শিলুক
হাওরপাড়ের সংস্কৃতিতে বিশাল একটি জায়গা দখল করে আছে হাওরপাড়ের শিলুক। আঞ্চলিক উচ্চারণ বলা হয় “ইলুক”। তবে আরো একটু শুদ্ধ করে যদি বলতে চাই সেটাকে বলা হয় ধাঁধা। এ ধাঁধা শব্দটি সবার কাছেই পরিচিত। আজকে আমরা শিলুক হিসাবেই আলোচনা করবো।
আমরা এই শিলুকগুলো পাঠ করলে জানতে পারবো হাওরপাড়ের মানুষের সরলতা, সহজলভ্যতা, আনন্দ-বেদনা এবং উৎসবগাঁথা। এই শিলুক যে শুধু প্রশ্ন-উত্তর পর্ব তাই নয়। এর মাঝে লুকিয়ে থাকে হাওরের মানুষের না-বলা কিছু কথা। এমন একটি হাওরপাড়ের শিলুক নাট্যকার বদরুজ্জামান আলমগীর তার “পানিবালা” নাটকে সুন্দরভাবে ব্যবহার করেছেন। যেমন:-
তিন তেরো দিয়া বারো
নয় দে আইন্না পূরণ করো
আমার জামাইর এই নাম
(পার কইরা দেও বাড়ি যাম)
এই শিলুক মূলত কোনো ঘটনা থেকে হাওরপাড়ের মানুষ তৈরি করে থাকে। বিশেষ করে এগুলো উপস্থিত বুদ্ধির মাধ্যমে তৈরি হয়। মূলত অলস সময়গুলোতে অর্থাৎ যখন হাওরপাড়ের মানুষের কোনো কাজ থাকে না, তখন তারা এই ধরনের শিলুক বাঁধে। এগুলো একজন পয়ারে বাঁধে, অন্য একজন উত্তর করে।
সংগৃহীত কিছু শিলুক নিচে দেওয়া হল:-
ধরে নিন আপনাকে বাজার করার জন্য আপনার বাবা আপনাকে ২০ টাকা দিলেন। এই ২০ টাকা দিয়ে আপনাকে- ১. মরিচ, ২. পেঁয়াজ, ৩. লবণ। এই তিন প্রকারের জিনিস কিনতে হবে। এখন কথা হচ্ছে ২০ টাকার মধ্যে ২০ কেজি মালামাল আপনাকে ক্রয় করতে হবে। কিন্তু উক্ত মালামাল নির্দিষ্ট একটি দামের মধ্যে কিনতে হবে। দামগুলো এমন- ১. মরিচ ২০ টাকা কেজি। ২. পেঁয়াজ ১ টাকা কেজি। ৩. লবণ ২৫ পয়সা কেজি।
আপনি চাইলেও কম বা বেশি দরে কিনতে পারবেন না। এই নির্দিষ্ট দামের ভেতরেই ২০ টাকা দিয়ে ২০ কেজি মাল আপনাকে ক্রয় করতে হবে। এই ধাধার উত্তর কি, আপনাদেরকে জানাবো ২৩তম পর্বে। আর যারা পারেন তারা কমেন্টে জানিয়ে দিবেন।
১. মধ্য গাঙে তাল গাছ,
ভ্রমরা করছে বাসা
কেউ খায় কেউ চুই
কেউ করে আশা।
উত্তর : হুক্কা
২. জংলাতে আইছে ভুইত্যা
পাতে দেয় মুইত্যা।
উত্তর : লেবু
৩. মায়ের পেটে জন্ম
মায়ের মাংস খায়
মাটিতে হেঁটে
ছয় পায়ে যায়।
উত্তর : আমের পোকা
৪. জেলার ভুইত্যা
পাত দেয় মুইত্যা।
উত্তর : লেবু
৫. একটা ভাই ডালে,
আরেক ভাই খালে
দুই ভাই দেখা হয়
মরণের কালে।
উত্তর : লেবু, পোনা
৬. জংলাতে আইছে বুড়ী
চোখ তার আঠারো কুড়ি।
উত্তর : আনারস
৭. গলা আছে তলা নাই
পেট আছে উজুড়ি নাই
উত্তর : পলো
৮. হাতা আছে গলা নাই
বুক ফারা তার পাও নাই।
উত্তর : জামা
৯. আছুমুছি বেডাডা অছুমদ্দিন নাম
ধানের ফুজা লইয়া যা বাড়িতে যবর কাম।
উত্তর : পিঁপড়া
১০. কুক পক্ষীরাজ বুক টান
কোন পক্ষীর চার কান।
উত্তর : চেয়ার
১১. চামড়ার বন্দুক হাওয়ার গুলি
মারে ঠ্যাঙ সই, যায় নাক সই।
উত্তর : পাদ
১২. ঘরের মধ্যে গাতা
সবে মিলে আতা
উত্তর : চুনের টুলি
১৩. উঠতুম গুজার
খুরে মাটি
ছয়টা চোখ
তিনটা পুটকি।
উত্তর : হাল চাষ
১৪. লোর সন্দুক বেতের থালা
এ-ই শিলুক যে না ভাঙ্গাইতে পারে
সে অইলো নাপিতের শালা
উত্তর : নারিকেল
১৫. অডল পুটকি মডেল পুটকি
মাটিতে পুটকি হাটুত পুটকি
উত্তর : গাই দোহন করা
১৬. লোহার দোনা যথই নেই ততই দে।
উত্তর : পানির কল
১৭. অজগর সমুদর
পথে পথে থামে
হাজার হাজার মানুষ খাইয়া
পুটকি দিয়ে ছাড়ে।
উত্তর : রেল গাড়ি
১৮. এক বেডা আফিজ (হাফিজ)
গলা ভরা তাবিজ।
উত্তর : সুপারী গাছ
১৯. আইনদার ঘরে বান্দর লড়ে
না হরলে আরও বেশি লড়ে।
উত্তর : জিহ্বা
২০. এড়ো বলদ তেরো শিং
চলছে বলদ গাদলা দিন।
উত্তর : শামুক
২১. উপরেতে নামে টিয়া
সোনার মুকুট মাথায় দিয়া
ক ছে রে বাইন্যা জি
এ শিলুকের মূল্য কি?
উত্তর : তাল
২২. আসমানেতে নামছে বুড়ি
ঝুলি-ঝালা লইয়া
সেই বুড়ি কথা কয়
মসজিদে বইয়া।
উত্তর : কুরআন শরীফ
২৩. তুমি থাকো জলে
আমি থাকি ডালে
তোমার আমার দেখা হবে
মরণের কালে।
উত্তর : মাছ ও লেবু
২৪. এমুন একটা খাদ্য সর্বলোকে খায়
ছুডু মানুষ খাইলে পরে কান্দিয়া বেড়ায়
বুড়া মানুষ খাইলে পরে বুকে ব্যথা পায়
জুয়ান মানুষ খাইলে পরে এমনি এমনি চায়।
উত্তর : আছাড়
২৫. দেয় দেয় দেয় না
না দিয়া হুতেনা।
উত্তর : ঘরের দরজা
২৬. কানার উপরে কানা
তার উপরের সোনা
উত্তর : নাকফুল
২৭. এক দ্যাশঅ দ্যাইখ্যা আইছি
অনুমানের ছানি
আরেক দ্যাশঅ দেইখ্যা আইছি
গাছের আগাত ফানি ।
উত্তর : ডাব
২৮. অষ্টচরণ, ষোল হাঁটু
খাবার ধরতে চলে গোলাটু
শুকনা ডাঙ্গায় পাতে জাল
তাতে খাবার খায়, চিরকাল।
উত্তর : মাকড়সা
২৯. বিয়া হইল না বাপের
আড়াই হাত মোছ হলো ছেলের
কও দেখি ভাই, কেবা পারো
ঘুরে যায় মাথা পণ্ডিতেরও।
উত্তর : রসুন
৩০. জঙ্গলবাড়ি হতে বাহির হইল টিয়া
সোনার পুটুলি মাথায় দিয়া।
উত্তর : কলাগাছ
৩১. হাতে লইয়া হাতে থাপা দিলে
বাদ্য বাজে টেম্ টেম
অ-মিয়া, দাম কত দেম।
উত্তর : মাটির পাতিল
৩২. একটুখানি পুষ্টুনি খান
কইয়ে ভূর ভূর করে
রাজা আইলে প্রজা আইলে
সবাই তুইল্যা সালাম করে।
উত্তর : হুক্কা
৩৩. দুই ঠ্যাং ফাগাইয়া
মাইজখানঅ লাগাইয়া
ফরিংয়ের রাজায় কয়
যাঁতা দিলে সিদ্ধি অয়।
উত্তর : সুপারি কাটার চরতা বা যন্ত্র
৩৪. যাঁতার উপরে যাতা
আড়ুর উপরে ভর।
কমরে কমরে লাগাইয়্যা
গলার মধ্যে ধর।
উত্তর : জল ভরা কলস
৩৫. আত্তির দাত ময়ুরের পাখ
এই শিলুক না ভাঙ্গাইতে পারলে
গাধার জাত।
উত্তর : মূলা
৩৬. পানির তলে চিতল মাছ
কাটতে কাটতে বারো মাস।
উত্তর : ছায়া
৩৭. জংলাত্তে আইছে হরিণ
প্যাড কাডা তার লেঙ্গুরঅ গাবিন।
উত্তর : পিপড়া
৩৮. থালি ঝনঝন, থালি ঝনঝন
থালি নিছে চুরে, বিন্নাডি আগুন লাগছে
কে জিমাইতে পারে।
উত্তর : রোদ
৩৯. এক জাত গেলাসে দুই জাত পানি,
আমি তারে উস্তাদ মানি।
উত্তর : ডিম
৪০. থাহুম থুহুম গাছটা, থাহুম গুডা ধরে,
এগারসিন্দুর বইয়া রইছে, থাহুম গাছের তলে।
উত্তর : বেগুন
৪১. উপুর উজুর থহবহ, নিচ উজুর ধেয়ান,
এই শিলুক যে না ভাঙ্গাইতে পারে
সে বড় সেয়ান।
উত্তর : কলার ছড়ি
৪২. ভাঙ্গা ঘরঅ ফহির নাছে,
কোন ফহিরের আহল আছে।
উত্তর : মাকড়শা
৪৩. গাঙ্গের পাড়অ মন গাছ,ঘন ঘন কাঁডা,
এই শিলুক যে না ভাঙ্গাইতে পারে,
হে উত্তরের পাঁডা।
উত্তর : কাঁঠাল
৪৪. উপরে কালা ভিতরে ভালা,
আনাচাফি লাগায় তালা।
উত্তর : শামুক
৪৫. অত বড় দোয়ারটা হুরুইয়া নাই
এত ফুল ফুইট্যা রইছে তুলুইয়া নাই।
উত্তর : আকাশ
৪৬. হাঁছামুছি পক্ষীডা লাল ধান খায়,
লেঙ্গুরঅ পাড়া দিলে উইক্কা উইক্কা যায়।
উত্তর : ঢেঁকি
৪৭. উপরে সবুজ ভিতরে লাল,
তার মইধ্যে কালা মাল।
উত্তর : পেঁপে
৪৮. ঘরের ভিতরে ঘর,
আত বাড়াইয়া ধর।
উত্তর : মশারী
৪৯. আইলে দিয়া আঁইট্যা যায়,
লেঙ্গুর দিয়া ঘাস খায়।
উত্তর : সুঁই
৫০. না জাইন্যা খাই
খাইয়্যা করি হায় হায়।
উত্তর : আছাড়
৫১. উড়ে যায় পাখি,
তারে আমি ডাকি,
কোন গাছের কোন ফল
রক্তে টলমল।
উত্তর : জাম
৫২. আসমান জুইড়্যা বাঘের পাড়া
ষাইট গরু দিয়া জুড়ছে মারা,
যদি গরু গইর লয়,
আঁশ ফালাইয়া বাহল লয়।
উত্তর : পাটশোলা
৫৩. এক থাল সুপারি
গঅনতে লাগে বেপারী।
উত্তর : আকাশের তারা
৫৪. আত্তির দাত
কদমের পাঁদ,
এই শিলুক যে না ভাঙ্গাইতে পারে
হে গাধার জাত।
উত্তর : মূলা
৫৫. সাগরেতে জন্ম আমার
নগরেতে বাসা
সাগরেতে গেলে আমার
মরণ সর্বনাশা।
উত্তর : লবণ।
৫৬. ইডা দিলে ভাঙ্গে না,
টিপের ভর লয়না।
উত্তর : ভাত
৫৭. আমার সোনার বাংলা,
তুমি কেরে ভাংলা,
আমি একটা চিমুট দিলাম,
তুমি ক্যারে কানলা।
উত্তর : মৌমাছি/বোলতার চাক
৫৮. আমারও নাই তোমারও নাই,
আমারও আছে তোমারও আছে।
উত্তর : নাভি
৫৯. উপরে টনটন ভিতরে প্যাঁক,
বুদ্ধি থাকলে ভাইঙ্গা দ্যাখ।
উত্তর : বেল
৬০. দেড় আত লাম্বা গাছটা,
নব্বই আঙুল পাতাডা,
বছরে একটা ফল ধরে,
বাজারে তা কবুল করে।
উত্তর : আনারস
৬১. টুইল্যার গুজা
মাতাত পুঝা।
উত্তর : খৈ
৬২. চৈত মাইয়া আহালে
লাম্বা আলু কপালে
কই গেলেরে পুলাপান
বদনা ভইরা পানি আন।
উত্তর : মিষ্টি আলু
৬৩. পানহা চুলি কদম তুলি
ডুব দিয়া ডুব টেহা তুলি।
উত্তর : আঁশ খসানোর জন্য পানির নিচ থেকে পঁচা পাটগাছ উত্তোলন
৬৪. আস্তে আস্তে যাঁতা দিলে,
ইশ্ ইশ্ করে,
ব্যাকটা যহন ঢুইক্যা পড়ে, মুহে আসি মারে।
উত্তর : মেয়েদের হাতে চুড়ি পরানো
৬৫. উত্তরে চিলের বাসা
কোন গাছের ফলডা কাঁচা।
উত্তর : আলু।
৬৬. গাছের উপর ফল
ফলের উপর গাছ।
উত্তর : আনারস
৬৭. একটিন গাছে সেপটিন ধরে
রাইত পোয়াইতে ভাইঙ্গা পড়ে।
উত্তর : বাজার
৬৮. এনতে মারলাম লাডি
লাডি গেল বিন্নাডি
বিন্নাডির বড়ভাই সাত গাঙ্গে ঠাঁয় পাই।
উত্তর : কচুরিপানা
উপরিউক্ত শিলুকগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে কিশোরগঞ্জ জেলার নিকলী উপজেলা কুর্শা গ্রামের কবি ও সাংবাদিক সিদ্দিকুর রহমান আনারের (৬৫) কাছ থেকে। তিনি পেশায় একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং একজন হোমিও ডাক্তার।
৬৯. ঘর আছে দরজা নাই
মানুষ আছে রাও নাই।
উত্তর : কবর
৭০. গাইয়ে ভাঙ্গে নলখাগড়া
বাছুরে ভাঙ্গে আইল,
ছয় মাস আগে গাই ফিরাইসে
বাছুর অইসে কাইল।
উত্তর : কচ্ছপের ডিম ফোঁটা
৭১. ওরে ভাই উনা
দুই পায়ে যাইতে দেখসস তিন জনা?
উত্তর : ছেলে কোলে গর্ভবতী মা
৭২. আসমান থাইক্কা নামলো বুড়ি
তেনা তুনা লইয়া,
ছন ক্ষেতে নামায পড়ে,
আল্লা হকবার কইয়া।
উত্তর : বজ্রপাত
৭৩. ছোট খাট পুস্কনী কইয়ে গুড়গুড় করে,
রাজা আয়ে বাদশা আয়ে তুইল্লা সালাম করে।
উত্তর : হুকা
৭৪. তুমি ডাক যারে
সে নাই ঘরে
তোমার শ্বশুর বিয়ে করেছে।
আমার শাশুড়ি মারে।
উত্তর : জামাই ও শ্যালকের বউ
৭৫. শাখাহাতি ছোলাদাতি
পোলা দোয়াছ কার নাতি?
পোলার বাপ যার শ্বশুর
তার বাপ আমার শ্বশুর
উত্তর : ভাই ও বোন
৭৬. একটি গাছে যদি এক ঝাঁক পাখি জোড়া জোড়া করে বসতে চায়- তখন একটি ডাল খালি থাকে। আর যদি পাখিগুলি একা একা বসতে চায় তখন একটি পাখি উড়ালে থাকে। কয়টি পাখি ও কয়টি ডাল?
উত্তর : ৪টি পাখি ও ৩টি ডাল
৭৭. চিড়ার সের পয়সা পয়সা, গুড়ের সের তিন পয়সা, আগে গেলে আগে পাবেন, চিনির সের ছ’আনা, আড়াই সের কিন ভাই, চার আনায় কতটুকু পাবেন।
উত্তর : ১ সের চিড়া, ১ সের গুড় ও আধা সের চিনি
৭৮. এক বেটি উনি
তার তিন বুনি।
উত্তর : চুলা
৭৯. এক বেটির বুনি নাই
পুলাপানের সীমা নাই।
উত্তর : বাচ্চাওয়ালা মুরগী
৮০. গাঁয়ের নাম কালিয়াজিরা
মধ্যে দিয়া খাল
বাপ পুতে বায়রা
মায়ে-ঝিয়ে জাল।
উত্তর : রান্নারত মা ও মেয়ে
৮১. একটা জীবের পাঁচচল্লিশটা নাম।
উত্তর : পাঁচকড়ি পাকো
৮২. আমার একডা খাসি আছে
বট পাতা খায়
নির ধরইরা টিপ মারলে উইক্যা উইক্যা
উত্তর : পেঁকি
৮৩. লেড়বেড় ছ্যাপ দেয় খাড়া হয়/ টিপ দেওয়া হামায়া দেই।
উত্তর : সুঁই-সুতা
৮৪. রাত হইলে আগৃগুয়া
দিন হইলে বাইট্যা।
উত্তর : দরজা
৮৫. মাইয়া আসিল নারীর পেটে
আমি গেছলাম চিরাং এর হাটে।
উত্তর : থরুয়া(কলার মোচাল)
৮৬. কালো বন তলে
কালো হরিণ চলে।
উত্তর : উকুন
৮৭. মামুদের বাড়ি গেলাম
দেউড়িতে মুছিয়া দিলাম।
উত্তর : নাকের বিষ্ঠা
৮৮. পথে-ঘাটে দেখছি যারে
বুঝি না তার কথা
কাটলে মাথায়, বুঝায় বুলি
কেমন ধারার প্রথা।
উত্তর : কাবুলিওয়ালা
৮৯. কখন বাঁচে কখন মরে, সর্ব অঙ্গ গোল বুকের ভেতর বুড়ির বাসা রূপেতে অতুল। কয় কবি কঙ্কন হিঁলিয়ার লেখা দিনে থাকে লুকাইয়া, রাত্রিতে দেয় দেখা।
উত্তর : চাঁদ
৯০. বুকে খায় পিঠে লেদায়
তারে কোন জন্তু বলা যায়।
কয় কবি কঙ্কন হিঁলিয়ার ছন্দ
মূর্খে ভাঙ্গাইব থাউক পণ্ডিতের লাগে ধন্দ।
উত্তর : মিস্ত্রি রান্দা
৯১. আসলাম মাডির তলে, তুলসে কৈ করে
ছুঁইলে আমারে খায়ালবাম তোমারে।
উত্তর : কেঁচোর টোপ
৯২. গেছিলাম কাজে
কৈনা লাজে
সাদা সাদা দাগ পড়ছে
দুই উরাতের মাঝে।
উত্তর : চুরি করে দুনা উরুতে নিয়ে গাভী দোহনকালে উরুতে দুধের চিহ্ন
৯৩. মাপে ঝুঁকে দুই বুনি
দেখছ নি যাইতাছে উনি,
পিঠে কইরা নেয় জোড়ে
আজব কথা কই কারে।
উত্তর : খড়ম
৯৪. ছির ছির পাতা
মির মির ডাল
দেখিতে সুন্দর
ভিতরে লাল।
উত্তর : ডালিম
৯৫. হাত নাই পা নাই পেটটা কেবল সার
সারা জনমে একবার করেছে আহার।
উত্তর : বালিশ
৯৬. অর্থের লোভে তার যত পারে নেয়।
আবার চাইলে সব অর্থ ফেরত দেয়।
উত্তর : ব্যাংক
৯৭. সমুদ্রে জন্ম আমার থাকি সবার ঘরে।
একটু পানির পরশ পেলে তখন যাই মরে।
উত্তর : লবণ
৯৮. দেখিতে গালে গা।
পেটের ভিতর হাত পা
চলে কিন্তু নড়ে না।
এটা কি তা বল না।
উত্তর : ঘড়ি
৯৯. লতা নয়, পাতা নয়, তবু লতিয়ে লতিয়ে যায়
সর্ব অঙ্গ ছেড়ে শুধু চক্ষু দুইটি খায়।
উত্তর : ধুয়া
১০০. ডাল নেই, পালা নেই, আছে শুধু পাতা
নাক নেই, মুখ নেই, কয় তবু কথা।
উত্তর : বই
১০১. অকুল সমুদ্রে মেরু, জল তাতে নাই
রাশি রাশি স্থলভাগ, ঘর-বাড়ি নাই।
উত্তর : মানচিত্র
১০২. এপাড়ে শোয়া শিয়াল
ঐ পাড়ে শোয়া শিয়াল কটি শিয়াল।
উত্তর : ২টি
১০৩. সাগরে জন্ম নয়, জন্ম হইলে খালে
এমন আশ্চর্য বস্তু পরিয়ে সকলে
রাশির মিনতি হলে টপকে উঠে গালে।
উত্তর : জুতা
১০৪. পা, পিষ্ঠ, মাথাটা, কুড়ি আঙ্গুল তার নাকটা
চক্ষু কর্ণ নাই তার এ কোন জীব?
উত্তর : মানুষ
১০৫. কালা কালা বকরি কালা ঘাস খায়
আলে ঠোট মুছে গর্তে ঢুকে যায়।
উত্তর : ক্ষুর
১০৬. ২৬ এর ১১, হাতে আছে ৯, যদি ১৯কে ২ বার পড়ো, তাহলে কি হয়?
উত্তর : kiss
১০৭. উত্তর বন কোনাকুনি
সাত ছিলের বাসা
অইগ্গে তর রাজারটে
কোন ফলডা কাঁচা।
উত্তর : মিষ্টি আলু
উপরিউক্ত তথ্যগুলো নেত্রকোনা সদর, সাতপাই থেকে সংগ্রহ করেছেন আমার সহায়তাকারী শেখ শরিফুন্নাহার পূণ্য। তিনি শেখ হারুন উর রশিদের ছেলে শেখ এ কে এম শহীদুল ইসলামের (৫৭) কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
১০৮. হুইত্তা রইছি আতাস কেরে,
হামাইয়া দিলে কান্দস কেরে।
উত্তর : শিং মাছ
১০৯. জলে কুমকুম পানিতে ভাসে,
হাড্ডি নাই তার মাংস আছে।
উত্তর : জোঁক
১১০. একয়া যে শয়তান, নাকের উপর বঅইয়্যা ধরে তার দুই কান।
উত্তর : চশমা
১১১. আল্লাহর কি কুদরুত,
পুটকির মধ্যে বিদ্যুৎ।
উত্তর : ঝিঝি পোকা
১১২. আন্ধার ঘরে বান্দর নাচে
কইলে আরো বেশি নাচে।
উত্তর : জিহ্বা
১১৩. উন্দা রইছে ধুন্দা অইয়া,বৈরাগী রইছে চাইয়া
গাছের গুডা গাছঅ রইছে, কষ পড়ে তার বাইয়া।
উত্তর : কলার থোর
১১৪. গাছঅ থাহে গাউচ্ছা
পানির তলে মাউচ্ছা
দলের তলে খুজুরি
তেনেডা হাঞ্জুরি।
উত্তর : জোঁক
১১৫. খায় মধুর চাক
ফালায় ফুলের চাক।
উত্তর : আঁখ/ইক্ষু
১১৬. আখি নাই পাখিও নাই
ধরবার নাই লইব্যা
টিন টুহা দিয়া করি
আল্লাহু আকবর কইয়া।
উত্তর : ডিম
১১৭. এই পাড়ে ঢেউ
হেই পাড়েও ঢেউ,
মাইজ গাঙঅ বইয়া রইছে
গনঙ্গা রাজার বউ।
উত্তর : শাপলা ফুল/চোখ
১১৮. এক বেডা হাউদ,
গতর ভরা দাউদ।
উত্তর : আনারস
১১৯. একটা গাছঅ পাঁচটা ডাইল
ডাইলঅ ডাইলঅ টিন লাগাইল।
উত্তর : হাতের নখ
১২০. উরিতে ঝম ঝম খুরিতে ঠাণ্ডা
আধার খাইতে যায় লেঙ্গুরঅ বান্দা।
উত্তর : ঝাঁকি জাল
১২১. মাডির পাতিল, কাডের গাই
গলা কাইট্যা দুধ দোয়াই।
উত্তর : খেজুরের রস
১২২. কালো বনের তলে
কালো হরিন দৌড়ে,
দুইজনে ধরে
পটাস কইরা মারে।
উত্তর : উকুন
১২৩. কান্দার উপর কান্দা
লাল কাপড় দিয়া বান্দা।
উত্তর : কলার মোচা/থোর।
১২৪. খুজি যারে পাই না তারে
পাইলে তারে নেই না ঘড়ে।
উত্তর : রাস্তা।
১২৫. ঠেইল্লা দিলে মেইল্লা যায়
ভরতে গেলে আরাম পায়।
উত্তর : ছাতা
১২৬. গুজা আডে
ভাবি পাবে।
উত্তর : লাঙ্গল
১২৭. আলাল উদ্দির বাড়ির পিছে
জালালউদ্দিন গাছ
ফুল নাই, কড়া নাই
ধরছে বারো মাস।
উত্তর : পান
১২৮. ঘরটা কুডা কুডা
দরকার ষল্লো কুঠার
ওরে কামাল ভাই
তর ঘরের বান নাই।
উত্তর : মরিচ বাটার পাটা
উপরিউক্ত তথ্যগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে নিকলী উপজেলা জারইতলা ইউনিয়ন দক্ষিণ ধারীশ্বর গ্রামের মোঃ শহর আলীর কাছ থেকে।
সহযোগিতায় : শেখ শরিফুন্নাহার পূণ্য।
সংগ্রহ সূত্র : সিদ্দিকুর রহমান আনার (কবি ও সাংবাদিক, নিকলী উপজেলা, কুর্শা গ্রাম); শেখ এ কে এম শহীদুল ইসলাম (নেত্রকোনা সদর, বয়স ৫৭, সমাজ কর্মী); শহর আলী (নিকলী উপজেলার জারইতলা ইউনিয়ন, দক্ষিণ ধারীশ্বর (কৃষক)।