খাইরুল মোমেন স্বপন, বিশেষ প্রতিনিধি ।।
সময়টা হাওরের প্রধান ফসল বোরো আবাদে কৃষক ও কৃষি শ্রমিকদের চরম ব্যস্ততম সময়। এমন সময়ে করোনা আতঙ্ক ও সরকারি নির্দেশনায় গৃহবন্দি দিনাতিপাত করছে কিশোরগঞ্জের নিকলীসহ জেলাটির হাওরাঞ্চলবাসি। চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল সরকারের ত্রাণ কার্যক্রম। হাওর জুড়ে বিরাজ করছে চরম খাদ্যসংকট।
২৮ মার্চ শনিবার থেকে নিকলী উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে। প্রতিটি ত্রাণ প্যাকেটে দেওয়া হয়েছে ১০ কেজি চাল, ৫ কেজি আলু, ২ কেজি ডাল, সাবান ও মাস্ক। উপজেলার ৭ ইউনিয়নের ৭শ’ পরিবারকে দেওয়া হবে এসব ত্রাণ সামগ্রী। ব্যক্তিক হিসাবে মাত্র ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার মানুষ ত্রাণের আওতায় আসবে। যা চাহিদার তুলনায় একেবারে নগন্য।
২১৪ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ উপজেলায় ক্ষুদ্র, গুচ্ছ ও দ্বীপ শ্রেণিভেদের ১২৮টি গ্রাম রয়েছে। সরকারি জরিপ অনুযায়ী এসব গ্রামে ১লক্ষ ৩০ হাজার ৩৭৯ জনসংখ্যার বাস। এবং চাহিদার চেয়ে দ্বিগুন খাদ্য উৎপাদনকারি উপজেলা এটি। উপজেলাবাসি কৃষক, কৃষি শ্রমিক, মৎসজীবি বা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ কৃষির সাথেই সম্পৃক্ত পেশাজীবি। বেশিরভাগই নিম্ন আয়ের মানুষ। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে স্থবির অর্থনীতি।
এমতাবস্থায় কর্ম রোজগারহীন শ্রমিক শ্রেণি। এছাড়াও হাওরের প্রধান বোরো আবাদে সর্বোচ্চ ব্যস্ততম সময় এটি। বিনিয়োগেরও। অবস্থাসম্পন্ন কৃষক পরিবারগুলোও স্বাভাবিক কারণেই এ সময়টাতে বরাবরের মতো রয়েছে অর্থনৈতিক টানাপোড়েনে। গৃহবন্দি ও রোজগারহীন পুরো হাওরবাসির জন্য জরুরি ত্রাণ প্রয়োজন।
নিকলী সদরের রিক্সাচালক আবদুস সাত্তার বলেন, রাস্তাঘাটে মানুষ নাই। রোজগার নাই। অন্য কোন ভরসাও নাই। আছে রিক্সাটির কিস্তি। অজানা ভয়ে বাইরে যেতে পারছি না। কোন সাহায্যও পাই না। কেউ ঋণও দিতে চায় না। দুধের পোলাপান নিয়া কষ্টে আছি। জানি না কয়দিন চলবো।
বড় বিধবা অনিতা রাণী সাহা তার স্বামী পরিত্যক্তা মানসিক প্রতিবন্ধি মেয়ে ববিতাকে নিয়ে থাকেন আধা শতাংশ বাড়ির একটি খুপড়ি ঘরে। আয় বলতে নগদ টাকা বা জমিজমা কিছুই নেই। তিনি জানান, ভিক্ষা করার মতো সামাজিক অবস্থান নেই। এর মধ্যে গৃহবন্দি জীবন। ত্রাণ এসেছে শুনলেও আমাদের ভাগ্যে জুটেনি। অনিতা রাণীর মতো শত শত পরিবারে চলছে এমন হাহাকার।
নিকলী সদর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য তাজুল ইসলাম শিপন জানান, আমার ওয়ার্ডে প্রায় পাঁচ হাজার লোকের বসবাস। বেশিরভাগই শ্রমজীবি ও নিম্ন আয়ের মানুষ। কমপক্ষে এ ওয়ার্ডেই ২শ’ লোকের জরুরি ত্রাণ প্রয়োজন। মাত্র ৪টি ত্রাণকার্ড দিতে পেরেছি। খাদ্য সংকটে গৃহবন্দি মানুষের দুর্দশা দেখা ছাড়া নিরুপায় আমি। এমন অভিযোগ একই ইউপি সদস্য সাহারউদ্দিনসহ উপজেলার প্রায় সকল জনপ্রতিনিধির।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরো হাওরবাসিই চরম খাদ্য সংকটে রয়েছে। এমন অবস্থা কিছুদিন চললে সংকট তীব্রতর হবে। সবার খাদ্য নিশ্চিত করতে না পারলে হাওর আইনশৃঙ্খলায় মারাত্মক ধ্বস নামার সম্ভাবনা রয়েছে। অভুক্ত মানুষকে শৃঙ্খলায় রাখা কঠিন।
নিকলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আহসান মো. রুহুল কুদ্দুছ ভূইয়া বলেন, এ উপজেলায় সরকার প্রদত্ত ত্রাণের পরিমাণ মাত্র ৭০ হাজার টাকা। চাহিদা অনেক। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামছুদ্দিন মুন্নার সহযোগিতায় রাজস্বের অপ্রত্যাশিত আয় থেকে ৩ লাখের উপরে অর্থ নিয়ে প্রায় ৪লাখ টাকার প্রাথমিক ত্রাণ দিচ্ছি। প্রকৃত অবস্থা উর্ধ্বতন মহলকে জানিয়েছি। দেখি কী করা যায়।