সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার মইয়ার হাওরের নারিকেলতলা এলাকার একটি ফসল রক্ষা বাঁধ গতকাল শনিবার বিকেলে ভেঙে গেছে। এতে প্রায় এক হাজার একর জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে।
ধনু নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার বেশ কয়েকটি ফসল রক্ষা বাঁধ ভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে। ইতিমধ্যে চারটি ফসল রক্ষা বাঁধের নিচু অংশ দিয়ে বোরো জমিতে পানি ঢুকতে শুরু করেছে।
সুনামগঞ্জ: গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নারিকেলতলা এলাকার বাঁধটি দুর্বল হয়ে পড়ে। পানির চাপে গতকাল বিকেল চারটার দিকে বাঁধটি ভেঙে যায়। নারিকেলতলা গ্রামের কৃষক সেলু মিয়া জানান, হাওরে তিনি সাত একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছিলেন। বাঁধ ভেঙে তাঁর সব জমির ধান তলিয়ে গেছে। ধানগাছ এক হাত পানির নিচে পড়েছে। আধা পাকা ধান কাটাও যাবে না।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তাদীর আহমদ বলেন, জগন্নাথপুরের সব কটি হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, মইয়ার হাওরের একটি অংশে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় হাওরের কিছু জমির ধান তলিয়ে গেছে। তাঁরা বাঁধটি দ্রুত সংস্কারের জন্য স্থানীয় লোকদের কাজে লাগিয়েছেন।
রাত আটটার দিকে নারিকেলতলা গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য আবদুল মুকিত ঘটনাস্থল থেকে জানান, তাঁরা বাঁধের ভাঙা অংশ সংস্কার করেছেন। এখন আর হাওরে পানি ঢুকছে না।
নেত্রকোনা: খালিয়াজুরীর ধনু নদের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় লক্ষ্মীপুর হাওরের বাঁধ, মৈলখাতা বাঁধ, বয়রার বাঁধ এবং নামা চুনাইর হাওরের বাঁধের নিচু অংশ দিয়ে বোরোখেতে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এ ছাড়া উপজেলার ছোট-বড় ৮৯টি হাওরের মধ্যে মায়েরচর, ঝালখালী, সতিয়া, কীর্তনখোলা, কৃষ্টপুর, পাইয়া, গঙ্গাবদর, চেলা, বাগানিসহ অন্তত ১৫টি হাওরের বাঁধ হুমকির মধ্যে রয়েছে। দ্রুত বাঁধগুলোতে মাটি ভরাট না করলে আর দুই থেকে তিন ফুট পানি বাড়লে যেকোনো সময় পানি ঢুকে হাওরের ফসল তলিয়ে যাবে।
গতকাল সকালে স্থানীয় কয়েকজন কৃষক খালিয়াজুরী সদর মসজিদের মাইকে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ রক্ষায় স্বেচ্ছাশ্রমে কৃষকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। খালিয়াজুরী সদর ইউনিয়নের কুঁড়িহাটি গ্রামের কৃষক মনির হোসেন বলেন, ‘আমার সব জমি লক্ষ্মীপুর হাওরে। যেভাবে পানি ঢুকছে, তাতে খুব আতঙ্কে আছি। ফসল ঘরে তুলতে পারব কি না, জানি না।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি আজ (গতকাল) দুপুরে পরিদর্শনে গিয়ে দেখেছি, লক্ষ্মীপুর হাওর ও মৈলখাতা হাওরের বাঁধের কিছু ফাটল ও নিচু অংশ দিয়ে পানি ঢুকছিল। স্থানীয় লোকজন তাতে মাটি কেটে মেরামতের চেষ্টা করছেন। বিষয়টি জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে (পাউবো) জানানো হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, উপজেলায় এবার ১৯ হাজার ৯২০ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কৃষকেরা প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির পাকা ধান কেটেছেন।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খুশিমোহন সরকার বলেন, ছোট এই বাঁধ দুটি পাউবোর আওতাধীন নয়।
প্রথম আলোর ১০ এপ্রিলের নিউজ