আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
অদৃশ্য এক শত্রু করোনাভাইরাস। এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নাস্তানাবুদ গোটা বিশ্ব। ভাইরাসের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন তৈরির জোর প্রচেষ্টা চলছে। তবে এখনও দৃশ্যত কোনো সফলতা দেখেনি মানুষ। এরই মধ্যে করোনাভাইরাস শরীরের কতটা ক্ষতি করছে বা কোন কোন অঙ্গে ক্ষতি করছে তা নিয়ে নতুন নতুন তথ্য দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। আর এর সবক’টিই আগেরটার চেয়ে ভয়াবহ তথ্য আসছে।
এই যেমন- করোনাভাইরাস মানুষের ফুসফুস, শ্বাসনালী থেকে শুরু করে শরীরের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করে, এমন প্রমাণ আগেই পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। যার মধ্যে এমনকি হৃদযন্ত্র, স্নায়ু, কিডনি এবং ত্বকও আছে। এখানেই শেষ নয়। ব্রিটিশ স্নায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনায় মস্তিষ্কেরও বড় ধরনের ক্ষতি হয়। যেসব রোগীর মৃদু লক্ষণ থাকে বা যারা সেরে ওঠেন, তাদের ক্ষেত্রেও সমস্যাটি রয়ে যায়। সেটি অনেক ক্ষেত্রে দেরিতে ধরা পড়ে বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে ধরাই পড়ে না। এই গবেষণাটি “ব্রেইন” নামের একটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের স্নায়ু বিশেষজ্ঞরা এজন্য ব্রিটেনের ৪০ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর উপর পরীক্ষা চালিয়েছেন।
আবার এমন কথাও এসেছে যে করোনায় হার্টের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হয়। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরলেও হৃদযন্ত্র ভোগাতে পারে বলেও শঙ্কার কথা জানিয়েছেন গবেষকরা। দেখে নেয়া যাক করোনা ভাইরাস শরীরের কোন কোন অঙ্গের কী ক্ষতি করতে পারে।
হৃৎপিণ্ড
বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে করোনাভাইরাসের কারণে হৃৎপিণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হৃদরোগ বা উচ্চ রক্তচাপ থাকা ব্যক্তিদের কোভিড-১৯ এ মৃত্যুর হার অনেক বেশি। কিন্তু যাদের হৃদরোগ নেই তারাও আক্রান্তের পর হৃৎপিণ্ডের পেশির কোষ মারা যায়। তবে ভাইরাসের আক্রমণে কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় নাকি ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরের তৈরি রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থার কারণে, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
ফুসফুস
কোভিড-১৯ এ ফুসফুস সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফুসফুস জটিলতাতেই বেশিরভাগ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যারা সুস্থ হয়ে ওঠেন তাদের ফুসফুসও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, সুস্থদের ফুসফুসে ঘোলাটে সাদা মেঘের মত বস্তু দেখতে পেয়েছেন চীনের গবেষকরা। যেটা ফুসফুসের স্থায়ী ক্ষতির ইঙ্গিত দেয়। ফুসফুসের এই অবস্থা হলে রক্তে অক্সিজেন পৌঁছাতে বাধা পাবে। ফুসফুস আড়ষ্ট হয়ে পড়বে এবং শ্বাসপ্রশ্বাস ছোট ও দ্রুতগতির হবে। ফলে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট এবং শুকনো কফ দেখা দেবে। ফুসফুসের কোষ একবার ক্ষতিগ্রস্ত হলে সেটা আর ঠিক হয় না।
স্নায়ুতন্ত্র
কোভিড-১৯ আক্রান্ত ৮০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে দেখা গেছে তাদের স্বাদ এবং ঘ্রাণশক্তি নষ্ট হয়ে গেছে। সংক্রমণের একেবারে শুরুর দিকেই এ উপসর্গ দেখা দেয়। সাধারণ ফ্লুর ক্ষেত্রে যেটা রোগের চূড়ান্ত পর্যায়ে হয়। ঘ্রাণশক্তি বা অলফ্যাক্টরি নার্ভ অনুনাসিক ঝিল্লি থেকে খুলির হাড়ের মাধ্যমে সরাসরি মস্তিষ্কে পৌঁছায়।
ধমনি
জুরিখের একদল প্যাথলোজিস্ট করোনায় মারা যাওয়া কয়েকজনের ময়নাতদন্ত করে দেখেছেন কারো কারো রক্তনালি এবং লাসিকা গ্রন্থি ফুলে গিয়ে সেগুলোতে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যার ফলে হৃৎপিণ্ড, কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এক সঙ্গে বিকল হয়ে মানুষ মারা যায়।
মস্তিষ্ক
মার্স এবং সার্স ভাইরাসের সময়ও মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে দেখা গেছে। নতুন করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রেও আক্রান্ত অনেকের খিচুনি এবং মৃগীরোগের চিকিৎসা দিতে হয়েছে। এ কারণেই হয়তো আক্রান্ত অনেকের মধ্যে কোনো পূর্ব লক্ষণ ছাড়াই তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায়। তবে করোনাভাইরাসের কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ার বিষয়ে এখনো পরিষ্কার কিছু জানা যায়নি।
কিডনি
কোভিড-১৯ আক্রান্ত অনেকের শরীরে মারাত্মক নিউমোনিয়ার লক্ষণ থাকে এবং ভেন্টিলেশনের প্রয়োজন হয়। ফুসফুসে জমা তরল বের করতে ওই রোগীদের যে ওষুধ দেওয়া হয় তাতে তাদের পুরো শরীর থেকে তরল বের হয়ে যায়। ফলে কিডনিতে রক্ত সরবরাহ কমে যায় এবং কিডনি ঠিক মতো কাজ করতে না পেরে অকেজো হয়ে পড়ে।
রক্তপিণ্ড
কোভিড-১৯ এ গুরুতর আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে অনেক সময় রক্ত জমাট বেধে রক্তনালি বন্ধ হয়ে যায়। এটার কারণেও অনেক সময় কিডনিতে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে এ অঙ্গটি অকেজো হয়ে পড়ে।
ত্বক
করোনাভাইরাসের কারণে মানুষের ত্বকও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের ত্বকে ক্ষত বা র্যাশ সৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। রক্ত জমাট বাধার কারণে ত্বকের নিচে এ ধরনের র্যাশ দেখা যায়।
সূত্র : ডয়চে ভেলে।