বিশেষ প্রতিনিধি ।।
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায় ব্রিজের নিচ থেকে রেদওয়ান আহম্মেদ খান লিজন (২৮) নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। উপজেলার জয়কা ইউনিয়নের কিশোরগঞ্জ-মরিচখালী সড়কের পানাহার গ্রামের সামনে মাদলের ব্রিজের নিচ থেকে শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।
লিজন খান গুনধর গ্রামের মরহুম আমিনুল ইসলাম খান ওরফে আমিন মিয়ার ছেলে। তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট এবং অবিবাহিত।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সকালে মাদলের ব্রিজের নিচে যুবকের লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন করিমগঞ্জ থানা-পুলিশে খবর দেন। পুলিশ সেখানে গিয়ে পরনে লুঙ্গি, গায়ে নীল রঙের পলো শার্ট পরা অবস্থায় থাকা লিজনের মরদেহটি উদ্ধার করে।
এ সময় পুলিশ মরদেহের পাশ থেকে কয়েক জোড়া স্যান্ডেল, প্লাস্টিকের (কোল্ড ড্রিংসের) তিনটি বোতল ও একটি মোবাইল সেট পায়। বোতল তিনটির মধ্যে একটি খালি, একটিতে পানি, আরেকটিতে অর্ধেক কোল্ডড্রিংস ছিল। উদ্ধারকৃত মোবাইল সেটটি লিজন খানের বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মৃতের মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। বুকের অনেকাংশ ও পেটের চামড়ার নিচে কালো নীল হয়ে রক্ত জমাটবাঁধা অবস্থায় ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পরিবারের লোকজন জানায়, লিজন খান ঢাকার নাবাবগঞ্জে একটি জুতার কারখানায় চাকরি করতেন। বৃহস্পতিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তিনি ঢাকা থেকে বাড়িতে আসেন।
লিজনের বড় বোন মিশন ও মা রুবিয়া আক্তার জানান, ঢাকা থেকে এসে বন্ধুবান্ধবদের সাথে ঘোরাঘুরি করে রাত দশটার দিকে বাড়ির বাংলো ঘরে লিজন ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘুমানোর ১০ থেকে ২০ মিনিট পর কে বা কারা আবার ফোন করে তাকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়।
মা রুবিয়া আক্তার বলেন, ‘সকাল সাতটার দিকে বাংলো ঘরে গিয়ে দেখি লিজন নাই। ভেবেছি রাতে গিয়ে কোনো বন্ধুর বাড়িতে হয়তো ঘুমিয়েছে। এর মধ্যেই প্রতিবেশিদের মাধ্যমে খবর পাই জয়কার মাদলের ব্রিজের নিচে এক যুবকের লাশ পড়ে আছে। কিছুক্ষণ পর খবর পাই ব্রিজের নিচের যে লাশ, এই লাশ আমার লিজনের।’
লিজনের বোন মিশন বলেন, ‘আমার ভাইয়ের কারো সাথে ঝগড়া বিবাদ ছিল না। রাতে আমার ভাইরে ফোন কইরা নিয়া গিয়া মাইরা ফালাইছে। পুলিশ ওই ফোন চেক করলেই পাইবো কেডা তারে নিছে। আমরার ধারণা তার বন্ধুবান্ধবদের কেউ তারে মারছে।‘
করিমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এখনো ধারণা করতে পারছি না এটা হত্যা নাকি অপমৃত্যু। লাশের আশপাশ থেকে তিনটি বোতলের মধ্যে যে খালি বোতলটি পাওয়া গেছে এটি শুঁকে কীটনাশক বা এরকম কিছুর গন্ধ পাওয়া গেছে। বুকে, পেটে যে কালো দাগ হয়ে আছে, বজ্রপাতের আঘাতের মতো মনে হচ্ছে। মাথার আঘাতটি ইটের আঘাতের মতো মনে হচ্ছে।’
তবে ব্রিজের পাশের বাড়ির লোকজনকে জিজ্ঞেস করা হলে তারা বলেন, রাতে এ এলাকায় কোনো বজ্রপাতের ঘটনা ঘটেনি।
দুপুর সোয়া ১টার দিকে ওসি বলেন, ‘ময়নাতদন্তের জন্য লাশটি কিশোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। এটি হত্যাকাণ্ড না অন্য কিছু তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’