মহাস্থানে চাকরির প্রলোভনে কলেজছাত্রী ধর্ষণ, পতিতালয়ে বিক্রির চেষ্টা

আজিজুল হক বিপুল, মহাস্থান (বগুড়া) ।।

বগুড়ার ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়ে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে কলেজছাত্রীকে আটকে রেখে ধর্ষণ। অতঃপর দালালচক্রের মাধ্যমে পতিতালয়ে বিক্রির চেষ্টা। এ ঘটনায় পুলিশ রাতেই জড়িত ৩ জনকে আটক করেছে। যৌনপল্লীর নেপথ্যে রয়েছে এলাকার মক্ষিরাণী ৩ বোন। গত ৩ বছরে এই এলাকায় ২টি খুন ও ২টি আত্মহত্যার মতো ঘটনা ঘটেছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মহাস্থানগড় পাথরপট্টি এলাকায় গত শুক্রবার (৫ জুন) গাইবান্ধা পলাশবাড়ীর নুনেগাড়ী গ্রামের আব্দুর রহমানের কন্যা গাইবান্ধা মহিলা কলেজপড়ুয়া ছাত্রী (১৭)। তাকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে একই এলাকার লায়ন নামের এক অসাধু ব্যক্তি বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মহাস্থানগড় পাথরপট্টি এলাকার কুখ্যাত দেহব্যবসায়ী মৃত আকবর হোসেনের মেয়ে শেলীর মিনি পতিতালয়ে নিয়ে এসে অসহায় এই বালিকাকে একটি কক্ষে আটকে রেখে ভয়ভীতি দেখিয়ে দিনভর ধর্ষণ করে লম্পট লায়ন।

এরপর তাকে ঘরে আটকে রেখে বাড়ির মালিক শেলী ও তার স্বামী মিঠুসহ বেশকিছু দালালচক্রের সাথে লায়ন তাকে বিক্রির জন্য দর কষাকষি করে। বিষয়টি তরুণী ঘর থেকে ওঁৎপেতে শুনে ভয়ে আঁতকে ওঠে। একপর্যায়ে বাথরুমে যাওয়ার কথা বলে কৌশলে শেলীর বাড়ির পিছনের গেট দিয়ে দৌড় দেয়। বিকালে বৃষ্টির মধ্য দিয়ে একজন তরুণীর দৌঁড়ানো দেখে স্থানীয় যুবকদের কৌতূহল জাগে। তারা ওই তরুণীকে উদ্ধার করে জানতে পারেন সে ব্ল্যাকমেইনের শিকার। তাকে কক্ষে আটকে রেখে ধর্ষণ করা হয়েছে এবং বিক্রির জন্য দরদাম চলছে। স্থানীয়রা সবকিছু শোনার পর এলাকার জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে শিবগঞ্জ থানা পুলিশকে অবহিত করে।

পরে শিবগঞ্জ থানার এসআই মোস্তাফিজ সঙ্গীয় ফোর্সসহ ভিকটিমের সাথে কথা বলে জানতে পরেন, ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে দালালদের মাধ্যমে যৌনপল্লীতে বিক্রির করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। পরে ওই ছাত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে সঙ্গে নিয়ে রাতে পুলিশ যৌনসম্রাজ্ঞী শেলীর বাড়িতে অভিযান চালায়। এসময় তার বাড়ি থেকে বর্ষা নামের আরও একজনকে আটক করা হয়। ঘটনা বেগতিক দেখে শেলী ও তার স্বামী মিঠু পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের গ্রেফতার ও ধর্ষিতা কিশোরীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

এলাকাবাসী জানায়, ঐতিহাসিক মহাস্থানগড়ের লীলাভূমিতে শায়ীত আছেন হযরত শাহ সুলতান। তার মাজারের পাশে এলাকার মাদক ও পতিতার নেপথ্যে প্রধান পাথরপট্টি এলাকার ৩ বোন শেলী রানী, মক্ষিরাণী মিলনী ও মক্ষিরাণী রেশমা। তাদের ব্যাংক ব্যালেন্স তো আছেই। শুধু পতিতা ব্যবসা করে কোটির অধিক সম্পদের পাহাড় গড়েছে। দিনের বেলা প্রকাশ্যে চলে তাদের দেহব্যবসা। করোনাকালেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পতিতা সংগ্রহ করে তারা হরদমে ব্যবসা পরিচালনা করছে। এলাকার কেউ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে তাদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা ও সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।

শেলী, মিলনী, রেশমা তো আছেই। এছাড়াও রয়েছে পাথরপট্টি শালবাগানের পাশে পারভিন আকতার পারী। পারী দেহব্যবসার পাশাপাশি গড়ে তুলেছে মাদকের স্বর্গরাজ্য। বেশকিছু দিন পূর্বে পারীর বাড়িতে শিবগঞ্জ থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে ২ পতিতা ও ১ খদ্দেরকে আটক করেছিলেন। আইনের ফাঁক গলিয়ে তাদের জেল-জরিমানা থেকে বের করে আবারও ওই দেহব্যবসা ও মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। পারীর বিরুদ্ধে রয়েছে মাদকের বেশ কয়েকটি মামলা। পারী, শেলী, মিলনী, রেশমা ছাড়াও ওই এলাকার বেশকিছু দজ্জাল নারী ও পুরুষেরা বীরদর্পে এসব অনৈতিক কার্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।

এলাকাবাসী জানান, পাথরপট্টি এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীদের তৎপরতা কম। যে কারণে এখানে দেহ ও মাদক ব্যবসা তো চলছেই গত ৩ বছরে খুন হয়েছে ২টি এবং আত্মহত্যা করেছে ২ জন। গত ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতে পাথরপট্টির প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের পরিত্যক্ত বাড়ি থেকে কথিত পতিতা মমতাজ বেগম (৩০) নামের ৩ সন্তানের জননীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গত একই বছরের ৪ মে শালবাগানে ভাড়া বাড়িতে আশ্রয় নেয় ঢাকা নারায়ণগঞ্জের আলিম উদ্দিন শাহ-এর পুত্র কাপড় ব্যবসায়ী রাজু মিয়া (২৮)। সে মহাস্থান প্রতাববাজু গ্রামের সবজি ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলামের মেয়ে শারমিন আক্তারকে (১৬) বিয়ের ৫ মাসের মাথায় গলায় ওড়না দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে রাতের আধারে পালিয়ে যায়।

জানা যায়, আজও ওই হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়নি। একই বাড়ির পাশে বিয়ের কয়েক মাস পর স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে এক যুবক। একই এলাকায় গত বছরের ৪ এপ্রিল প্রেম নিবেদনে ব্যর্থ হয়ে গ্যাস ট্যাবলেট খেয়ে মোস্তফা কামালের পুত্র মিনু মিয়ার (১৬) মৃত্যু হয়।

এ বিষয়ে ইউপি সদস্য তোফাজ্জল হোসেন তোফা জানান, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আমরা ভাল হওয়ার জন্য অনেক সুযোগ দিয়েছি। কিন্তু তারা আমাদের কথা অমান্য করে বেপরোয়াভাবে অসামাজিক কর্মকাণ্ড দিব্যি চালিয়ে যেত যা মাজার এলাকায় এ ধরনের কার্যকলাপ কাম্য নয়। তাদের শাস্তির দাবি জানাই।

এ বিষয়ে শিবগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমানের সাথে কথা বললে তিনি জানান, ভিকটিমকে উদ্ধার করে গ্রেফতার পতিতা ব্যবসায়ী শেলী তার স্বামীসহ ৩ জনকে জেলহাজতে পাঠানো হবে। অভিযুক্ত অন্যান্য ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সচেতন এলাকাবাসী প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Similar Posts

error: Content is protected !!