বিশেষ প্রতিনিধি ।।
কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন শেষে বাড়ি ফেরার পথে ট্রলারডুবিতে পাঁচ নারী আনসার সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল ভোর ৫টার দিকে মিঠামইন উপজেলা সদরের লঞ্চঘাটে এই ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটে। নিহতদের সবার বাড়ি জেলার নিকলী উপজেলায়। এ ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
নিহতরা হচ্ছেন, নিকলী উপজেলার উত্তর দামপাড়া গ্রামের সাহেবহাটির মো: হবি মিয়ার স্ত্রী সাবিনা আক্তার (৪০), দামপাড়া গ্রামের টেকপাড়ার মৃত নারায়ণ সূত্রধরের স্ত্রী বিউটি সূত্রধর (৪০), একই গ্রামের রফিকুল ইসলামের স্ত্রী হাসনা আরা (৩৮), জারইতলা ইউনিয়নের সাজনপুর গ্রামের মো: আব্দুল মন্নানের স্ত্রী মোমেনা আক্তার (৪৫) ও জারইতলা গ্রামের ফজলু মিয়ার স্ত্রী আম্বিয়া খাতুন (৪২)। তাদের মধ্যে হাসনা আক্তার নিকলী উপজেলার দামপাড়া ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংরতি আসনের নারীসদস্য ও আনসার দলের নেত্রী।
ট্রলারডুবির খবর পেয়ে এলাকায় ভিড় করেন নিহতদের স্বজন ও এলাকাবাসী। ঘটনাস্থলে ছুটে যান কিশোরগঞ্জ-৪ নির্বাচনী এলাকার এমপি রেজওয়ান আহমেদ তৌফিক, কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো: আজিমুদ্দিন বিশ্বাস, পুলিশ সুপার মো: আনোয়ার হোসেন খান, আনসার ও ভিডিপির সার্কেল অ্যাডজুটেন্ট এস এম শরীফুল আলম। এ ছাড়াও বিকেলে ঢাকা থেকে আসেন আনসার ভিডিপির উপ-মহাপরিচালক দিলীপ কুমার বিশ্বাস, ঢাকা রেঞ্জের পরিচালক মো: শরিফুল আলম।
বেঁচে যাওয়া আনসার সদস্যরা জানান, গত শনিবার বিভিন্ন কেন্দ্রে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন শেষে রাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে জেগে রাত কাটান তারা। গতকাল ভোরে একটি ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে শতাধিক আনসার-ভিডিপি সদস্য বাড়ি ফিরছিলেন। মিঠামইন বাজার ঘাট থেকে ছাড়ার আগেই অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাইয়ের কারণে ঘোড়াউত্রা নদীতে ডুবে যায় ট্রলারটি। এতে ট্রলারে থাকা অন্তত ২০ জন্য নারী আনসার সদস্য ভেতর আটকা পড়েন। সাথে সাথে আশপাশের লোকজন উদ্ধার অভিযান চালায়। কিন্তু এরই মধ্যে নৌকার ভেতরে পাঁচ নারী মারা যান।
উদ্ধার তৎপরতার একপর্যায়ে সকাল ৭টার দিকে ঘোড়াউত্রা নদী ও ডুবে যাওয়া ট্রলার থেকে সাবিনা আক্তার, বিউটি রানী সূত্রধর, হাসনা আক্তার ও মোমেনা আক্তার এই চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে সকাল ৮টার দিকে আম্বিয়া খাতুনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ট্রলারটির আর কোনো যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খান জানান, অতিরিক্ত যাত্রী বহন করায় হুড়াহুড়ির কারণে নৌকাটি ছাড়ার আগেই ডুবে যায়। ঘটনার পর থেকে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় ডুবুরিরা চেষ্টা চালিয়ে লাশ উদ্ধার করেন।
জেলা প্রশাসক মো: আজিমুদ্দিন বিশ্বাস জানান, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নিহতেদের প্রত্যেক পরিবারকে প্রাথমিকভাবে ২০ হাজার টাকা, ৫০ কেজি চাল দেয়া হয়েছে।
আনসারের উপ-মহাপরিচালক দিলীপ কুমার বিশ্বাস জানান, নিহতের প্রত্যেক পরিবারকে আনসারের পক্ষ থেকে ৩ লাখ টাকা করে অনুদান দেয়া হবে।
এ দিকে দুপুরের পর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।