বিশেষ প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ ।।
কর্মসৃজন প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে প্রায় চার মাস আগে। কিন্তু শ্রমিকরা তাদের মজুরি পাচ্ছিলেন না। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা কাগজপত্র ব্যাংকে পাঠিয়ে দিলেও ব্যাংক তাদের টাকা দিচ্ছিল না। নানা অজুহাতে তাদের ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছিল। সর্বশেষ গতকাল রবিবার শ্রমিকদের টাকা পরিশোধ করা হবে বলে ব্যাংক থেকে জানানো হয়। কথা অনুযায়ী ৯৫জন নারী শ্রমিক মজুরি তুলতে ব্যাংকে গেলে তারা আজও টাকা পাবে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়। এ কথা শোনেই রহিমা (৫০) ও আম্বিয়া (৪৫) নামে দু’জন শ্রমিক অজ্ঞান (মুর্ছা) হয়ে পড়েন। এ ঘটনার পর ব্যাংকের ভেতরেই শুরু হয় হট্টগোল। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে তারা। শ্রমিকদের তোপের মুখে পড়েন কৃষি ব্যাংক কিশোরগঞ্জ শাখায় ব্যবস্থাপক ও কর্মকর্তা-কর্মচারিরা। শ্রমিকরা ঘোষণা দেয়, মজুরির টাকা নিয়ে ব্যাংক থেকে যাবে না তারা।
শ্রমিকদের অভিযোগ, প্রতিজনের কাছ থেকে ‘খরচাপাতি’ বাবদ এক হাজার টাকা করে দাবি করা হয়েছিল ব্যাংকের লোকজন। তারা এ টাকা দিতে রাজি হয়নি বলেই তাদের এভাবে হয়রানি করা হয়।
জানা গেছে, কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বৌলাই ইউনিয়নে ২০১৫-২০১৬অর্থবছরের কর্মসৃজন কর্মসূচির আওতায় প্রথম পর্যায়ের ৪০দিনের কাজ শেষ হয়েছে প্রায় চার মাস আগে। বিধবা, অসহায় ও দুস্থ ৯৫জনকে এ কাজের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৯০ভাগই নারী শ্রমিক। তারা দৈনিক ২৫০টাকা মজুরিতে কাজে যোগ দেয়। শ্রমিকরা পাটধা উচ্চ বিদ্যালয়ের পাকা রাস্তা হতে পূর্বপাটধা ভাঙ্গীরকান্দা ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তা মেরামত করে।
বৌলাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুর রহমান অভিযোগ করেন, এ কাজে এলাকার সবচেয়ে গরিব অসহায় লোকদের নিয়োগ দেওয়া হয়। যাতে তারা কাজ করে কায়েকটা টাকা ঘরে নিতে পারে। তিনি জানান, এখানে এমন নারীরাও আছেন, যারা রাস্তায় কাজ করার শারীরিক সামর্থ রাখেনা। তার পরও অভাবের কথা বিবেচনা করে তাদের কাজ দেওয়া হয়। এমন অনেক নারী আছে, যিনি ঘরে দু-তিন মাসের সন্তান রেখে কাজ করেছেন। কিন্তু ব্যাংকের ব্যবস্থাপক ওদের যে হয়রানিটা করলেন, তা এক কথায় অমানবিক। শুধু কয়েকটা টাকা ঘুষের জন্য ওদের সঙ্গে এ আচরণ করলেন তিনি।
প্রকল্প সভাপতি ও ৫নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বাহারুল হক বাচ্চু বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অনেক আগে মজুরি সংক্রান্ত কাগজপত্র যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ব্যাংক শ্রমিকদের টাকা দিতে বেশকিছু দিতে গড়িমসি করছিল। তিনি অভিযোগ করেন, শ্রমিকদের কাছে ঘুষ চাওয়া হচ্ছিল ব্যাংক থেকে। কিন্তু শ্রমিকরা এ টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় সঙ্কটটি তৈরি হয়।
পূর্ব পাটধা গ্রামের সরলা, মইশাখালী গ্রামের সাগরী রবী দাস, কাঠালিয়া গ্রামের সুলেখা ও পাতালজান গ্রামের নূরজাহান জানান, তারা ৪০দিনের কাজ বাবদ প্রতিজনে আট হাজার টাকা করে পাবেন। এ টাকা থেকে এক হাজার টাকা করে রেখে দিতে চান তারা। তারা বলেন, এত কষ্টের পয়সা যদি তারা রাইখ্যা দিত ক্যারে। তারা কি বেতন ফায় না? গরিবের ট্যাহায় এরার এত লোব ক্যারে। কয়েকজন শ্রমিক অভিযোগ করেন, পুলিশ দিয়ে ব্যাংক থেকে তাদের বের করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
এদিকে শ্রমিকদের মারমুখি অবস্থান দেখে বেলা দুইটার দিকে ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শ্রমিকদের মুজরির টাকা আজই দেওয়া হবে।
কৃষি ব্যাংক কিশোরগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক শওকত উজ্জামান ঘুষ চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, কাগজপত্র মেলানোসহ নানা ঝামেলার কারণে শ্রমিকদের টাকা দিতে একটু বিলম্ব হচ্ছিল। গত বৃহস্পতিবার কেন শ্রমিকদের টাকা না দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেদিন আমি ছুটি নিয়েছিলাম। তাহলে আজ(গতকাল) কেন গড়িমসি করছিলেন? এ সময় তিনি বলেন, সাত লাখ ৬২হাজার টাকা দেওয়া হবে ৯৫জনকে। তাই এসব যাচাই-বাছাইয়ের প্রশ্নও আছে। পরে তিনি বলেন, আজ আর খালি হাতে তারা যাবেন না, তাদের সবার একাউন্টে টাকা জমা করা হয়েছে। বিকেলের মধ্যে সবাই টাকা পেয়ে যাবে।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু নাসের বেগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। শ্রমিকদের হয়রানি করাটা খুবই দুঃখজনক। আমি বিষয়টি খোঁজখবর নিতে পিআইওকে(প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা) এখনই বলছি।
বিকেল সাড়ে চারটা এ প্রতিবেদন লেখার সময় ব্যাংকে অবস্থান নেওয়া শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, তাদের টাকা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ব্যাংক।