বাংলাদেশে গরুর মাংস খুব জনপ্রিয় এবং চাহিদাও প্রচুর। তাছাড়া মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব কুরবানীর সময় অনেক গরু জবাই করা হয়। সুতরাং “গরু মোটাতাজাকরণ” পদ্ধতি বাংলাদেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং একটি লাভজনক ব্যবসা। মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ায় ধারাবাহিকভাবে যে বিষয়গুলো সম্পন্ন করতে হবে তা নিম্নরুপ :
১. পশু নির্বাচন
২. কৃমিমুক্তকরণ ও টিকা প্রদান
৩. পুষ্টি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা এবং
৪. বাজারজাতকরণ।
১. পশু নির্বাচন
মোটাতাজাকরণ কর্মসূচীর জন্য গরু কেনার সময় প্রধান দুটি বিবেচ্য বিষয় হলো বয়স ও শারীরিক গঠন।
ক. বয়স নির্ধারণ : মোটাতাজা করার জন্য সাধারণত ২ থেকে ৫ বছরের গরু কেনা যেতে পারে, তবে ৩ বছরের গরু হলে ভালো।
খ. শারীরিক গঠন : মোটাতাজাকরণে ব্যবহৃত গরুর দৈহিক গঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এজন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মনে রেখে গরু নির্বাচন করা জরুরি।
• দেহ হবে বর্গাকার।
• গায়ের চামড়া হবে ঢিলা ( দুই আঙ্গুল দিয়ে ধরে টান দিয়ে দেখতে হবে)।
• শরীরের হাড়গুলো আনুপাতিকহারে মোটা, মাথাটা চওড়া, ঘাড় চওড়া এবং খাটো।
• পা-গুলো খাটো এবং সোজাসুজিভাবে শরীরের সাথে যুক্ত।
• পিছনের অংশ ও পিঠ চওড়া এবং লোম খাটে ও মিলানো।
• গরু অপুষ্ট ও দুর্বল কিন্তু রোগা নয়।
২. কৃমিমুক্তকরণ
পশুডাক্তারের নির্দেশনা মতো কৃমির ঔষধ ব্যবহার করতে হবে। গরু সংগ্রহের পর পরই পালের সব গরুকে একসাথে কৃমিমুক্ত করা উচিত। তবে প্রতি ৭৫ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১টি করে এনডেক্স বা এন্টিওয়ার্ম ট্যাবলেট ব্যবহার করা যেতে পারে।
৩. টিকা প্রদান
আগে থেকে টিকা না দেয়া থাকলে খামারে আনার পরপরই সবগুলো গরুকে তড়কা, বাদলা এবং ক্ষুরা রোগের টিকা দিতে হবে। এ ব্যাপারে নিকটস্থ পশু হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।
৪. ঘর তৈরি ও আবাসন ব্যবস্থাপনা
আমাদের দেশের অধিকাংশ খামারী ২/৩টি পশু মোটাতাজা করে থাকেন, যার জন্য সাধারণত আধুনিক সেড করার প্রয়োজন পড়ে না। তবে যে ধরনের ঘরেই গরু রাখা হোক ঘরের মধ্যে পর্যন্ত আলো ও বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ঘরের মল-মূত্র ও অন্যান্য আবর্জনা যাতে সহজেই পরিস্কার করা যায় সে দিকে খেয়াল রেখে ঘর তৈরি করতে হবে।
৫. পুষ্টি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা
গরু মোটতাজাকরণে দুই ধরনের খাদ্যের সমন্বয়ে রশদ (রেশন) তৈরি করা হয়।
• আঁশজাতীয় : শুধু খড়, ইউ এম, সবুজ ঘাস ইত্যাদি। তবে এই প্রক্রিয়ায় খামারীদেরকে শুধু খড়ের পরিবর্তে ইউ এম এস খাওয়াতে হবে।
• দানারার : খৈল, ভূষি, চাষের কুড়া, খুদ, শুটকি মাছ, ঝিনুকের গুড়া, লবণ ইত্যাদি।
• খাওয়ানের পরিমাণ : গরুকে তার ইচ্ছা অনুযায়ী, অর্থাৎ গরু যে পরিমাণ খেতে পারে সে পরিমাণ ইউ এম এস সরবারাহ করতে হবে।
ক. কোনো খামারী সবুজ ঘাস খাওয়াতে চাইলে প্রতি ১০০ কেজি কাঁচা ঘাসের সাথে ৩ কেজি চিটাগুড় মিশিয়ে তা গরুকে খাওয়াতে পারেন। এক্ষেত্রে কাঁচা ঘাসও গরুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ করতে হবে।
খ. দানাদর মিশ্রণ : খামারীদের সুবিধার জন্য নিচের সারণিতে একটি দানাদার মিশ্রণ তৈরির বিভিন্ন
উপাদান পরিমাণসহ উল্লেখ করা হলো। নিম্নের ছক অনুযায়ী অথবা প্রয়োজন অনুযায়ী খামারীগণ বিভিন্ন পরিমাণ মিশ্রণ তৈরি করে নিতে পারবেন।
• খাওয়ানের পরিমাণ : গরুকে তার দেহের ওজন অনুপাতে দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হবে। পাশের দানাদার মিশ্রণটি গরুর ওজনের শতকরা ০.৮-১ ভাগ পরিমাণ সরবরাহ করলেই চলবে।
• খাওয়ানোর সময় : দানাদার মিশ্রণটি একবারে না খাইয়ে ভাগ ভাগ করে সকালে এবং বিকালে খাওয়াতে হবে।
• পানি : গরুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পরিষ্কার খাবার পানি সরবরাহ করতে হবে।
৬. দৈহিক ওজন নির্ণয়
মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ায় গরুকে দৈহিক ওজন নির্ণয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কেননা গরুর খাদ্য সরবরাহ, ঔষধ সরবরাহ ইত্যাদি কাজগুলো করতে হয় দৈহিক ওজনের ভিত্তিতে। গরুর ওজন নির্ণয়ের জন্য গরুকে সমান্তরাল জায়গায় দাড় করাতে হবে এবং ফিতা দ্বারা দৈর্ঘ্য ও বুকের বেড়ের মাপ নিতে হবে। এই মাপ নিচের সূত্রে বসালে গরুর ওজন পাওয়া যাবে।
দৈর্ঘ্য × বুকের বেড় (ফুট) × বুকের বেড় (ফুট)
………………………………… = ওজন (কিলোগ্রাম) ৬.৬০
উপসংহার : উপরে বর্ণিত পদ্ধতি অনুযায়ী পালন করলে ৯০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যেই গরু মোটাতাজাকরণ করে বাজারজাত করা সম্ভব।
সূত্র : কৃষি তথ্য সার্ভিস