দামপাড়া ইউনিয়নের মিস্ত্রিপাড়া থেকে পাক মেজর দোররানী ও রাজাকার কমান্ডার (তৎকালীন থানার ওসি) হোসেন আলীর নির্দেশে স্থানীয় দালাল শান্তি কমিটি ও সেই সময়কার দামপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহেব আলী ওরফে ট্যাকার বাপের নেতৃত্বে কিশোর, যুবক, বৃদ্ধসহ ৩৯ জনকে নিরাপত্তা কার্ড দেয়ার নাম করে ২টি নৌকায় উঠায়। সিরাজ, সানাইসহ কয়েক রাজাকারের তত্ত্বাবধানে তাদেরকে নিয়ে আসা হয় রাজাকার ক্যাম্প নিকলী থানায়।

এদের মধ্যে বাদল সূত্রধর, বাদল বর্মন, সুনু বর্মন, গোপাল সূত্রধর বয়সে কিশোর হওয়ায় রাখা হয় থানা লকআপে। বাকীদের পিঠমোড়া বেঁধে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে চালানো হয় নির্যাতন। ক্ষণে ক্ষণে লাঠি আর বেয়নেটের খোঁচাখুঁচি চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। পাকমেজর দোররানীর (নিকলী জিসিপি উচ্চ বিদ্যালয় পাক ঘাঁটিতে অবস্থানরত) সাথে ওয়ারলেসযোগে সিদ্ধান্ত নেয় হোসেন আলী। রাত আনুমানিক ৮টার দিকে ঐ ৩৫ গ্রামবাসীকে থানার নিকটস্থ সোয়াইজনী নদীর পশ্চিমপাড়ের শ্মশ্মানখলা ঘাটে সাঁরিবদ্ধ দাঁড় করিয়ে চালানো হয় ব্রাস ফায়ার।

রাজাকারদের সহযোগিতায় গুলিবিদ্ধ ৩৫ জনকেই হলুই (মাছ গাঁথার বড় সুঁই) করে নিয়ে যাওয়া হয় ধুবলারচর নামক হাওরে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে বর্ষার পানিতে ডুবিয়ে দেয় সবাইকে। কামিনী বর্মন নামে একজন কাকতালীয়ভাবে বেঁচে যান। ভোর বেলায় ছেড়ে দেয় থানা লকআপের ৪ কিশোরকে। ততক্ষণে হাওরের জলে ভেসে গেছে তাদের মা-কাকীর সিঁদুর। বিধ্বস্ত কিশোরদের চোখে প্রতিশোধের আগুন। উপায়ান্তর না দেখে যোগ দেয় এলাকায় অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে। রাজাকার ঘাঁটির পথ-ঘাট চেনানোসহ নানা কাজে সহযোগিতা করে দেশ স্বাধীন হবার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত।

Similar Posts

error: Content is protected !!