বাংলা নববর্ষ যাদের জীবনে প্রভাব ফেলেনি

মোহাম্মদ কবীর হোসেন।।

দেশের প্রধান সম্পদ হচ্ছে দক্ষ মানব গোষ্ঠী। পৃথিবীর বিশাল জনসমষ্টির দেশ চীন তাদের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করে বিশ্বের উদীয়মান সুপার পাওয়ারের পথে। ভারত তার দক্ষ জনশক্তি বিদেশ রফতানি করে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ করছে।

মানবসম্পদ তৈরির সুতিকাগার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর কারিগর হচ্ছে শিক্ষক সমাজ। আমাদের দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো অযত্নে, অবহেলায় গড়ে উঠছে। দেখার মতো কেউ নেই। যেন অভিভাবকহীন। যদিও সুদীর্ঘকাল পর প্রাথমিক শিক্ষার বৈষম্য দূরীভূত হয়েছে। মাধ্যমিক স্তরে ৯৫ ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেসরকারী। মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জনবল নানা বৈষ্যম্যের যাতাকলে পিষ্ট। অথচ মাধ্যমিক স্তরে ফলাফল বেসরকারীদের অবদানে সমৃব্ধ। সরকারী প্রতিষ্ঠান হাতেগোনা কয়েকটি। এ বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে পাশ কাটিয়ে বা উন্নয়ন প্রক্রিয়ার বাইরে রেখে আদৌ মাধ্যমিক স্তরে কাঙ্খিত ফললাভ করা সম্ভব নয়। যেভাবেই হোক বিগত সকল সরকারের আমলে বেসরকারী শিক্ষক সমাজকে জাতীয় পে-স্কেলের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। এবারো পানি যখন ঘোলা হওয়ার উপক্রম তখন নানা নাটকীয়তায় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তির ঘোষণা আসে।

স্কেলে অন্তর্ভুক্ত হলেও সরকারী কর্মকর্তাগণ প্রতিবছরই একটি ইনক্রিমেন্ট পান। অথচ বেসরকারী শিক্ষকগণ পুরো চাকুরী জীবনে একটিমাত্র চিরস্থায়ী ইনক্রিমেন্ট নিয়েই তৃপ্ত থাকতে হয়। মেডিকেল ভাতা ৩০০ টাকা, বাড়ি ভাড়া ৫০০ টাকা। এক বারের সর্দি-কাশি সারাতেই তিনশত খরচ হয়। ৫০০ টাকা বাড়ি ভাড়ায় গাছ তলায়ও থাকা যায় না। সরকার বৃহৎ জনগোষ্ঠীর আর্তচিৎকার চেচামেচি আমলে না নিয়ে ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষণে প্রয়াসী। তেলের মাথায় তৈল মর্দন।

স্কেলে বৈশাখী উৎসবে ভাতা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। অত্যন্ত সময়োপোগী সিদ্ধান্ত। শিক্ষকগণ অনেক কষ্টে স্কেল পেলেও তাদের বৈশাখী ভাতা হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। তাতে করে সরকার বেসরকারী শিক্ষকদের মনের ক্ষতকে আরো বেশি প্রকট করে তুলছে। অনেক শিক্ষককে বলতে শুনেছি, আমাদের তো বৈশাখী নেই, বৈশাখী তো শুধু সরকার এবং সরকারের লোকজনের জন্য। বৈষম্যের জন্য অনেক শিক্ষক হীনমন্যতায় ভুগছেন! এবং বলছেন, কোন আজব দেশে বাস করি! এদেশে কিছু অনুষ্ঠান ধর্মের রঙে রঙ্গীন, কিছু অনুষ্ঠান মর্মের রঙ্গে রঙ্গীন। বৈশাখী বাঙালী জাতির জীবনে সার্বজনিন এবং মর্মের রঙে রঙ্গীন একটি অনুষ্ঠান। এবারই বেরসরকারী শিক্ষকদের মনে কালিমা রেখা দেখা দিয়েছে। তাদেরকে বৈশাখী ভাতা না দিয়ে পহেলা বৈশাখের আনন্দ থেকে দূরে রাখা হয়েছে। অথচ শিক্ষামন্ত্রণালয় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে আনন্দ-উৎসবমুখর পরিবেশে পহেলা বৈশাখ পালনের নির্দেশনা জারি করে। আর (জুলাই-মার্চ পর্যন্ত) নয় মাসের বকেয়া তো ঝুলছেই।

আর গড়িমসি নয়। যাদের অবদানে মাধ্যমিক শিক্ষাস্তর সমৃব্ধ তাদের প্রতি নজর দিতে হবে। প্রাথমিক স্তরের মতো মাধ্যমিক স্তরে সরকারিকরণের ঘোষণা দিয়ে বৈষম্য দূর করতে হবে। এক দেশে দুই শিক্ষানীতি চলতে পারে না। অবিলম্বে মাধ্যমিক শিক্ষাস্তরকে জাতীয়করণের ঘোষণা দিন।

লেখক : সিনিয়র শিক্ষক, আব্দুল জব্বার রাবেয়া খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, খালিয়াজুরী, নেত্রকোনা।

Similar Posts

error: Content is protected !!