বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র তথ্য অনুযায়ী ২১০টি দেশে করোনা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন দেশে এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এই মহামারী অবস্থায় বিশ্বের কোটি কোটি শিশুর জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করেছে। প্রথমে এই পরিস্থিতিতে আমাদের নিজেদের সুস্থ থাকতে হবে, নিজের যত্ন নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, শিশু কিন্তু বড়দের আচরণ অনুকরণ করে থাকে। শিশুর বাবা-মা/অভিভাবক নিজেরা কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি (হাত ধোয়া, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মানা, ঘরে বন্দী থাকা) মেনে চলবে। এই কঠিন সময়ে নিজের সন্তানদের যত্ন নিতে কিছু সহজ উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে।
শিশুদেরকে আমরা ভীত হতে দেব না। তাদেরকে করোনা মহামারী সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য জানাতে হবে। তাদেরকে বলতে হবে যে, আমরা তাদের সাথেই আছি এবং তাকেও আমরা নিরাপদ রাখতে চাই। তাদেরকে জানানো যেতে পারে যে, করোনা ভাইরাস এ আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি শিশুদের সবচাইতে কম।
অন্যদের যত্ন নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া, সমাজের বাকি মানুষদের কথা চিন্তা করার মধ্য দিয়ে শিশুদের মানসিক উন্নতি ঘটানো যেতে পারে। তাদের বয়স্ক প্রতিবেশী/আত্মীয়দের ফোন করে খোঁজ নেয়া, সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের জন্য সাহায্যের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি কাজে উৎসাহ দেয়া যেতে পারে।
দীর্ঘদিন ধরেই শিশুদের স্কুল বন্ধ। তাদেরকে সৃজনশীল কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে। আমাদের ব্যস্ত জীবনে সন্তানদের সাথে গুণগত সময় কাটানোর এটি একটি বড় সুযোগ। শিশুদের সাথে খেলাধুলা করা, একসাথে বসে সিনেমা দেখা, ঘরের কাজ শেখানো, রান্না করা, গাছের যত্ন নেওয়ার মধ্যে দিয়ে শিশুদের ব্যস্ত রাখা যেতে পারে।
আমাদের সন্তানদের অনুভূতি আমাদেরই বুঝতে হবে। এই মহামারী পরিস্থিতি তাদের মানসিকভাবে কতটুকু বিপর্যস্ত করেছে তা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। তাদের প্রশ্ন করার সুযোগ দিতে হবে।
শিশুদের হাত ধোয়া, হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢেকে রাখা, হাত না পরিষ্কার করে চোখ, মুখ, নাক,স্পর্শ না করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যথাসম্ভব রুটিন মেনে খাওয়া, ঘুম, হালকা ব্যয়াম, পড়তে বসা এ কাজগুলো যেন করে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাদের মাঝে মাঝে বারান্দা বা ছাদে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। সতর্ক থাকতে হবে অন্যান্য সময়ের মত এই সময়েও স্মার্টফোন, ট্যাব, টিভি, কম্পিউটার ব্যবহার সীমিত করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে তারা যেন কোনো ভুল তথ্য না পায়।
অটিজম-এর বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশুদের হাত ধোয়া, জীবাণুনাশক ব্যবহার, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার শেখাতে গান, ছবির কার্ড, গল্প বলা, ইশারা ইত্যাদির সাহায্য নিতে হবে। তাদেরকে বিষয়টি বোঝার জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। অটিজম শিশুদের অনেকেই ধীরে শিখে। তাই তাড়াহুড়ো করা যাবে না। শিশুর স্কুল, বিশেষায়িত শিক্ষক, চিকিৎসক এবং যারা বিপদে সাহায্য করতে পারে তাদের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখতে হবে। আপনার অনুপস্থিতিতে অটিজম শিশুর জন্য অবশ্যই বিকল্প যত্নকারীর ব্যবস্থা করতে হবে।
আপনার ও আপনার শিশুর নিরাপত্তার স্বার্থে ঘরে থাকুন, ভালো থাকুন।
লেখক : ডা. সুদীপ দাশ গুপ্ত
সূত্র : নভেল করোনা ভাইরাস COVID-19 ডিজিএইচএস গাইড লাইন।
পুনঃপ্রকাশ : চ্যানেল আই অনলাইন