ফরমালিন নিয়ে যখন দেশবাসী চরমভাবে উদ্বিগ্ন ঠিক তখন বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. মোবারক আহম্মদ খান আবিষ্কার করলেন এই ফরমালিনের বিকল্প চিংড়ির খোসা। এই খোসা থেকেই পাওয়া যাবে কাইটোসেন। যা মাছ, ফল, সবজিসহ বিভিন্ন খাদ্য সংরক্ষণে কার্যকর।
দেশব্যাপী সাম্প্রতিক সময়ে ফরমালিন নিয়ে চিন্তার শেষ নেই। কারণ মাছ, মাংস থেকে শুরু করে ফল, শাক, সবজি সব কিছুতেই ক্ষতিকর ফরমালিন ব্যবহার করা হচ্ছে। মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এই রাসায়নিক উপাদান ফরমালিনকে প্রতিরোধ করার যখন কোনই উপায় ছিল না তখন বাংলাদেশের এক কৃতি সন্তান বিজ্ঞানী ড. মোবারক আহম্মদ খান আবিষ্কার করলেন এই ফরমালিনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে চিংড়ির খোসা। এই আবিষ্কার এদেশের মানুষকে স্বস্থির নি:শ্বাস ফেলতে সাহায্য করবে।
জানা গেছে, ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান ফরমালিন-এর বিকল্প আবিষ্কার করেছেন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বিজ্ঞানী ড. মোবারক আহম্মদ খান। তাঁর দীর্ঘ গবেষণায় আবিষ্কার করেছেন, খাদ্য সংরক্ষণে ফরমালিনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে কাইটোসেন। চিংড়ির ফেলে দেওয়া খোসা হতে প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি হয় এই কাইটোসেন। এটি ব্যয়সাশ্রয়ী অথচ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নয়।
ড. মোবারক ইতিমধ্যে বিভিন্ন রকম ফল এবং সবজি সংরক্ষণে চিংড়ির খোসা থেকে তৈরি কাইটোসেন ব্যবহার করে সফলও হয়েছেন। এখন তাঁর এই গবেষণা প্রয়োগ করা হবে মাছের ওপর। তারপর শুরু হবে বাণিজ্যিকভাবে এর ব্যবহার।
গত ৩ বছর ধরে গবেষণার পর তিনি কাইটোসেন ব্যবহার করে আম ২ হতে ৩ সপ্তাহ, লিচু ১২ হতে ১৩ দিন, আনারস ১০ হতে ১২ দিন, করলা হিমায়িতভাবে প্রায় ১৮ দিন ও টমেটো ২১ দিন সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন বলে তিনি সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন। এতে খাদ্যের গুণগত মান, আকৃতি, রং ও স্বাদের কোনো পরিবর্তন ঘটবে না।
ড. মোবারক সংবাদ মাধ্যমকে এ বিষয়ে বলেন, দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহার করেই চাহিদা অনুযায়ী কাইটোসেন উৎপাদন করা সম্ভব। বাণিজ্যিকভাবে প্রতি কেজি আমে এক টাকার কাইটোসেনই যথেষ্ট। সবজি সংরক্ষণে খরচ পড়বে মাত্র ৪০ পয়সা। প্রতি কেজি চিংড়ি হতে ৬০ গ্রাম খোসা পাওয়া যায়। সে হিসাবে ৬ কেজি চিংড়ির খোসা হতে ১ কেজি কাইটোসেন তৈরি হবে, এটি তৈরিতে খরচ হবে ২০ হাজার টাকা। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে রাসায়নিকভাবে কাইটোসেন তৈরিতে ১ লাখ টাকা খরচ হয়ে থাকে।
এই কাইটোসেন তৈরিতে চিংড়ির খোসা ধোয়ার জন্য ৩ শতাংশ হারে সোডিয়াম হাইড্রো-অক্সাইড (কস্টিক সোডা) ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই খোসা ধুয়ে পরিষ্কারের পর তৈরি করা হয় কাইটিন। তিনি গবেষণায় গামা রশ্মির রেডিয়েশনের মাধ্যমে কাইটিন হতে কাইটোসেন তৈরি করেন বলে জানান। খাদ্য সংরক্ষণে রেডিয়েশন প্রযুক্তি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) ও যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অনুমোদিত নিরাপদ একটি প্রক্রিয়া। অন্য কোনো রাসায়নিক ব্যবহার হয় না বলে এটিতে কোনো পরিবেশ দূষণ হয় না।
ড. মোবারক আরও জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সম্প্রতি এক বৈঠকে তাঁর এই আবিষ্কারের বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে ১৩ সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটির বৈঠকে বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে খতিয়ে দেখতে অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে মাছের ওপর কাজ শুরু করার জন্যও অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
এই বিজ্ঞানীর আবিষ্কার এদেশের সাধারণ মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর সুফল বয়ে আনবে। যুগান্তকারী এই আবিষ্কার দেশের কাজে সঠিকভাবে ব্যবহার হবে এটিই সকলের বিশ্বাস।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে গড়ে বছরে চিংড়ির খোসা পাওয়া যায় ১৫ হাজার টন। তা থেকে কাইটোসেন উৎপাদন হবে ২৫০ টন। খাদ্য সংরক্ষণের জন্য ওই পরিমাণকে যথেষ্ট মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।