জর্জ ওয়াশিংটন দুই মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট। প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হন ১৭৮৯ সালে। ৩০ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন। দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হন ১৭৯২ সালে। তিনিই একমাত্র মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি ১০০ শতাংশ ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কংগ্রেসে ভোটের মাধ্যমে তার বেতন ধরা হয় ২৫ হাজার ডলার- ১৭৮৯ সালে এ বেতন অঙ্ক একটা বড়মাপের অঙ্কই ছিল। ওয়াশিংটন অবশ্য ধনী বাবার সন্তান ছিলেন। তিনি এ বেতন নিতে অস্বীকার করেন। তিনি ইউরোপীয় রাজরাজরার মতো সম্বোধিত হতে পছন্দ করতেন না। তাই তিনি নিজেকে ‘মি. প্রেসিডেন্ট’ সম্বোধনে সম্বোধিত হওয়ার বিষয়টিই বেছে নিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টরা আজো এ ধরনের সম্বোধনেই সম্বোধিত হন। বলতে গেলে এটি এখন সে দেশের রেওয়াজে পরিণত। প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হয় ১৭৯৭ সালে। এরপর তিনি অবসর কাটান তার প্রিয় মাউন্ট ভেরননে। কিন্তু তার অবসর জীবন ছিল মাত্র তিন বছরেরও কম। তিনি মারা যান ১৭৯৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর। তখন তার বয়স ৬৮ বছরের কিছু কম। তার জন্ম ১৭৩২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। এই মৃত্যু তারিখ অবশ্য ১৭৫২ সালে ব্রিটেন ও এর উপনিবেশগুলোতে গৃহীত গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী। কিন্তু ওয়াশিংটনে জন্মের সময় সেখানে কার্যকর ছিল জুলিয়ান ক্যালেন্ডার। সে ক্যালেন্ডার অনুযায়ী তার জন্ম তারিখটি ছিল ১১ ফেব্রুয়ারি ১৭৩১।
১৭৯৯ সালের ১২ ডিসেম্বর। দিনটি ছিল তার মৃত্যুর দুই দিন আগে। তখনো জর্জ ওয়াশিংটন সুস্থ। এ দিনটিতে ভারী বরফ পড়েছিল। তার মধ্যেও ওয়াশিংটন ঘোড়ায় চড়ে দেখাশোনা করেছেন মাউন্ট ভেরননের খামারে চারা লাগানো কাজকর্ম। তাপমাত্রা সেদিন ছিল ৩০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। তারপরও সেদিন বাইরে কাটিয়েছেন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। এই ১২ ডিসেম্বরে তিনি তার ব্যক্তিগত ডায়েরিতে লিখেন :
‘মেঘাচ্ছন্ন সকালের আকাশ। উত্তর-পূর্ব দিক থেকে বাতাস বইছে। তাপমাপন যন্ত্রে পারদের অবস্থান ৩৩-এ। গত রাতে চাঁদের চার পাশে দেখা গেছে একটি গোলাকার চক্র। ১০টার দিকে বরফ পড়তে শুরু করে। একটু পরেই শিলাবৃষ্টি হয়ে বৃষ্টি থেমে যায়, রাতে পারদমাত্রা ছিল ২৮।’
পরদিন ১৩ ডিসেম্বর জেনারেল জানালেন গলা ব্যথার কথা। তারপরও ঘোড়ায় চড়ে বাইরে যান ভারী বরফপাতের মধ্যেই। চিহ্নিত করেন সেই সব গাছ, যেগুলো তিনি কেটে ফেলতে চান। এ সময় তার সাথে যথারীতি ছিল তার নিজস্ব কম্পাস। খাতায় লিপিবদ্ধ করেন তার পর্যবেক্ষণ। ভূমিতেও দেন কিছু চিহ্ন। দিনটি বৃষ্টিময় হয়ে উঠল। কখনো বৃষ্টিপাত। কখনো তুষারপাত। কখনো শিলাবৃষ্টি। এ সময় তার ঘন ঘন হাঁচি আসছিল। নাক দিয়ে পানি ঝরছিল। ঘরে ফিরে জানালেন তার গলা ফেটে কর্কশ ও ফ্যাসফেঁসে আওয়াজ হচ্ছে। সোজা কথায় গলাভাঙা স্বর সৃষ্টি হয়েছে। সন্ধ্যায় স্ত্রী মার্থা ওয়াশিংটন ও পার্সোনাল সেক্রেটারি কর্নেল লেয়ারকে সাথে নিয়ে সংবাদপত্র পড়ে কাটান। তখন তাকে বেশ হাসিখুশিই দেখাচ্ছিল। সংবাদপত্রের কয়েকটা অংশ জোরে জোরেই পড়লেন, যতক্ষণ তার গলাভাঙা স্বর নিয়ে তিনি জোরে জোরে পড়তে পারলেন। যখন কর্নেল বললেন, তার ওষুধ নেয়া দরকার, তখন তিনি তাতে রাজি হননি। বরং বললেন : ‘তুমি জানো, আমি কখনো ঠাণ্ডা তাড়ানোর ওষুধ ব্যবহার করি না। ঠাণ্ডা এসেছে, একে আপনা-আপনি যেতে দাও।’
রাতের বেলা পরিবারের সবার সাথে মিলে জর্জ ওয়াশিংটন সবার কাছে জানালেন তার শরীরটা খারাপ লাগছে। এক কাপ চা খেয়ে ঢুকে পড়লেন তার লাইব্রেরিতে। সেখানে লেখালেখিতে নিজেকে ব্যস্ত রাখলেন রাত ১১-১২টা পর্যন্ত। মিসেস ওয়াশিংটন তার স্বাভাবিক পারিবারিক কাজকর্ম সেরে এসে দেখেন লাইব্রেরির সেই পরিচিত আওয়াজ আর পাওয়া যাচ্ছে না। বন্ধ হয়ে গেছে লাইব্রেরির দরজা। সারারাত লাইব্রেরির দরজা বন্ধই থাকে রাত ১২টার পর থেকে। এরপর ওয়াশিংটন শুয়ে পড়েন। রাতটি ছিল ১৪ ডিসেম্বরের দিনটির আগের রাত। রাত ২টা কিংবা ৩টা। ওয়াশিংটনের ঘুম ভেঙে গেল। কেমন যেন খারাপ লাগছিল। তার স্ত্রীও তার কক্ষে ওয়াশিংটনকে নিয়ে উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিলেন। এক সময় বিছানা ছেড়ে উঠে বসে রইলেন। এক সময় সিঁড়িতে সেই চিরপরিচিত পায়ের আওয়াজ পেলেন। ওয়াশিংটন নেমে আসছেন। ওয়াশিংটনের কক্ষে গেলেন মিসেস ওয়াশিংটন নালিশের সুরে বললেন, কেনো বিছানায় যেতে এতটা দেরি করছেন ওয়াশিংটন। তখন ওয়াশিংটন জবাব দেন : ‘আমার কাজ শেষ হওয়া মাত্র আমি শুতে গিয়েছি। তুমি ভালো করেই জানো, সারা জীবন এটাই আমার অনড় রীতি। আজকের কাজ কখনোই আগামী দিনের জন্য ফেলে রাখি না।’
সে যাই হোক, জেনারেল স্ত্রীকে জানালেন, তার ভালো লাগছে না। তার কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে, শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে, তার পরও তিনি স্ত্রীকে বারণ করেন পাশের ভবনে গিয়ে কাজের মেয়ে ক্যারোলিনকে জাগাতে। তার ভাবনা রাতের ঠাণ্ডা বাতাস তার স্ত্রীর জন্যও ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। সূর্যোদয় পর্যন্ত ভোগান্তির মধ্য দিয়েই তার রাত কাটে। তখন শরীরে জ্বর জ্বর ভাব। সাথে অব্যাহত শরীর ও গলা ব্যথা। সূর্যোদয়ের পরপরই কাজের মেয়ে ক্যারোলিন এলো ফায়ারপ্লেসে আগুন ধরাতে। ক্যারোলিন দেখলেন জেনারেল ওয়াশিংটনের বেশ শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, মিসেস ওয়াশিংটন ক্যারোলিনকে পাঠান কর্নেল লেয়ারকে ডেকে আনতে, কর্নেল লেয়ার এলেন। দেখাল জেনারেল ওয়াশিংটনের বেশ শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তখন তিনি লোক পাঠান অ্যালভিন রাওলিনকে আনার জন্য। তিনি ছিলেন ওয়াশিংটনের এস্টেটের ওভারশিয়ার। তিনি এসে গুড়, সিরকা ও মাখন দিয়ে এক ঔষধি মিশ্রণ তৈরি করেন। ওয়াশিংটন যখন বিভিন্ন উপাদানে তৈরি এই ঔষধি মিশ্রণ গিলতে চাইলেন, তখন তার মধ্যে দম বন্ধ হয়ে আসার মতো এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো। এ সময় তিনি অনেকটা আক্ষেপ-পীড়িত ও ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ওয়াশিংটন তখন সিদ্ধান্ত নেন ব্লাডলেটিং অর্থাৎ রোগ নিরাময়ের জন্য রক্ত ঝরানই হবে তার জন্য উত্তম চিকিৎসা। তিনি অ্যালবিন রাওলিনকে আদেশ দেন আধা পিন্ট রক্ত ঝরানোর জন্য বায়ুর একটি রগ কেটে দেয়ার জন্য। উল্লেখ্য, pint হচ্ছে তরল পদার্থের মাপবিশেষ। ১ পিন্ট=১ গ্যালনের ৮ ভাগের ১ ভাগ=১০ আউন্স বা প্রায় ১০ ছটাক। জেনারেল ওয়াশিংটন এই ব্লাডলেটিং বা রক্তঝরানো পদ্ধতির প্রতি গভীর আস্থা রাখতেন। তিনি তার অনেক নিগ্রো ক্রীতদাসের ওপর এই ব্লাডলেটিং চিকিৎসা পদ্ধতি আরোপ করে সফলতা পেয়েছিলেন। যখন অ্যালবিন রাওলিন এ পদ্ধতি ওয়াশিংটনের ওপর আরোপ করতে অনেকটা ুব্ধভাবে অসম্মতি প্রকাশ করছিলেন, তখন ওয়াশিংটন অনেকটা ধীর-শান্তভাবে তাকে এ কাজে সাহস যোগান :
‘ভয় পেয়ো না। রগের মুখটা যথেষ্ট বড় নয়। আরো অনেক বড় মুখ তৈরি করে বেশি করে রক্ত বের করে দাও।’
কর্নেল লেয়ার উল্লেখ করেছেন মিসেস ওয়াশিংটন এই ব্লাডলেটিংয়ে রাজি ছিলেন। কিন্তু ওয়াশিংটনের আদেশে যখন তা করাই হচ্ছিল, তখন বার বার অনুরোধ করছিলেন খুব বেশি পরিমাণে রক্ত যেন বের করা না হয়। যখন প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হলো, তখন এক টুকরা মলম মাখানো পশমি কাপড় তার ঘাড়ে জড়িয়ে দেয়া হলো। পাগুলো ধুইয়ে দেয়া হলো গরম পানি দিয়ে।
ড. জেমস ক্রেইক ছিলেন তার বন্ধু ও ব্যক্তিগত চিকিৎসক। ঘোড়ায় চড়ে মানুষ পাঠানো হলো জেমস ক্রেইকের বাড়িতে তাকে খবর দেয়ার জন্য। একইভাবে খবর পাঠানো হলো ড. গোস্তাবাস রিচার্ড ব্রাউনের ম্যাবিল্যান্ডের পোর্ট টোবাক্কোর বাড়িতে এবং ভার্জিনিয়ার আলেক্সান্দ্রিয়ায় বসবাসরত বিখ্যাত চিকিৎসক ড. এলিশা কুলেন ডিকের কাছেও। প্রেসিডেন্টের শারীরিক অবস্থা খুব ভালো নয় দেখে ড. জেমস ক্রেইক প্রেসিডেন্টের গলায় উৎপাদক মক্ষিকার শুকনো দেহ ‘ব্লিস্টার অব ক্যানথারাইড’ লাগিয়ে দেন। তিনি দুইবার ব্লাডলেটিং করে ২০ আউন্স রক্ত বের করে নেন। ভয়াবহ গলা ব্যথা চিকিৎসার জন্য সিরকা ও গরম পানির একটি দ্রবণ তৈরি করা হলো। কিন্তু এ দ্রবণ খাওয়াতে গিয়েও দেখা গেল ওয়াশিংটনের দম বন্ধ হয়ে আসার মতো উপক্রম হয়। এরপর শুরু হয় মারাত্মক দুর্দমনীয় কাশি। রগ কেটে ব্লাডলেটিং বা রক্ত ঝরানোর কাজ আরো কয়েকবার করে আরো ৪০ আউন্স রক্ত ঝরানো হলো। জেনারেলের গলায় ব্লিস্টার ক্যানথারাইডস প্রয়োগও অব্যাহত থাকল। মাঝে মধ্যে তার পেট পরিষ্কারের কাজও চলল।
১৪ ফেব্রুয়ারি শনিবার বিকেল ৩টায় এসে পৌঁছান ড. ডিক। তিনি এসে হাত থেকে বের করেন আরো ৩২ আউন্স রক্ত। ড. ব্রাউন এসে পৌঁছান এর সামান্য সময় পর। তিনি জেনারেল পালস পরীক্ষা করেন। তিন চিকিৎসক মিলে সিদ্ধান্ত নেন পারদঘাট ওষুধ ও গাজানো মদজাতীয় ওষুধ পায়ুপথে প্রয়োগের।
বিকেল সাড়ে ৪টা। প্রেসিডেন্ট দেখলেন কোনো ওষুধ কোনো কাজ দিচ্ছে না। ওয়াশিংটনে কর্নেল লেয়ারকে ডেকে আনেন তার কাছে এবং তার মৃত্যুকালীন নির্দেশনা তথা ডায়িং ইনস্ট্রাকশন দেন।
‘আমার মনে হচ্ছে, আমি বিদায় নিতে যাচ্ছি। আমার শ্বাস-প্রশ্বাস আর চলছে না। প্রথম থেকেই আমার বিশ্বাস ছিল এই অসুখ ভয়াবহ বলেই প্রমাণিত হবে। তুমি কি আমার সব সামরিক পত্রাবলি ও দলিলপত্রের রেকর্ডপত্র একত্র করতে পারো, আমার বইগুলো একত্র করতে পারো, কারণ তুমি আর কারো চেয়ে এ বিষয়ে বেশি জানো। মি. রাওনিকে আমার অন্যান্য চিঠিগুলোর রেকর্ড করতে দাও- সে এ কাজটি শুরু করেছে।’
ড. ক্রেইক যখন কক্ষে ঢুকেন, তখন ওয়াশিংটন তাকে বলেন : ‘ডক্টর, আমার কঠিন মৃত্যু হচ্ছে, তবে আমি মরণে ভয় পাই না। আমি প্রথম রোগাক্রান্ত হয়েই বুঝতে পেরেছিলাম, এবার আর রক্ষা নেই। আমার শ্বাস-প্রশ্বাস আর চলতে পারছে না।’
শেষ পর্যন্ত তিনি যখন দেখলেন মৃত্যু সমাসন্ন, তখন তিন চিকিৎসককে উদ্দেশ করে বলতে লাগলেন : ‘আমার মনে হচ্ছে আমি চলে যাচ্ছি। আপনাদের মনোযোগের জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। তবে আমার প্রার্থনা, আমাকে নিয়ে আর দুর্ভোগ পোহাবেন না। আমাকে শান্তিতে চুপচাপ মরতে দিন। আমি আর শ্বাস নিতে পারছি না।’
এই তিন চিকিৎসক রাতের বেলায় জেনারেলের সাথেই রয়ে গেলেন। রাত ৮টায় এবং তার পায়ে ব্লিস্টার অব ক্যানথারাইডস ও কাটাপ্লাজম প্রয়োগ করেন তার পায়ে। ড. ডিক বলেন, প্রেসিডেন্টের শ্বাস-প্রশ্বাসের অবস্থা ক্রমাবনতিশীল। অতএব এখন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে তার শ্বাসনালী ছিদ্র করে দেয়া। নতুন এই ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হয় সর্বশেষ চিকিৎসা-উদ্যোগ হিসেবে। এভাবে অনেক রোগীকে চরম অবস্থা থেকে জীবনে ফিরিয়ে আনার কিছু ঘটনা তখন চিকিৎসকদের জানা ছিল। কিন্তু ড. ক্রেইক ও ড. ব্রাউন উভয়ই এই প্রক্রিয়া অবলম্বনে ড. ডিকের বিরোধিতা করেন। যদিও ড. ডিক যেকোনো প্রতিকূল অবস্থা হলে তার দায়িত্ব নিতে রাজি হওয়ার ব্যাপারে দৃঢ়তা প্রকাশ করেন। ড. ডিক পরবর্তী সময়ে এক জায়গায় উল্লেখ করেন, ‘তার জীবন দীর্ঘায়িত করার জন্যই তার শ্বাসনালী ফুটো করে দেয়ার প্রস্তাব করেছিলাম।’
জেনারেল ওয়াশিংটনও বুঝলেন, তার সময় শেষ। তিনি কর্নেল লেয়ারকে তার সর্বশেষ ডাইং ইনস্ট্রাকশন দিয়ে বললেন : ‘আমি মারা যাচ্ছি, ভালো করে আমার কবর দিয়ো। আমার মৃত্যুর পর সর্বোচ্চ তিন দিন ভোল্টের মধ্যে রেখো। আমার কথা কি বুঝতে পারছ। সময় এসে গেছে।’
কর্নেল লেয়ারের দেয়া বর্ণনা মতে, রাত ১০টায় তার শ্বাস ক্ষীণ হয়ে আসে। শ্বাস নেয়ায় কষ্ট হচ্ছে এমনটিও পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তখন বেশ শান্ত হয়েই শুয়েছিলেন। ঠিক রাত ১০টায় পালস পরীক্ষা করে দেখা গেল তার মৃত্যু হয়েছে।
মিসেস মার্থা ওয়াশিংটন তখন তার বিছানার পাশে পায়ের কাছে বসা। ঠিক তখন মারা গেলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট। যখন মার্থা ওয়াশিংটনকে তার স্বামীর মৃত্যুর কথা জানানো হলো তখন তিনি বললেন, ‘তিনি কী চলে গেছেন? সব কিছুই শেষ হলো। শিগগির আমিও তাকে অনুসরণ করব।’
সাম্প্রতিক প্রকাশনা সূত্রে জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট মারা যান আলজিভ সংশ্লিষ্ট দীর্ঘ অসুবিধার কারণে। ব্লাডলেটিংয়ের মাধ্যমে ওয়াশিংটনের শরীর থেকে প্রায় ৫-৭ পিন্ট। তার মৃত্যুর ৬ সপ্তাহ অন্যান্য চিকিৎসক প্রশ্ন তুলেছেন, তার মৃত্যুর আগে তাকে যথার্থ থেরাপি দেয়া হয়নি।
লেখক : গোলাপ মুনীর, সাংবাদিক
সূত্র : অন্য এক দিগন্ত