কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা ।।
বাজিতপুরের পিরিজপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের দু’জন সাধারণ মেম্বার প্রার্থী সর্বোচ্চ ও সমান ভোট পাওয়ায় এলাকাবাসীকে জানানো হয়েছিলো পুনঃনির্বাচন হবে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে রিটার্নিং অফিসার এবং প্রিসাইডিং অফিসার যোগসাজশ করে নির্বাচনের একদিন পর একজনকে এক ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় ঘেরাওয়ের ঘটনা ঘটেছে। চলছে এলাকায় উত্তেজনা। পরাজিত প্রার্থী আজ সোমবার সকালে জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এই ফল প্রত্যাখ্যান করে এর বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন।
পিরিজপুর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের মোরগ প্রতীকের মেম্বার প্রার্থী এনায়েত উল্লাহ সোহাগ সংবাদ সম্মেলনে জানান, তার ইউনিয়নে গত ৩১ মার্চ নির্বাচন হয়। সেখানে ৬ জন মেম্বার প্রার্থী ছিলেন। নির্বাচন শেষে ভোট গণনায় দেখা গেছে তিনি এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আপেল প্রতীকের মো. ফুল মিয়া সর্বোচ্চ ৪২৩ ভোট করে পেয়েছেন। মেম্বার প্রার্থী অন্যদের মধ্যে এবি সিদ্দিক (তালা) ১৩৯ ভোট, মঈন উদ্দিন (ঘুড়ি) ১০৮ ভোট, মিজানুর রহমান (ফুটবল) ২৬৫ ভোট এবং স্বরাজ মিয়া (টিউবওয়েল) ৩৬৫ ভোট পান। যে কারণে তাদের ওয়ার্ডের সাধারণ মেম্বার পদে কোনো ফল ঘোষণা করা হয়নি। কেবল চেয়ারম্যান এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বার পদের ফল ঘোষণা করা হয়। আর প্রিসাইডিং অফিসার মো. হারুন অর রশিদ কেন্দ্রেই ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, এই ওয়ার্ডে সাধারণ মেম্বার পদে পুনঃনির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। এই কথা বলে তিনি ব্যালট পেপারসহ যাবতীয় সরঞ্জাম নিয়ে উপজেলা পরিষদে চলে যান। পরবর্তিতে এ উপজেলার রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা মুহম্মদ সাইফুল ইসলামও সোহাগকে পুনঃনির্বাচনের কথা বলেছিলেন। এক পর্যায়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এজেডএম সারজিল হাসান এবং স্থানীয় এমপি আফজাল হোসেনের সঙ্গে কথা বললে তারাও সোহাগকে পুনঃনির্বাচন হবে বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু পরদিন প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ফুল মিয়ার লোকেরা এলাকায় বিজয় মিছিল করেন। এনায়েত উল্লাহ সোহাগ রিটার্নিং অফিসারের সাথে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, ফুল মিয়া ৪২১ ভোট এবং আপনি (সোহাগ) ৪২০ ভোট পেয়েছেন। ফলে ফুল মিয়াকে এক ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। আর এটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলে সোহাগকে জানিয়ে দেয়া হয়। এ বিষয়ে এনায়েত উল্লাহ সোহাগ রিটার্নিং অফিসার বরাবরে লিখিত আপত্তি জানালেও তিনি তা গ্রহণ করেননি। পরে সংসদ সদস্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ফোন করলে সেটি গ্রহণ করা হয়।
কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার হারুন অর রশিদকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে বলেন, নির্বাচনের দিন কেন্দ্রেই তিনি ফল ঘোষণা করেছেন। আর রাত ১০টায় উপজেলা সদরে গিয়ে ফলাফল ঘোষণা করেছেন। ফুল মিয়া পেয়েছেন ৪২১ ভোট আর এনায়েত উল্লাহ সোহাগ পেয়েছেন ৪২০ ভোট। রিটার্নিং অফিসার সাইফুল ইসলামকে প্রশ্ন করলে জানান, কে কত ভোট পেয়েছেন, কে বিজয়ী হয়েছেন, সেটা প্রিসাইডিং অফিসার জানেন। এ ব্যাপারে আমার কোনা দায়দায়িত্ব নেই।
এদিকে বিক্ষুব্ধ প্রার্থী এনায়েত উল্লাহ সোহাগ সংবাদ সম্মেলনে পুনরায় নির্বাচন দাবি করেন এবং অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ ব্যাপারে মামলা করবেন বলেও জানিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনে এনায়েত উল্লাহ সোহাগ লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।