ধানের রোগ সারাতে মিষ্টি আলু

কৃষিবিদ মৃত্যুঞ্জয় রায় ।।

মিষ্টি আলু আমাদের এক অতি পরিচিত মাঠ ফসল। লতানো এ গাছ চরাঞ্চল ও বেলে প্রকৃতির মাটিতে খুব হয়। বহুবর্ষজীবি গাছ, একবার লাগালে সহজে মরতে চায় না। মাটির উপর দিয়ে লতিয়ে লতিয়ে বাড়তে থাকে। পাতার আকৃতি অনেকটা কলমী শাকের মতো, হৃৎপিণ্ডাকার, পাতার অগ্রভাগ সূঁচাল, ত্রিকোণাকার। জাতভেদে পাতা ও লতার রঙ সবুজ থেকে লালচে হয়। শিকড় থেকে মাটির নিচে আলু হয় যা আমরা খাই। মিষ্টি আলুর উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Ipomea batatus, পরিবার কনভলভুলেসী। চির পরিচিত এই মিষ্টি আলু গাছকেও অন্য ফসলের বালাই দমনে ব্যবহার করা সম্ভব হয়েছে বলে জানা গেছে। এ গাছ দিয়ে তেমন কোন পোকা মারা যায় না বটে, তবে ফসলের প্রধান ক্ষতিকর কিছু ছত্রাক জীবাণুকে ধ্বংস করা যায়। ফলে সেসব ফসলে আর রোগ হয় না। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে মিষ্টি আলু ছত্রাকনাশক হিসেবে কাজ করে।

তৈরির পদ্ধতি ও ব্যবহার
মিষ্টি আলুর পাতা থেকে বালাইনাশক তৈরি করা যায়। তৈরির পদ্ধতিও খুব সহজ। কাঁচা পাতা ছিঁড়ে শিল পাটায় পিষে তা পানির সাথে মিশাতে হবে। দ্রবণ পাতলা কাপড় দিয়ে ছেঁকে রোগাক্রান্ত ধান ক্ষেতে স্প্রে করতে হবে। তবে প্রতি স্প্রে মেশিন পানির জন্য ঠিক কতটুকু কাঁচা পাতা বেটে মিশাতে হবে তা জানা যায়নি। এ বিষয়ে কৃষক ভাইয়েরা বিভিন্ন পরিমাণে মিশিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। তবে আর এক পরীক্ষায় জানা গেছে, মিষ্টি আলু সিদ্ধ করে তা চটকে পানির সাথে মাড়ের মতো মিশিয়ে স্প্রে করলে যেসব পোকা কম হাঁটাচলা করে যেমন জাব পোকা, তাদের বংশ কমে যায়।

যেসব বালাই নিয়ন্ত্রণ করা যায়
মিষ্টি আলু পাতার রসে রয়েছে মূলত ছত্রাকনাশকের গুণ। খুব বেশি পরীক্ষা-নীরিক্ষা না হলেও এ পর্যন্ত অন্ততঃ ধানের বাদামী দাগ রোগ ও ধানের ব্লাস্ট রোগ দমনে এর কার্যকারিতার কথা জানা গেছে। সীমিত আকারে বা অল্প জায়গায় যেমন বীজতলায় এটি ব্যবহার করে সুফল পাওয়া যেতে পারে। মাঠেও ব্যবহার করে দেখা যেতে পারে।

সতর্কতা
মিষ্টি আলু আমরা খাওয়ার জন্যই লাগাই, বালাইনাশক তৈরির জন্য নয়। তাই, বালাইনাশক তৈরির জন্য পাতা তুলতে গিয়ে ফসলের যেন কোনো ক্ষতি না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাই ব্যাপক আকারে এ পদ্ধতি ব্যবহারের সুযোগ নেই।

Similar Posts

error: Content is protected !!