নিকলীতে সুইসাইড নোট লিখে এক অভাবি পিতার আত্মহত্যা

খাইরুল মোমেন স্বপন, বিশেষ প্রতিনিধি ।।

কিশোরগঞ্জের নিকলীতে ফেইসবুক মেসেঞ্জারে সুইসাইড নোট লিখে তাহের উদ্দিন (৪৫) নামে এক ব্যক্তির আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। তিনি উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন ছাতিরচরের মধ্যপাড়া গ্রামের রমিজ উদ্দিনের পুত্র ও দুই কন্যার পিতা। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মঙ্গলবার (৫ মে) সকালে মর্গে পাঠিয়েছে।

সুইসাইড নোট ও এলাকাবাসি সূত্রে জানা যায়, তাহের উদ্দিন ২ কন্যা সন্তানের জনক। বড় কন্যার বিয়ে হয়েছে নিজ গ্রামে। স্ত্রী ও ছোট কন্যাকে নিয়ে তার সংসার। প্রায় ২ বছর যাবৎ অসুস্থ। বেকার। নিজের ভিটেবাড়িও নেই। বড় ভাইয়ের বাড়িতে বাস করেন। চরম অভাবে দিনাতিপাত করছিলেন। করোনাকালে সেই অভাব আরও তীব্র হয়ে উঠে।

সোমবার ইফতারের সময়। তাহের উদ্দিন বাড়ির অদূরে হাওরের একটি হিজল গাছে গলায় দড়ি দিয়ে ফাঁসিতে আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার পূর্বে তার ফেইসবুক মেসেঞ্জারে সুইসাইড নোট লিখেন। যেখানে লেখা রয়েছে “আমার মতো অকর্মার বেঁচে থাকিবার কোন অধিকার নাই। কাজ করিতে না পারিলে আসমান থেকে খাদ্য আসিবার কোন সিস্টেম নাই। দুনিয়াতে মানুষ বেঁচে থাকবার জন্য অনেকগুলো পথ খোলা থাকে। যখন সবগুলো পথ বন্ধ হয়ে যায় তখনই মানুষ এই ধরনের গর্হিত কাজ করে।” তিনি আরো লিখেন “বাড়ি থেকে অনেক দূর গিয়ে মরতে পারতাম। এমন জায়গায় যেতাম কেউ কোন দিন আমার লাশটিও খোঁজে পাইতোনা। বাড়ির লোকজন খোঁজাখুঁজি করে হয়রানির শিকার হতো আর টাকাও নষ্ট হতো।” ৭০ বাক্যের আবেগাপ্লুত লেখাটিতে বাঁচার নানা চেষ্টার কথা লিখা রয়েছে। নিজের অর্থ সম্পদ না থাকায় কেউ সহযোগিতা করতে রাজি হয়নি সেসব কথা হৃদয় বিগলিত করে।

তাহের উদ্দিনের সুইসাইড নোটটি ছাতিরচরসহ উপজেলাবাসির আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এলাকা জুড়ে বিরাজ করছে এক ভিন্নমাত্রার শোক।

নিকলী থানা অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মো. শামসুল আলম সিদ্দিকী জানান, খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছি। একটি ইউডি মামলা হয়েছে। সর্বোপরি মর্মান্তিক ঘটনা।

Similar Posts

error: Content is protected !!