কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) সংবাদদাতা ।।
নির্বাচনের আর মাত্র কয়েকদিন বাকী। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী নিয়ে এলাকার ভোটারদের মধ্যে চলছে এখন ভোটের হিসাব-নিকাশ। অন্যদিকে নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে বিপাকে পড়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা।
উপজেলার নয়টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ হবে ৩১ মার্চ বৃহস্পতিবার। নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার পর দলীয় মনোনয়নের জন্য প্রথম দফা লড়াই শেষে দলীয় মনোনীত প্রার্থীরা চূড়ান্ত লড়াইয়ে মাঠে নেমেছেন। পাশাপাশি নির্বাচনী কৌশল নিয়ে উভয় দলের মধ্যে চলছে দফায় দফায় বৈঠক। বৈঠকে বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে উভয় দলের মধ্যে আলোচনা পর্যালোচনা চলছে। কিন্তু শত চেষ্টা করেও বিদ্রোহীদের থামানো যায়নি বলে জানিয়েছেন উভয় দলের নেতাকর্মীরা।
গত ডিসেম্বরের অনুষ্ঠিতব্য পৌরসভা নির্বাচনে সরকারদলীয় প্রার্থীদের বিজয়ের পাল্লা ভারি হয়েছে দেখে ইউপি নির্বাচনেও আ’লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে প্রার্থীদের নির্ঘুম ছিল। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে আ‘লীগ ও বিএনপি দু দলেরই রয়েছে মনোনয়ন বঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী। নির্বাচনে জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা ও ব্যক্তি ইমেজকে পুঁজি করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ফলে বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী নিয়ে উভয় দলের মনোনীত প্রার্থীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তদের জয়-পরাজয়ের হিসাব-নিকাশ বদলে যেতে পারে। দলীয় মনোনয়নকে একটি ভোট ব্যাংক হিসাব করে বিজয়ের ছক আঁকলেও বিদ্রোহী প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা দলীয় ভোট ব্যাংকে চির ধরাতে পারে এমনটিই বলছেন এলাকার ভোটাররা। উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের মধ্যে মাত্র দু‘টি ইউনিয়ন থেকে সদ্য যোগদানকারী আ‘লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। নিজেদের জনপ্রিয়তায় ধস নেমে আসায় জোর লবিং, তদবির আর দলবদল করে আ’লীগ থেকে তারা মনোনয়ন নিয়েছেন। দলীয় প্রতীকই এখন তাদের একমাত্র ভরসা। এদিকে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে সহশ্রাম ধুলদিয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আলতাব উদ্দিন ও করগাঁও ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান রফিকুল হক আফরোজ নির্বাচনী লড়াই থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। বিগত নির্বাচনে নয়টি ইউনিয়নের মধ্যে পাঁচটিতেই বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বিজয়ী হয়েছিলেন। আর দুটিতে অল্প ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন। এ হিসেবে নয়টি ইউনিয়নেই বিএনপির একটি সমৃদ্ধ ভোট ব্যাংক রয়েছে। বর্তমান চেয়ারম্যান বা জনপ্রিয় কোনো প্রার্থী দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় প্রায় সবকটি ইউনিয়নেই বিএনপি ও আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন-বনগ্রাম ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, সহশ্রাম ধূলদিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ শাহজাহান মিয়া, চান্দপুর ইউনিয়নের ইনসাফ আলী, মুমুরদিয়া ইউনিয়নের সাইফুল ইসলাম, আচমিতা ইউনিয়নের এনামুল হক শৈবাল, লোহাজুরী ইউনিয়নের খায়রুল আমীন রুহুল ও জালালপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান রোস্তম। অন্যদিকে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন-শরাফত লস্কর পারভেজ, চান্দপুর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মাহতাব উদ্দিন, মুমুরদিয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ ছেনু মিয়া, মসূয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আবু বকর ছিদ্দিক ও লোহাজুরী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম হায়দার মারুয়া। তাছাড়া লোহাজুরী ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুন্সী আঃ হেকিম কারিগরি কলেজের অধ্যক্ষ ও কটিয়াদী রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক এ.কে.এম ফজলুল হক জোয়ারদার আলমগীরের এলাকায় রয়েছে অনেক জনসমর্থন। নির্বাচনে এ ইউনিয়নে তার বিজয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, নির্বাচনে নয়টি ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে ৪২ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ১০১ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৩৩৭ জনসহ মোট ৪৮০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।