নিকলীতে রহস্যময় করোনা রিপোর্ট, ভুল না প্রতারণা!

খাইরুল মোমেন স্বপন, বিশেষ প্রতিনিধি ।।

নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুই চিকিৎসকসহ তিন স্বাস্থ্যকর্মির করোনা রিপোর্ট পাওয়া গেলো পজেটিভ। সাময়িক লকডাউন ঘোষণা হলো হাসপাতাল। পুনঃরিপোর্টে সেই পজেটিভ সকলেই হয়ে গেলো নেগেটিভ! রহস্যময় এই রিপোর্ট নিয়ে জনমনে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা। আইইডিসিআর রিপোর্ট ভুল না কি দায়িত্ব থেকে সরে গিয়েও প্রণোদনার অর্থ হাতিয়ে নিতে কোন স্বার্থান্বেষি চক্রের কাজ? এমন নানা প্রশ্ন “টক অব দ্য উপজেলায়” পরিণত হয়েছে।

জানা যায়, গত ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত নিকলী উপজেলায় একজন করোনা কোভিট-১৯ আক্রান্ত রোগির সন্ধান পাওয়া যায়। একই দিন নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান ডা. খান নূরুদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, ডা. টুম্পা রাণী দাস, অ্যাম্বুলেন্সচালক শামীম মিয়াসহ ৯ ব্যক্তির নমুনা আইইডিসিআর পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। ২২ এপ্রিল রাতে উল্লেখিত ৩ স্বাস্থ্যকর্মি ও নারায়রগঞ্জ ফেরত এক মহিলাসহ ৪জনের দেহে করোনাভাইরাস পজেটিভ রয়েছে বলে জানা যায়।

২৩ এপ্রিল উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি এক প্রজ্ঞাপনে হাসপাতালটি সাময়িক লকডাউন ঘোষণা করে। সীমিত পরিসরে ই-সেবা দেওয়ার কথা বলা হয়। আক্রান্ত ব্যক্তিদের আবাসস্থলে জরুরি অবস্থা জারি করে মাইকিং করে। উপজেলাবাসি ও সরকারি-বেসরকারি সকল কর্মকর্তা কর্মচারির মধ্যে দেখা দেয় চরম আতঙ্ক।

স্বাস্থ্যকর্মিদের কারও মধ্যেই করোনা আক্রান্তের উপসর্গ দেখা যায়নি। ২৩ এপ্রিল এই তিন স্বাস্থ্যকর্মির পুনঃনমুনাসহ ৪০ সন্দেহভাজনের উপাত্ত পাঠানো হয় আইইডিসিআর পরীক্ষাগারে। ২৫ এপ্রিল রাতে সকলের করোনাভাইরাস নেগেটিভ আসে। স্বাস্থ্যকর্মিদের কারও মধ্যেই আক্রান্ত হওয়ার কোন প্রকার উপসর্গ না থাকায় এবং দুইবারের পরীক্ষায় বিপরীত ফলাফলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই রহস্যের ইঙ্গিত করেন। কেউ কেউ আক্রান্তের ভয়ে ডাক্তারদের দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়ার কৌশল বলেও মন্তব্য করছেন। সরকার ঘোষিত প্রণোদনার টাকা হাতিয়ে নিতে অসৎ ডাক্তার চক্রের কারসাজির সন্দেহও পোষণ করেন কেউ কেউ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক কর্মি জানান, টিএইচও সাহেব করোনাকালের কাগুজে স্বাস্থ্যকর্মি। করোনা রোগির ধারে কাছেও যান না। সন্দেহ করার কারণ তো রয়েছেই।

এ ব্যাপারে সমালোচনার শিকার উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খান নূরুদ্দিন মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, কোন উপসর্গ ছাড়া রিপোর্ট পজেটিভ আসায় হতবাকই হয়েছিলাম। দুটো রিপোর্টই সরকারি পরীক্ষাগারের। আমাদের কোনো হাত নেই।

উপজেলা করোনা প্রতিরাধ কমিটির সভাপতি ও নিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামসুদ্দিন মুন্না স্বাস্থ্যকর্মিদের দুইবারে দুই রকমের রিপোর্ট আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, তৃতীয় পরীক্ষার প্রস্তুতি চলছে। তারপর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।

কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. মজিবুর রহমান এই প্রতিনিধিকে বলেন, করোনাভাইরাস কোভিট-১৯ চৌদ্দ দিনের মধ্যে প্রকাশ পায়। শেষ দিকে কারও নমুনায় পজেটিভ এলেও পরবর্তী পরীক্ষায় নেগেটিভ হতে পারে। ইতিমধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তি যদি কাটিয়ে উঠেন। যদিও সাধারণত চৌদ্দ দিন পর দ্বিতীয় নমুনা পাঠানোর নিয়ম। স্বাস্থ্যকর্মির সংকুলতায় আক্রান্তের বিষয়টি নিশ্চিত হতে দু-তিন দিনের মধ্যেই পুনঃনমুনা পাঠিয়ে থাকি।

Similar Posts

error: Content is protected !!