আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
ওজন কমাতে যে রীতিমতো কাঠখড় পোড়াতে হয়, তা সকলেই জানেন। খাওয়া-দাওয়া নিয়ন্ত্রণ থেকে শরীরচর্চা— খেয়াল রাখতে হয় সব দিকেই। কিন্তু কেউ যদি আপনাকে বলেন, ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ওজন ঝরিয়ে ফেলা যায়, তার চেয়ে বড় সুখবর কি আর কিছু হতে পারে! কথাটা শুনেই মশকরা ভেবে উড়িয়ে দেবেন না।
সত্যিই, ঘুমের মধ্যেও ওজন কমানো সম্ভব। আসলে আমরা ঘুমিয়ে থাকলেও ঘুমের মধ্যে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রতঙ্গ তাদের মতো কাজ চালিয়ে যায়। ফলে কিছু ক্যালোরিও খরচ হয়। শরীরের এনার্জি খরচ হয়। তা ছাড়াও সারা রাত জুড়ে শরীরে বাড়তি পানি শ্বাস-প্রশ্বাস এবং ঘামের মধ্যে দিয়ে খরচ হয়। তাই “ওয়াটার ওয়েট” ঝরে যায়। সেই কারণেই সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে যদি ওজন মাপেন, তা হলে খানিকটা কম দেখাবে ওজন। এই সব কারণেই রাতের পর রাত ভাল ঘুম না হলে শুধু যে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাবে তা নয়, আপনার ওজনও বেড়ে যেতে পারে।
কী ভাবে
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে শরীরে মানসিক চাপের হরমোন— মানে কর্টিসলের ক্ষরণ বেড়ে যায়। বেশি মাত্রায় কর্টিসল শরীরে থাকলে তা আমাদের হজমশক্তির ওপর প্রভাব ফেলে। শরীরের বিপাক হারও কমে যায় এই সব কারণে। ঘুম কম হলে শরীরের ক্ষুধাপ্রক্রিয়ায় অন্যভাবে কাজ করে। তাই রাত জেগে থাকলে উল্টোপাল্টা খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। রক্তে শর্করা মাত্রা বেড়ে যেতে পারে এর ফলে। তাই ওজন বাড়তেও বেশি সময় লাগে না।
ঘুমের মধ্যেও কী করে ক্যালোরি ঝরাবেন?
যাঁরা সন্ধ্যার সময় শরীরচর্চা করেন, তাঁদের রক্তে শর্করার মাত্রা রাতে কম ওঠা-নামা করে বলে দেখা গিয়েছে। তাই আপনি যদি ওয়েট ট্রেনিং করেন, তা হলে তা সকালের বদলে সন্ধ্যায় করতে পারেন। শরীরের বিপাক হার শরীরচর্চার পর ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত বেশি থাকবে। তাই ঘুমের মধ্যেও শরীরে ক্যালোরি বেশি খরচ হবে।
ক্যাসেইন প্রোটিন এক ধরনের দুগ্ধজাত প্রোটিন, যা হজম হতে অনেকটা সময় নেয়। তাই রাতে যদি এই ধরনের কোনও প্রোটিন শেক খেতে পারেন, তা হলে সারা রাত ধরে আপনার হজম প্রক্রিয়া সচল থাকবে। ক্যালোরিও ঝরবে।
শরীরচর্চা করার পর যদি ঠান্ডা পানিতে গোসল করতে পারেন, তা হলে শরীর থেকে ল্যাকটিক অ্যাসিড বেরিয়ে যেতে সাহায্য করবে। আমাদের শরীরে ব্রাউন ফ্যাট পরিমাণে খুব কম থাকে। কিন্তু এটি সক্রিয় থাকলে শরীরের বিপাক হার বেড়ে অনেক ক্ষণ পর্যন্ত ক্যালোরি ঝরতে পারে। ৩০ সেকেন্ড যদি বরফ-ঠান্ডা পানিতে গোসল করতে পারেন, তা হলে শরীরের ব্রাউন ফ্যাট সক্রিয় হয়ে ঘুমের মধ্যেও ৪০০ ক্যালোরি পর্যন্ত ঝরাতে পারে।
গ্রিন টি শরীরের বিপাক হার বাড়াতে সাহায্য করে। দিনে যদি ৩ কাপ চা খান, তার মধ্যে শেষ কাপটি ঘুমের আগে— তা হলে ঘুমের মধ্যে ৩.৫ শতাংশ বেশি ক্যালোরি ঝরতে পারে।
ফাস্টিং বা রোজা রাখেন কি? যেই খাদ্যাভ্যাসে দিনে ১৬ ঘণ্টা না খেয়ে বাকি ৮ ঘণ্টা খাওয়া যায়। এতে জমিয়ে রাখা সব সুগার শেষ হয়ে গিয়ে ফ্যাট ঝরিয়ে এনার্জি পায় শরীর। তাই ঘুমের মধ্যেও অনেকটা ক্যালোরি ঝরে।
ঘুমের সময় ওজন কমাতে রাতের আলো থেকেও মুক্তি পাওয়ার চেষ্টা করুন। গবেষণা অনুযায়ী, শোবার আগে ঘরের আলো জ্বালানো থাকলে মেলাটোনিনকে দমন করে। আলো জ্বালিয়ে ঘুমানো বিপাকের সার্কাডিয়ান নিয়ন্ত্রণকে প্রভাবিত করে। স্লিপ ফাউন্ডেশন অনুসারে এসব কারণে ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি বাড়ায়। সুতরাং, ঘুমানোর আগে শোবার ঘরের বেডসাইড লাইটসহ সব ধরনের আলো নিভিয়ে নিন। বাইরে থেকে আসা আলো আটকাতে দরজা-জানালায় ব্ল্যাকআউট পর্দা ব্যবহার করুন।
রাতারাতি ওজন কমাতে, সমস্ত নীল আলোর ডিভাইস— ল্যাপটপ, ট্যাবলেট অথবা স্মার্টফোনজাতীয় ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী বেডরুম থেকে সরিয়ে নিন। গবেষণায় দেখা গেছে, রাতের বেলায় নির্গত নীল আলোর সংস্পর্শে শরীরের মেলাটোনিন উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটায়; যা ঘুমের উন্নতির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এছাড়াও নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির গবেষকদের দ্বারা পরিচালিত একটি সমীক্ষা জানিয়েছে রাতে নীল আলোর এক্সপোজার ক্ষুধা এবং ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়; যা অবশ্যই ওজন বাড়াতে পারে এবং শরীরের চর্বি পোড়ানোর ক্ষমতা ব্যাহত হয়।
সূত্র : Today, Eat This, Medical News Today, Health Line অবলম্বনে