করোনাকালে যেমন আছে নিকলীর দ্বীপগ্রাম মোহাম্মদপুর?

এস.এম ইলিয়াস ।।

আমার গ্রামের নাম নানশ্রী। কারপাশা ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড। গ্রামের মাঝখান দিয়ে নরসুন্দা নদী বয়ে যাওয়ায় গ্রামটি পূর্ব-পশ্চিমে দ্বিখণ্ডিত হয়েছে। আমরা পূর্ব পাড়ে। মূল গ্রাম হতে বিচ্ছিন্ন। প্রায় দ্বীপের মতো। এখানে সভ্যতার ছোঁয়া এখনো লাগেনি বললেই চলে। অধিকাংশ মানুষ অশিক্ষিত, অসচেতন। তাদের আর্থিক অবস্থাও করুণ। অধিকাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে। দিনে আনে দিন খায় এমন। এখনো প্রতিদিন কাজে যায়, না হলে খাবার জুটবে না অনেকের ঘরে।

নির্বাচন ছাড়া কোনো মেম্বার, ইউনিয়ন বা উপজেলা চেয়ারম্যান এবং কোনো জনপ্রতিনিধি আমাদের কথা ভাবেন না। ভুলেও তাদের মনে পড়ে না আমাদের কথা। নির্বাচনের সময় ভোটের জন্য একবার এখানে এলেও ভোট পাওয়ার পর আর ৫ বছরের মধ্যে তাদেরকে এই এলাকায় হারিকেন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায় না। গত ৩/৪ বছরে এ পাড়ায় সরকারি একটি ইটের গাঁথনিও হয়নি। মৌজা নকশায় বিশাল রাস্তা থাকলেও তা আজ মানুষের দখলে আছে। কিছু মানুষ সে রাস্তায় ফসল ফলিয়ে ভোগ করছে। এই রাস্তা আমাদের ভীষণ দরকার। বর্তমানে এ পাড়া থেকে অন্য গ্রাম বা আমাদের মূল গ্রামে যাওয়ারই কোনো রাস্তা নেই। আমাদের রাস্তা-ঘাট থেকে শুরু করে প্রত্যেক রন্দ্রে রন্দ্রেই নানাবিধ অসুবিধা রয়েছে। এগুলো নজরে পড়ে না কারো।

এই পাড়ার দক্ষিণ, পশ্চিম ও উত্তর এই তিন দিকেই নদী। আর পূর্ব দিকে হাওর। বছরে আট মাস এই নদীতে পানি থাকে। থাকে না নদী পারাপারের কোনো ব্যবস্থা। এমনকি যখন পানি নদীর তলায় চলে আসে তখন এ পাড়া থেকে মূল গ্রামে প্রবেশের জন্য কোনো বাঁধও দেয়া হয় না। এ পাড়ার ছেলেমেয়েদের সারা বছর এই নদী পার হয়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করতে খুবই কষ্ট হয়। এমনকি বাড়ি থেকে নদীর পাড় পর্যন্ত যাওয়ার যে বিশাল রাস্তা নকশায় রয়েছে তাও নদীর চরে মানুষের মিষ্টি আলুর জমির দখলে আছে। বাকীসব সমস্যার কথা না-ই বললাম।

মূলকথায় আসি, এই পাড়ার বর্তমান নাম মোহাম্মদপুর। এই নামে কেউ চিনে না। সবাই চিনে পূর্ব নামে। এর পূর্বের নাম “গয়ভের ভিটা”। বর্তমানে ১০০+ পরিবারের বসবাস এখানে। এখনো পর্যন্ত কোভিড-১৯ এর ব্যাপারে কোনো সচেতনতা তৈরির জন্য কেউ এখানে আসেনি। সবাই নানশ্রী বাজার বা নানশ্রী মূল গ্রাম পর্যন্ত এসেই চলে যায়, এই বিচ্ছিন্ন অংশে কেউ আসে না। কোনো জনপ্রতিনিধিকেও এই পাড়ায় দেখা যায়নি। শুনেছি সেদিন মাত্র ২/৩টি পরিবার এম পি মহোদয়ের দেয়া ত্রাণ পেয়েছে। অথচ বহু পরিবার ত্রাণ পাওয়ার যোগ্য। মানুষ মূর্খ হওয়ার কারণে তাদের বুঝানো খুবই কঠিন। আমি নিজে তাদের অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছি। এক ঘণ্টা বয়ান করেও কাউকে বুঝানো কঠিন। সবাই শুধু আল্লাহর উপর ভরসা করে বসে থাকে। লোকজন যে যার মতো ঘুরাঘুরি করছে, বাজারে যাচ্ছে। কাজে যাচ্ছে। বাহির থেকে পরিষ্কার তো দূরের কথা হাত ধোয়াও হয় না তাদের। আমি এবং আমার পরিবার খুবই বিপজ্জনক অবস্থায় আছি। মানুষকে বুঝাতে গেলে আমার সাথে আরো ঠাট্টা করে। তবুও আমার কাজ আমি চালিয়ে যাচ্ছি। যাকে পাচ্ছি তাদেরই বুঝাচ্ছি। এখানে শিক্ষিত, সচেতন তরুণ না থাকায় ভলান্টিয়ার টিম করে কাজ করতে পারছি না, আমি একাই করে যাচ্ছি। এই পাড়ায় যদি একজন আক্রান্ত হয় তাহলে ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। কারণ অল্পসংখ্যক বাড়ি হওয়ায় সবাই সবার বাড়িতে আসা-যাওয়া করছে। গল্প করছে, আড্ডা দিচ্ছে।

এমতাবস্থায়,আমি আমার ওয়ার্ড মেম্বার, ইউনিয়ন ও উপজেলা চেয়ারম্যান, এলাকার জনপ্রতিনিধিসহ সকল স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে আহ্বান জানাচ্ছি আমাদের এই পাড়ায় এসে সার্বিক পরিস্থিতি দেখার জন্য এবং গণসচেতনতা বৃদ্ধি ও দরিদ্র পরিবারের ত্রাণের ব্যবস্থা করার জন্য।

এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে-
এস.এম ইলিয়াস
অর্থ বিষয়ক সম্পাদক, ঢাকাস্থ নিকলী ছাত্রপরিষদ।
শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

Similar Posts

error: Content is protected !!