১৯৬০ সালের মাঝামাঝি সময়ের কথা। মহাসাজে সজ্জিত মরক্কোর প্রাচীন নগরী ফেজ। লাল-সবুজ রঙে সেজে উঠেছে ফেজ নগরীর আকাশ-বাতাস। নগরীর বাড়িগুলোর ছাদভর্তি হর্ষোৎফুল্ল জনতার ভিড়। এদের মুখে একই আওয়াজ : ‘মারহাবা’, যার অর্থ স্বাগতম বা ওয়েলকাম। ছাদের ওপর ও রাস্তার দু’পাশে সমবেত জনতা হর্ষধ্বনির মধ্যে এক উৎসবমুখর পরিবেশে পাথর বাঁধানো সড়ক দিয়ে হাত নেড়ে হেঁটে এগিয়ে যাচ্ছে মরক্কোর বাদশাহ পঞ্চম মোহাম্মদ। এক মাইল হেঁটে এ পথ ধরেই তিনি পৌঁছবেন কারাওইন (Karaouine) মসজিদে। সেখানে সমবেত জনতাকে নিয়ে পালন করবেন এক মহোৎসব : ফেজ নগরীর কারাওইন বিশ্ববিদ্যালয়ের এগারোশ’তম বার্ষিকী উৎসব। তার সাথে ৩৯টি দেশ থেকে আসা পণ্ডিতবর্গ। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি এগারোশ’ বছর আগে মুসলমানরাই গড়ে তোলে। এটি বিশ্বের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয়। এর আগে ইউরোপেও কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
মরক্কোর ফেজ নগরীর এই প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় ৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে। ১৯৬০ সালে এসে এ বিশ্ববিদ্যালয়টির এগারোশ’তম বর্ষপূর্তি ঘটে। ২০১০ সালে হবে এর সাড়ে এগারোশ’তম বর্ষপূর্তি। এই বিশ্ববিদ্যালয় চালুর সময়টি ছিল ইসলামের সোনালি যুগ। নবম শতাব্দীর প্রথম দিকে ফেজ নগরী ছিল অনেকটা গ্রামসদৃশ। তখন মরক্কোর শাসক আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলেন : ‘হে আল্লাহ, তুমি এ নগরীকে আইন ও বিজ্ঞানের কেন্দ্র করে তোলো, যেখানে পাঠ হবে তোমার কিতাব (আল-কুরআন)’। সে স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ফেজ নগরীর এক বিধবা ধনাঢ্য মহীয়সী মহিলা চালু করেন কারাওইন মসজিদ। এ মসজিদ পুরোপুরি নির্মাণ করতে সময় লেগে যায় ২৭৮ বছর। না, এটা শুধু গতানুগতিক এক মসজিদ নয়, এটা ছিল অনন্য এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ইতালির বোলোনা (Bologna)-য় যখন প্রথম ইউরোপীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়, তার আগে কারাওইন হয়ে ওঠে এক বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়। শুরুতে এটি একটি ধর্মীয় শিক্ষা কেন্দ্র হলেও, অচিরেই এর ছাত্রসংখ্যা দাঁড়ায় আট হাজারে; যারা সেখানে চিকিৎসাবিদ্যা থেকে শুরু করে ভূগোল পর্যন্ত অনেক বিষয়েই উচ্চশিক্ষা লাভ করতে থাকে। আরব শক্তির সোনালি দিনে মুসলমানরাই ছিল বিশ্বের ইন্টেলেকচুয়াল এলিট তথা জ্ঞানবিজ্ঞান জগতের অভিজাত সম্প্রদায়। মুসলমানরাই পরিপূর্ণতা দেয় অ্যালজাবরার। আরবি ‘আল-জাবর’ থেকে এসেছে অ্যালজাবরার নাম। মুসলমানরাই বিশ্লেষণ জ্যামিতি, সমতলীয় ত্রিকোণোমিতি ও গোলকীয় ত্রিকোণোমিতির জনক। জ্যোতির্বিদ্যার অগ্রদূত। ফেজ নগরীতে তখন বিশ্বের পণ্ডিতবর্গের সমাবেশ ঘটেছিল। তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন এক ফরাসি তরুণ, যিনি বিখ্যাত হয়ে ওঠেন পোপ দ্বিতীয় সিলভারস্টার (৯৯৯-১০০৩) নামে। ফেজকে তখন বলা হতো ‘পাশ্চাত্যের বাগদাদ- বাগদাদ অব দ্য ওয়েস্ট।’
ইউরোপের মহাজাগরণের মধ্য দিয়ে মুসলমানদের সোনালি যুগের অবসান ঘটে। মধ্য-অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত সময়ে এসে দেখা গেল কারাওইন ছেড়ে গেছে জ্ঞানী-গুণী আর বিজ্ঞানীরা। সেখানে অবশেষ রইল শুধু ধর্মীয় শিক্ষা দিয়ে আলেম-ওলামা তৈরির কাজটি। ১৯১২-৫৬ সময়ে মরক্কো ছিল ফ্রান্সের প্রটেক্টরেট। সে সময়টায় এ বিশ্ববিদ্যালয় একদম ধ্বংসের মুখোমুখি এসে দাঁড়ায়। তখন সেখানে পরীক্ষা ও ডিগ্রি দেয়া বন্ধ হয়ে যায়। শুধু ধর্মশিক্ষা কোনোমতে সেখানে চালু থাকে। ছাত্রদের থাকতে হয় উপযুক্ত আলোহীন ও বায়ুহীন প্রকোষ্ঠে। জানালাহীন কক্ষে। ঘুমাতে হতো মেঝেতে। পাক করতে হতো কয়লার চুলোতে।
১৯৫৬ সালে মরক্কো স্বাধীন হলো। জাতিকে বিংশ শতাব্দীর উপযোগী করে গড়ে তোলার দৃঢ়তা নিয়ে বাদশাহ মোহাম্মদ কারাওইন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠক্রমে ধর্মীয় পাঠপরিধি কমিয়ে দেন। আবার চালু করেন গণিত, পদার্থবিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, বিদেশী ভাষাবিষয়ক পাঠক্রম। ১৯৫৭ সালে তিনি কারাওইনে চালু করেন মহিলা শাখা। এর মাধ্যমে তিনি রক্ষণশীলদের মধ্যে এক ঝাঁকুনি সৃষ্টি করেন। এখন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজার হাজার ছাত্রী লেখাপড়া করছে। আলকারাওইন বিশ্ববিদ্যালয় এখন মুসলিম বিশ্বের অন্যতম এক ধর্মীয় ও জাগতিক শিক্ষা কেন্দ্র। গিনিস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ড মতে, এটি বিশ্বের প্রাচীন একাডেমিক ডিগ্রিদাতা বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয় মধ্যযুগের মুসলমান ও ইউরোপীয়দের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাবিষয়ক সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অনন্য অবদান রাখে। অনেক অমুসলিমও এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম অমুসলিম অ্যালামনি ছিলেন ইহুদি দার্শনিক ও ধর্মতাত্ত্বিক মাইমোনাইডস (১১৩৫-১২০৪)। তিনি শিক্ষা লাভ করেন আব্দুল আরব ইবনে মোয়াশাহার তত্ত্বাবধানে। কার্টিওগ্রাফার মোহাম্মদ আল-ইদ্রিসির (মৃত্যু : ১১৬৬) মানচিত্র ইউরোপ অভিযানে ব্যবহার হয়েছিল রেনেসাঁর যুগে। ফেজে এ মানচিত্র দীর্ঘদিন সংরক্ষিত ছিল। এ বিশ্ববিদ্যালয় সৃষ্টি করেছে অসংখ্য জ্ঞানীগুণী, যারা মুসলমান বিশ্বের জ্ঞানবিজ্ঞান ও শিক্ষার ইতিহাসে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছিল। এদের মধ্যে ছিলেন ইবনে রুশায়েদ আল সাবতি (মৃত্যু : ১৩২১), মোহাম্মদ ইবনে আলহাজ আল-আবদারি আল-ফাসি (মৃত্যু : ১৩৩৬), শীর্ষস্থানীয় তাত্ত্বিক মালিকি ও সুপরিচিত পরিব্রাজক ও লেখক লিও আফ্রিকানাস।
ইতিহাস বলে
আল-কারাওইন বিশ্ববিদ্যালয় ৮৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় মসজিদের একটি অংশ হিসেবে। এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ফাতিমা আল-ফিহরি নামের এক মহীয়সী নারী। তার বাবা ছিলেন ফেজ নগরীর ধনাঢ্য ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আল-ফিহরি। আল-ফিহরি পরিবার ফেজে আসেন নবম শতাব্দীর প্রথম দিকে। তারা এখানে আসেন তিউনিসিয়ার কারাওইন থেকে। সে সূত্রে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম রাখা হয় আল-কারাওইন বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের সাথে কারাওইন থেকে তাদের সমাজের বেশ কিছু লেখক ফেজে এসে নগরীর পশ্চিমের ডিস্ট্রিক্টগুলোতে বসবাস গড়ে তোলে। ফাতিমা আল-ফিহরি ও তার বোন মরিয়ম আল-ফিহরি উভয়েই ছিলেন সুশিক্ষিত। তারা উত্তরাধিকার সূত্রে বাবার কাছ থেকে প্রচুর অর্থ-সম্পদ পান। ফাতিমা তার অংশের সব অর্থ খরচ করেন তার সমাজের লেখকদের জন্য একটি মসজিদ তৈরির পেছনে।
শুধু প্রার্থনার স্থান না হয়ে এ মসজিদ শিগগিরই হয়ে ওঠে ধর্মীয় নির্দেশনা ও রাজনৈতিক আলোচনার স্থল। ধীরে ধীরে একে রূপ দেয়া হয় বিভিন্ন বিষয়ের, বিশেষ করে প্রকৃতি বিজ্ঞান শিক্ষার এক প্রতিষ্ঠানে। ১৯৫৭ সালে বাদশাহ পঞ্চম মোহাম্মদ সেখানে চালু করেন গণিত, পদার্থবিদ্যা, রসায়নশাস্ত্র ও বিদেশী ভাষা শিক্ষার কোর্স।
এ বিশ্ববিদ্যালয় পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিল রাজনৈতিকভাবে শক্তিশালী সুলতানদের কাছ থেকে। এখানে সঙ্কলিত হয়েছে বিপুলসংখ্যক পাণ্ডুলিপি। ১৩৪৯ সালে সুলতান আবু ইনান ফ্যাবিস একটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেন। সে লাইব্রেরিতে এসব সঙ্কলিত পাণ্ডুলিপি রাখা হয়। আজকের দিনে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব মূল্যবান পাণ্ডুলিপি রয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আছে : গজলা হরিণের চামড়ার ওপর মালিকের লেখা আল-মুয়াত্তার পাণ্ডুলিপি, ১৬০২ সালে সুলতান আহমাদ আল-মনসুরের বিশ্ববিদ্যালয়ে দেয়া কুরআনের কপি, যা লিখেন সিরাত ইবনে ইসহাক; ইবনে খালদুনের বই ‘আল-ইবার’-এর মূল কপি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে পড়ানো হতো কুরআন ও ফিকাহ (ইসলামি আইনশাস্ত্র), ব্যাকরণ, বক্তৃতাদান বিদ্যা বা অলঙ্কার শাস্ত্র, যুক্তিবিদ্যা, চিকিৎসাবিদ্যা, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, রসায়নবিদ্যা, ইতিহাস, ভূগোল ও সঙ্গীতবিদ্যা।
মধ্যযুগে আল-কারাওইন মুসলমান ও ইউরোপের মধ্যে সাংস্কৃতিক ও জ্ঞান বিনিময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অগ্রণায়ন বিদ্যজন ইবনে মাইমুন (১১৩৫-১২০৪), আল-ইদ্রিসি (মৃ. ১১৬৬), ইবনে আল-আরাবি (১১৬৫-১২৪০), ইবনে খালদুন (১৩৩২-১৩৯৫), ইবনে আল-খতিব, আল-বিতরুজি (অ্যালপে ট্রেজিয়াম), ইবনে হিরজিহিম ও আল ওয়্যাজ্জেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র অথবা শিক্ষক ছিলেন। যেসব খ্রিষ্টান পণ্ডিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং স্কলার ছিলেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন বেলজিয়ামের নিকোলাস ক্লোনয়ার্টস এবং ওলন্দাজ গোলিয়াস।
এর স্থাপত্যশৈলী
ধারাক্রমে মরক্কোর বিভিন্ন শাসক আল-কারাওইন মসজিদ কমপ্লেক্সের সম্প্রসারণ করেছেন অব্যাহতভাবে, যদ্দিন না তা উত্তর আফ্রিকার মধ্যে বৃহত্তম মসজিদ রূপ নেয় এবং সেখানে ২০ হাজার নামাজি একসাথে নামাজ আদায় করার মতো স্থান সঙ্কুলান হয়। ইস্পাহান অথবা ইস্তাম্বুলের মসজিদের তুলনায় এ মসজিদের নকশা খুবই অনাড়ম্বর। এর থাম ও খিলানগুলো সাদা ও সরল-সহজ। এর মেঝে ঢাকা হয়েছে বিলাসবহুল কার্পেটের পরিবর্তে বাঁশের মাদুর দিয়ে। তারপরও এর অন্তহীন খিলানগুলো এর অপরিমেয় জাঁকজমক আবহ সৃষ্টি করে। এ সরল-সহজ নকশাসহ কীর্তিময় করে তুলেছে এর উন্নতমানের স্টাইল, প্লাস্টারওয়ার্ক ও পেইন্টিং। বর্তমানে যে আকারে এই আল-কারাওইনকে আমরা দেখছি, তা গড়ে তোলা হয়েছে হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা নানাধর্মী নির্মাণকর্মের মাধ্যমে। একদম শুরুতে মসজিদটির দৈর্ঘ্য ছিল ৩০ মিটার। ছিল একটি প্রাঙ্গণ ও চারটি স্তম্ভপরিবেষ্টিত ঘোরানো গলি। এর প্রথম সম্প্রসারণ চলে ৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে। এ সম্প্রসারণ কাজ করান কর্ডোভার উমাইয়া খলিফা তৃতীয় আবদ-আর-রহমান। তখন প্রার্থনা ভবন সম্প্রসারিত করা হয়। মিনার স্থানান্তর করা হয়। তখনকার দিনে ফেজ নগরীতে একটা রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল, আল-কারাওইনের মিনার থেকে আজানের আওয়াজ আসার পরপরই নগরীর অন্যান্য মসজিদে আজান শুরু করা হতো। আল-কারাওইন মসজিদের মিনারে একটা বিশেষ কক্ষ আছে। এই কক্ষেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় নির্ধারণ করা হয়। এ কক্ষের নাম ‘দার আল মুযাক্কিত।’
এ মসজিদে সবচেয়ে ব্যয়বহুল পুনর্গঠনের কাজ সম্পন্ন হয় ১১৩৫ খ্রিষ্টাব্দে, আল-মুরাবিদ শাসক সুলতান আলী ইবনে ইউসুফের তত্ত্বাবধানে। তিনি আদেশ দেন মসজিদের স্তম্ভপরিবেষ্টিত ঘোরানো গলি ১৮টি থেকে ২১টিতে উন্নীত করতে হবে। এ সময় এর কাঠামোর সম্প্রসারণ ঘটানো হয় ৩ হাজার বর্গমিটার। কোনো কোনো বর্ণনায় আছে আলী ইবনে ইউসুফ দু’জন আন্দালুশীয় স্থপতিকে নিয়োগ করেছিলেন। তারা আলজেরিয়ার তেøমসেনের বড় মসজিদের কেন্দ্রীয় স্তম্ভপরিবেষ্টিত ঘোরানো গলি নির্মাণ করেছিলেন ১১৩৬ সালে, তখনই আল-কারাওইন মসজিদ আজকে কর্ডোভীয় আদল লাভ করে। এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অশ্ব খুরাকৃতি খিলান, গাণিতিক ও ফুলেল আন্দালুশীয় অঙ্কন ও কিনারে কুপি ক্যালিগ্রাফি।
আজকের এ দিনে
ফাতিমা আল-ফিহরি যে মসজিদ গড়ে তুলেছিলেন আজ তা আল-কারাওইন বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ হয়ে আছে। তার বোন মরিয়ম আল-ফিহরি নেতৃত্ব দেন আল আন্দালুস মসজিদ নির্মাণে। আজকের এ দিনে ফাতিমা আল-ফিহরিকে বিবেচনা করা হয় মরক্কোর অন্যতম সম্মানীয়া নারী হিসেবে। তিনি ছিলেন যথার্থ অর্থেই প্রজ্ঞাবান। তার অধ্যবসায় ও দয়ালু মনের জন্য তিনি সুখ্যাত। তার ব্যক্তিগত ত্যাগ আজ মরক্কোকে দিয়েছে অনন্য সম্মান- বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশ। আর সেই সাথে ফাতিমা আল-ফিহরিও হয়েছেন অনন্য মর্যাদার অধিকারী- বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতার মর্যাদা তার কপালে। আজকের দিনে মরক্কোবাসী সম্মানের সাথে তাদের এই পূর্বনারীর নাম উচ্চারণ করেন যথাযথ সম্মান ও মর্যাদার সাথে। কারণ তিনি শুধু ফেজ নগরীর মর্যাদাই বাড়িয়ে তোলেননি, সেই সাথে তিনি হয়েছেন সেই মুসলিম যিনি তার দেশের জন্য, বিশ্বমুসলিম সমাজের জন্য এ গৌরবগাথা সৃষ্টি করেছেন। সাড়ে এগারশ’ বছর আগে তার গড়ে তোলা এ বিশ্ববিদ্যালয় আজও সগৌরবে চালু রয়েছে।
কুরআন ও হাদিস সব মানুষকে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে জ্ঞানার্জনে উৎসাহিত করে। ফাতিমা আল-ফিহির এই ছোট্ট কাহিনী ইসলামি সভ্যতার মুসলিম মহিলা অবদানের এক অনন্য উদাহরণ। আজকের দিনেও ফাতিমা আল-ফিহির মুসলিম নারীদের এ ব্যাপারে উৎসাহ জোগাবে জ্ঞানার্জন ও জ্ঞান বিস্তারকর্মে নিজেদের নিয়োগ করার ব্যাপারে।
প্রাচীন ক’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকাল (খ্রিষ্টাব্দ)
৮৫৯ : আল-কারাওইন বিশ্ববিদ্যালয়, ফেজ, মরক্কো
১০৮৮ : বোলোনা বিশ্ববিদ্যালয়, বোলোনা, ইতালি
১১১৫ : প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়
১১৬৭ : অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়
১১৭৫ : মদিনা বিশ্ববিদ্যালয়
১২০৯ : ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়
১৫৩৬ : ইউনিভার্সিডাড অটোনোমা ডি সান্ডো ডোমিঙ্গো, ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র
১৬৩৬ : হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তর আমেরিকা
১৮৫০ : সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়া
গোলাপ মুনীর
সূত্র : অন্য এক দিগন্ত