নিকলীর বাইরে থাকা শ্রমজীবীরাও ভোট দিতে আগ্রহী

কারার শোভন আহমেদ ।।

নিকলী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের নির্বাচন খুব কাছে চলে এসেছে। জল্পনা-কল্পনা, হিসাব-নিকাশ, চাওয়া-পাওয়া সব চূড়ান্ত পরিণতিতে যাচ্ছে আর কিছুদিনের মধ্যেই। প্রার্থীরা তাদের প্রতিশ্রুতি নিয়ে ছুটছেন হাট-বাজার, দোকানপাট, মাঠে-ময়দানে, পাড়া-মহল্লায়। প্রতিনিধি নির্বাচনের চুলচেরা হিসাব কষতে যেমন পিছপা হচ্ছেন না ভোটাররা, তেমনি তাদের দাবি-দাওয়াও হুট-হাট করেই তুলে ধরছেন চেয়ারম্যান-মেম্বার প্রার্থীদের কাছে।

এ অঞ্চলে নির্বাচন একটা উৎসবের আমেজ নিয়ে আসে। জীবিকার তাগিদে অনেক খেটে খাওয়া মানুষ দেশ-বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আঞ্চলিক এই আনন্দে তারা শামিল হতে পারছেন না। তাদের সাধ-আহ্লাদ, ইচ্ছা-অনিচ্ছা সবই নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহে নিশ্চয়তার ওপর। যখনই মোটা ভাত, মোটা কাপড়ের টানাপোড়েন সামনে এসে দাঁড়ায়, নির্বাচনকেন্দ্রিক আনন্দটা মিইয়ে যায়।

নিজ এলাকায় কর্মসংস্থানের ঘাটতির ফলে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ অঞ্চলের মানুষজন ছুটে বেড়াচ্ছেন। এর মধ্যে সংখ্যা বিবেচনায় নিকলী উপজেলার প্রায় চার থেকে পাঁচ হাজার মানুষের বসবাস চট্টগ্রামেই। এখানকার নিকলীবাসীদের পেশার মধ্যে রয়েছে রাজমিস্ত্রি, মাটি কাটা, বিভিন্ন দোকান-অফিস-মার্কেটে নাইট গার্ড, রিকশাচালক, মেয়েদের কেউ কেউ গার্মেন্টে, কেউ বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করে থাকেন। শ্রমজীবী এই মানুষদের বেশিরভাগই আর্থিক টানাপড়েনে থাকেন। একদিন কাজ বন্ধ থাকা মানে হলো পরবর্তী দিনের খরচ যোগানে ঘাটতি পড়া। ঘাটতি পূরণে ধার-দেনা বাড়তে থাকে। তাই এসকল মানুষেরা বেকার দিন কাটানোর কোনো ধরনের ঝুঁকি নিতে সাহস করেন না।

শ্রমজীবী অনেকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা নিকলীর ভোটার। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগে সবাই আন্তরিক। ভোট দিতে হলে কমপক্ষে ২/৩ দিন বেকার সময় যাবে। পাশাপাশি আসা-যাওয়ার অতিরিক্ত খরচ। দুই ধরনের খরচের ভার বহন করা তাদের পক্ষে একরকম অসম্ভব। শ্রমজীবী এই মানুষদের আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও সামান্য খরচ যোগানোর অক্ষমতায় পিছু হটতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ভোটার হওয়াটা তাদের কাছে একেবারেই অর্থহীন; মূল্যহীন তালিকার মানুষ হওয়াটা খুবই পীড়াদায়ক।

কেউ কেউ এমন মতও দিয়েছেন, সামর্থ্যের কথা বিবেচনায় যদি সব প্রার্থী মিলে চট্টগ্রামে কর্মরতদের জন্য আসা-যাওয়ার গাড়ির ব্যবস্থা করে দিতেন; তাহলে প্রার্থী নির্বাচনে আমাদের মতামতের প্রতিফলনও ঘটানো যেত। তাদের প্রত্যাশা, এই ক্ষুদ্র প্রস্তাবনাটুকু নিকলীতে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা বিবেচনায় এনে কার্যকরী পদক্ষেপ নিবেন।

লেখক : বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কর্মরত

Similar Posts

error: Content is protected !!