স্মৃতির পাতায় অমলিন জয়নাল আবেদীন সরকার

joynal abedin nikli-khaliajuri

কবির হোসেন, খালিয়াজুরী (নেত্রকোনা) সংবাদদাতা ।।

জয়নাল আবেদীন সরকার। ডাক নাম দারু মিয়া। পিতা-মাতা আদর করে দারু মিয়া বলেই ডাকতেন। ১৯২৭ সালের ৬ সেপ্টেম্বর নেত্রকোনা জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার কল্যাণপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম । পিতা মুর্তুজ আলী সরকার অঞ্চলের বিশিষ্ট সম্পদশালী ও মাতব্বর ছিলেন। শৈশবেই অত্যন্ত মেধবী তীক্ষ্ণ বুব্ধিসম্পন্ন ছিলেন। তৎকালীন সময়ে এলাকায় স্কুল-কলেজ না থাকায় নরসিংদির সিরাজনগর স্কুলে ভর্তি হন। সিরাজনগর হাইস্কুল থেকে ১৯৪৩ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে পাস করেন। ডাক আসে পাকিস্তান নৌ বাহিনীতে। বাবার অনিচ্ছার কারণে যাওয়া হয়নি নৌবাহিনীতে। আত্মনিয়োগ করেন সমাজসেবায়। ১৯৫৯ সালে এলাকার গণমানুষের অনুরোধে কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে প্রথমবারের মতো পাস করেন। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পরপর সুদীর্ঘ ৩২ বছর একাধারে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে তাক লাগিয়ে দেন । ১৯৮৯ সালে খালিয়াজুরী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের মৃত্যুজনিত কারণে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবেও সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
joynal abedin nikli-khaliajuri
এলাকায় কোনো মাধ্যমিক স্কুল না থাকায় ১৯৬৯ সালে নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেন কুতুবপুর পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়। শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে তিনি নিজে স্কুলে শিক্ষকতা করেন। সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন আমৃত্যু। কুতুবপুরে নির্মাণ করেন ইউনিয়ন কার্যালয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সার্বিক সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেন। এলাকার অনেক হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন তার কাছে মালামাল গচ্ছিত রেখে ভয়ে ভারত চলে যান। যুদ্ধ শেষে ফিরলে প্রত্যেকের মালামাল পুংখানুপুংখ বুঝিয়ে দেন। আর যারা এলাকায় ছিলেন তাদেরকে অভয় দিয়ে, সাহস দিয়ে নিরাপদ রাখেন। বিশেষ করে তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হন। প্রথম জীবনে ন্যাপের সাথে জড়িত থাকলেও পরবর্তীতে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।

নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন মসজিদ, মাদ্রাসা। কৃষ্ণপুর ঈদগাঁ মাঠ, আলীম মাদ্রাসা, কৃষ্ণপুর হাজী আলী আকবর পাবলিক ডিগ্রী কলেজ, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। সভাপতি হিসেবে কৃতিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করেন অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের ।

তার মেঝো সন্তান এনামুল হক সোহেল বলেন, বাবা অত্যন্ত কোমল ও উদার হৃদয়ের অধিকারী ছিলেন। তিনি ছিলেন গরীব, দুঃখী, মেহনতি মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল। সকল প্রকার রাগ ও ঈর্ষার উর্ধ্বে ছিলেন। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এলাকায় কোনো শালিসে উপস্থিত না হলে শালিস হতো না। খ্যাতি, যশ, সুনাম ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের এলাকাগুলোতে। শালিসের জন্য যেতে হয়েছে পার্শ্ববর্তী উপজেলা ইটনা, শাল্লা, দিরাই পর্যন্ত। রাতের পর রাত  কাটিয়েছেন শালিসে।

তার একনিষ্ট সহকর্মী কৃষ্ণপুর গ্রামের দারগ আলী মুন্সী বলেন, রাত-বিরাত নেই যখন যে সময় ডাক দিয়েছি তখনই পেয়েছি। মানুষের সমস্যায় ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। এমন ক্ষণজন্মা পুরুষ আর জন্ম নিবে না। তিনি ছিলেন একজন সফল চেয়ারম্যান। বাংলাদেশে একাধারে এত অধিক সময় কেউ চেয়ারম্যান ছিলেন কিনা সন্দেহ আছে। বার্ধক্যজনিত কারণে রোগাক্রান্ত হয়ে ২ জুন ২০১২ এ মহান ব্যক্তি ইন্তেকাল করেন।

Similar Posts

error: Content is protected !!