নিষিদ্ধই রয়ে গেছে হিন্দু বিধবা বিবাহ!

nikli hindu bidhoba bibaho

সৈয়দ বয়তুল আলী, মৌলভীবাজার

পাঁচ বছর ধরে একঘরে করে রাখা হয়েছে মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের বিজলী গ্রামের মৃত মুক্তেশ্বর দেবনাথের তৃতীয় কন্যা টপি রানী নাথকে (২৯)। কান্নাজড়িত কণ্ঠে টপি প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমার প্রথম স্বামী মারা যাওয়ার পর দ্বিতীয় বিয়ে করার কারণে আমাকে ও আমার পরিবারকে পাঁচ বছর ধরে একঘরে করে রেখেছেন গ্রামের মোড়লরা।

১৬০ বছর আগে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর হিন্দু বিধবা নারীদের বিবাহপ্রথা চালু করলেও আজ অবধি বিধবাদের ওপর চলছে মোড়লদের অত্যাচার। মায়ের চরণে পুজো দিতে ও পুষ্পার্ঘ অর্পণ করতে পারি না। শুধু তাই নয়, আমার কারণে পরিবারের ওপর সামাজিক নিষেধাজ্ঞা জারি করায় আমার ভাইও বিয়ে করতে পারছেন না।’ প্রথম স্বামী জুড়ী উপজেলার দীঘলবাগ গ্রামের সত্যেন্দ্র দেবনাথের মৃত্যুর পর পাঁচ বছরের ছেলেকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে নানান যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে পিতৃহারা ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে বিকাশ মিত্র নামে এক তরুণকে বিয়ে করেন টপি। ওঠেন বাবার বাড়িতে। সেখানে গ্রাম্য মুরব্বিদের রীতিমতো প্রতিরোধের মুখে পড়েন পরিবারকে নিয়ে টপি।

টপির মা প্রণতী রানী নাথ জানান, নানান ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হয় মেয়ের স্বামীকে আর তাকে চাপ দেয়া হয় শাঁখা-সিঁদুর ফেলে দিতে। বন্ধ করে দেয়া হয় সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান ও পূজা-পার্বণে অংশ নেয়ার সুযোগও। তার ছেলে সুমিত দেবনাথ ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। একটি মুসলিম পরিবার ছাড়া গ্রামের আর কেউ কথা বলে না। মানসিকভাবে সুমিতও স্বাভাবিক হতে পারছে না।

এদিকে, গ্রাম্য মোড়ল বিশ্বজিৎ দেবনাথ, রঞ্জিত শর্মা, হীরালাল দেবনাথ ও কাকাতো ভাই অধীর দেবনাথের বিরুদ্ধে মানবাধিকার কমিশনের মাধ্যমে আইনগত নোটিস পাঠানোর পরও অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। যদিও বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন মৌলভীবাজার জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট কিশোরী পদ দেব শ্যামলের বক্তব্য, মানবাধিকার কমিশন থেকে তাদের চাপ দেয়া হয়েছে বিষয়টির দ্রুত সমাধানের জন্য। মানবাধিকার কমিশন টপির হয়ে গ্রামের সংশ্লিষ্ট মোড়লদের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

Similar Posts

error: Content is protected !!