ভেনিস শহরটি কিভাবে গড়ে উঠল? খাবার গ্রহণে কাঁটাচামচের ব্যবহার কখন থেকে হলো? সুমো কুস্তির প্রচলনই বা কখন? কিংবা খ্রিষ্টানরা প্রার্থনার সময় হাত দু’টি জোড়া করে রাখে কেন? পপ মিউজিক কেন হয় সাড়ে তিন মিনিটের? এসব প্রশ্নের জবাব আছে How It All Started গ্রন্থটিতে। তবে আমরা রিডার্স ডাইজেস্ট থেকে বাছাই করা কয়েকটি এখানে তুলে দিয়েছি। অনুবাদ করেছেন আসিফ হাসান
ভেনিসের গড়ে ওঠা
ভেনিস শহরে যারা প্রথমে বসতি গড়তে গিয়েছিল, তারা বাড়তি সমস্যায় পড়ছিল। চতুর্থ শতকে রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর থেকেই আলপসজুড়ে উত্তরের দস্যুরা হানা দিয়ে বেড়াচ্ছিল। তাদের থেকে রক্ষা পেতে জলমগ্ন ভেনিসকেই বেছে নিয়েছিল তারা। কিন্তু জেলে পল্লীই হোক, আর পাথরের গির্জাই হোক কিংবা নগরকর্তার ভবনই হোক, জলাভূমিতে কোনো কিছু নির্মাণ করা খুবই কঠিন।
অবশ্য সমাধান এক দিনে হয়নি। কয়েক শতকে তিলে তিলে শহরটি গড়ে উঠেছিল। প্রথম দিকে পাইলিং করে তার ওপর তারা ভবনাদি নির্মাণ করতে লাগল। মোটামুটি আকারের একটি ভবনের ভিত্তি গড়তেই কয়েক শ’ পাইন বা লার্চ গাছের কাণ্ড গাড়তে হতো। এসব গাড়ার সময় প্রথম প্রথম মনে হতো কাদামাটির মধ্যে দিয়াশলাইয়ের কাঠি পোঁতা হচ্ছে।
এর মধ্যেই ভেনিশীয় প্রকৌশলীরা পানি নিষ্কাশনব্যবস্থায় বেশ কৃতিত্বপূর্ণ অগ্রগতি হাসিল করে ফেললেন। ফলে ভবন নির্মাণের জন্য কিছুটা শক্ত ভূমি পাওয়া গেল। পানি নিষ্কাশনব্যবস্থা তদারকির জন্য পোর্তো অ্যালে একিউ নামের একটি পদও সৃষ্টি করা হলো। তার তত্ত্বাবধানে খাল খনন ও নদীর গতিপথের পরিবর্তনের কাজও চলত।
রেনেসাঁ যুগে সবচেয়ে প্রতিভাধর পোর্তো অ্যালে একিউ ছিলেন ক্রিস্টোফরো স্যাবাডিনো। তিনিই উপলব্ধি করতে পারলেন, খালে অবৈধ নির্মাণকাজ ও অপরিকল্পিতভাবে ভূমি উদ্ধারের ফলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই হয় বেশি।
কাঁটাচামচের ব্যবহার
সতেরো শতকেও ইউরোপে সাধারণভাবে ডিনারে শুধু চামচ আর ছুরি ব্যবহৃত হতো। দরকারও হতো এগুলোরই। কারণ খাবার ছিল দু’ধরনেরÑ হয় শুকনা কিংবা তরল। তাই হয় কেটে নয়তো চুমুক দিয়ে খেতে হতো। রান্নাবান্নার কাজে অবশ্য বড় ধরনের দুই দাঁতওয়ালা চামচ ব্যবহৃত হতো। অবশ্য গ্রিস ও ইতালিতে কোনো কোনো সময় ছোট আকারের দুই দাঁতওয়ালা চামচের ব্যবহার দেখা যায়।
বর্তমানে প্রচলিত চার দাঁতওয়ালা বাঁকানো কাঁটাচামচ আবিষ্কৃত হয় জার্মানিতে আঠারো শতকে। একই সময়ে ডিনারের ছুরিগুলোর প্রান্তগুলোও অনেকটা বর্তমানের মতো হতে থাকে।
উনিশ শতক থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কাঁটাচামচ ব্যবহৃত হতে থাকে। সে সময় এগুলোকে বলা হতো ‘স্প্লিট স্পুন’। খাবার গ্রহণে কাঁটাচামচের বহুমাত্রিক ব্যবহারের সূচনাও আমেরিকায় হয়েছিল।
সুমো কুস্তির জন্ম
সুমো কুস্তি হাজার হাজার বছরের পুরনো এবং এর ইতিহাস জাপানের শিন্টো ধর্মের সাথে জড়িয়ে আছে। ক্যামিদের (শিন্টো দেবতা) মনোরঞ্জন করে তাদের কাছ থেকে নিরাপত্তা ও ফসল কামনায় মন্দিরে নৃত্যের অংশ হিসেবে সুমো কুস্তির আয়োজন করা হতো। ভারসাম্য ও সম্প্রীতি প্রকাশে শক্তিগুলোর সঙ্ঘাতের প্রয়োজন ফুটিয়ে তোলার জন্য এটা ছিল প্রার্থনার একটি অনুষঙ্গ।
লড়াইয়ের সময় হতো খুবই কম। বিপুল ওজন ও শক্তি সংবলিত শারীরিক প্রাধান্য কুস্তিগিরকে এগিয়ে রাখত। তাই ওজন বাড়ানোর জন্য কুস্তিগিররা খাওয়া ও বিশ্রামের পদ্ধতি অনুসরণ করতে থাকে। পরবর্তীকালে রাজকীয় অনুষ্ঠানের অংশে পরিণত হয় সুমো কুস্তি। সম্রাট শোনগান আর ডাইমোরা (যুদ্ধবাজ নেতা) চ্যাম্পিয়ন সুমো কুস্তিগিরকে বিপুলভাবে সম্মানিত করত।
কামাকুরা শোগুনেট আমলে (১১৯২-১৩৩৩) সুমো আনুষ্ঠানিকভাবে মার্শাল আর্টের মর্যাদা পায় এবং একটি পেশাদার খেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পেশাদার খেলার আরো কিছু শর্তাবলি নির্ধারিত হয় আঠারো শতকে।
সাড়ে তিন মিনিটের গান
১৯৪৮ সালে প্রায় একই সাথে পপসঙ্গীত ও রেকর্ড প্রস্তুতের জন্য ভাইনিলে সুইচ দেয়ার পদ্ধতি আত্মপ্রকাশ করে। এর আগে গানের রেকর্ড করা হতো ভঙ্গুর চাঁচে এবং সেগুলো গ্রামোফোনে প্রতি মিনিটে ৭৮ রেভ্লুশনে (আরপিএম) বাজানো হতো। ভাইনিল ছিল অনেক টেকসই, শব্দও ছিল বেশ ভালো এবং সেই সাথে ছিল সস্তা। ৪৫ আরপিএম-এ চালিত ৭ ইঞ্চি (১৮ সেন্টিমিটার) ভাইনিল ডিস্ক ১৯৪৯ সালে বাজারজাত করা হয়। পপসঙ্গীতের জন্য এটাই বেছে নেয়া হয়।
আরো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, ৭ ইঞ্চি ভাইনিল ডিস্কগুলো জুকবক্সের (পানশালা, ক্লাব, ক্যাফে ইত্যাদিতে একাধিক রেকর্ডসহ এসব বক্স লাগানো থাকত, যাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ মুদ্রা ফেলা হলে পছন্দের গান বাজত)। সাথেও খাপ খেয়ে যায়। আর এসব স্থানে তরুণদের ভিড় হতো এবং যুবসমাজের কাছে দ্রুত পপসংস্কৃতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
তবে পপসঙ্গীত সাড়ে তিন মিনিটের হওয়ার জন্য এটাই একমাত্র কারণ নয়। ৭ ইঞ্চি ডিস্কে তার চেয়ে দ্বিগুণ দৈর্ঘ্যরে গানের জায়গা হতো। সাড়ে তিন মিনিট সম্ভবত শ্রোতাদের মনোযোগ ধরে রাখার একটি সহজাত সময়। এই সহজাত বিষয়ের জন্যই গির্জার কিংবা বড়দিনে গানও হতো সাড়ে তিন মিনিটের। বর্তমানের বেশি বেশি চাপও সাড়ে তিন মিনিটের সময়কে গুরুত্ব দিচ্ছে। বাণিজ্যিক রেডিওগুলো আঁটসাঁট পপসঙ্গীতের চাহিদা উসকে দিচ্ছে। শ্রোতারা বিশ্রাম না পেলে অন্য স্টেশনে চলে যাবে। তা ছাড়া গান ছোট হলে বিজ্ঞাপন প্রচারের সুযোগ থাকে বেশি।
বর্তমানে সিডি ও ডাউনলোডের যুগে গান যেকোনো দৈর্ঘ্যরে হতে পারে। কিন্তু তবুও কেউ যদি তালিকা দেখে, তবে সাড়ে তিন মিনিটের গানগুলোই দেখতে পাবে।
করজোড়ে প্রার্থনা
কবরচিত্র থেকে জানা যায়, প্রথম দিকে খ্রিষ্টানরা হাত উঠিয়ে, তালু মেলে অনেকটা মুসলমানদের মতো করেই দোয়া বা প্রার্থনা করত। অনেক লেখাতেও হাত উঠানোর কথা দেখা যায়।
খ্রিষ্টানরা কখন থেকে দুই হাতের তালু এক করে নতশিরে রাজার কাছে জমিদারের আনুগত্য প্রকাশের মতো করে প্রার্থনা শুরু করে বা কিভাবে এর শুরু তা জানা যায় না। সম্ভবত মনের প্রশান্তিভাব সৃষ্টির জন্য প্রার্থনার সময় চোখ মুদে কর দু’টি একত্র করা হয়।
সূত্র : অন্য এক দিগন্ত