আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাব কমে আসায় দুই বছর বিরতির পর এবার সাড়ম্বরে উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদুল ফিতরের জামাতের জন্য প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। দীর্ঘদিন পর জামাত আয়োজনের প্রস্তুতিতে খুশি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। ২০১৬ সালের জঙ্গি হামলার কলঙ্কজনক অধ্যায়কে সামনে রেখে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা জানিয়েছে জেলা ও পুলিশ প্রশাসন।
এবার এই ঈদগাহ ময়দানে ১৯৫তম ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০টায়। মুসল্লিদের নিরাপত্তার স্বার্থে থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চার স্তরের নিশ্ছিদ্র ব্যবস্থা।
করোনা অতিমারির কারণে দুই বছর বিরতির পর এবার শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে ১৯৫তম ঈদুল ফিতরের বৃহত্তর ঈদের জামাত। সকাল ১০টায় অনুষ্ঠেয় এ জামাতে ইমামতি করবেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।
মুসল্লিদের নিরাপত্তার স্বার্থে মাস্ক, টুপি ও জায়নামাজ ছাড়া আর কিছুই সঙ্গে নিয়ে জামাতে প্রবেশ করা যাবে না। মোবাইল ফোন ও ছাতা নিয়ে ঈদগাহ ময়দানে প্রবেশের ওপর রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। তবে বৃষ্টির দিন থাকলে ছাতা নিয়ে প্রবেশের বিষয় বিবেচনা করা হবে। এছাড়া থাকবে চার স্তরের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মুসল্লিদের যাতায়াত সুবিধার জন্য ময়মনসিংহ ও ভৈরব থেকে দুটি বিশেষ ট্রেন আসা-যাওয়া করবে।
ঈদুল ফিতরের জামাতের প্রস্তুতি নিয়ে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান সরেজমিনে পরিদর্শনকালে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম এবং পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ এ তথ্য জানান।
বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদুল ফিতরের জামাতের জন্য খ্যাত কিশোরগঞ্জ শহরের উপকন্ঠে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। প্রায় আড়াইশ বছরের পুরোনো এ ঐতিহাসিক ঈদগাহ ময়দানটিতে প্রতিবছর ঈদুল ফিতরের জামাতে দেশ-বিদেশের তিন লাখেরও বেশি ধর্মপ্রাণ মুসল্লি নামাজ আদায় করে আসছিলেন।
২০১৬ সালে এ মাঠে অনুষ্ঠিত ঈদুল ফিতরের জামাতের আগে প্রবেশ পথের নিরাপত্তা চৌকিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় দুজন পুলিশ কনস্টেবল, এক গৃহবধূ এবং এক জঙ্গি নিহত হয়। আহত হয় আরও বেশ কজন পুলিশ কনস্টেবল ও ধর্মপ্রাণ মুসল্লি। তবুও এ ঈদগাহ ময়দানের ধারাবাহিক জামাত আয়োজনে ছন্দপতন ঘটেনি। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর এ ঈদগাহ ময়দানে ঈদের কোনো জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি।
জনশ্রুতি আছে, দীর্ঘ দিন আগে এ মাঠে অনুষ্ঠিত এক ঈদুল ফিতরের জামাতে কাতার গুণে ১ লাখ ২৫ হাজার মুসল্লির উপস্থিতি মেলে। তখন থেকে এ ঈদগাহ ময়দানটিকে ‘সোয়া লাখিয়া ঈদগাহ ময়দান’ হিসেবে লোকজন ডাকতে শুরু করেন। পরবর্তীতে উচ্চারণ বিবর্তনে এ ঈদগাহ ময়দানের নাম শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান হিসেবেই সমধিক পরিচিত হয়ে ওঠে। আর তখন থেকেই এ ময়দানে ঈদুল ফিতরের জামাতে অংশ নিতে দেশ-বিদেশের লাখ-লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ছুটে আসতে থাকে। বিশেষ করে এ মাঠের ঈদুল ফিতরের জামাতে অংশ নিতে দেশ-বিদেশের তিন লাখেরও বেশি ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ছুটে আসেন।
কথিত আছে, এমন পরিস্থিতিতে এক শ্রেণির ধর্মপ্রাণ মুসল্লি মনে করেন, লাখো মুসল্লির সঙ্গে এ ময়দানে পরপর তিনবার ঈদুল ফিতরের জামাত আদায় করতে পারলে এক হজের সমান সওয়াব হয়। এক শ্রেণির মানুষের কাছে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান গরিবের মক্কা হিসেবেও পরিচিত।
কিশোরগঞ্জের হয়বত নগর সাহেব বাড়ির পূর্ব পুরুষ শাহ সুফি সৈয়দ আহমদ তার নিজস্ব তালুকে নরসুন্দা নদীর তীরে ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দে ৭ একর জমির ওপর ‘শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান’ প্রতিষ্ঠা করেন। এমনকি তার ইমামতিতে এ ঈদগাহ ময়দানে প্রথম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
সূত্র : যুগান্তর