কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা ।।
খাদ্যশস্য ছাড়াও কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা শাকসবজি এবং মসলা জাতীয় ফসল আবাদের জন্য বেশ উপযোগী। সাধারণত শীতকালেই সারাদেশে সর্বাধিক পরিমাণ শাকসবজি এবং মসলা জাতীয় ফসল উৎপাদিত হয়ে থাকে। কিন্তু ‘খরিপ মৌসুম’ নামে পরিচিত বছরের এই সময়টাকে এসব কৃষি পণ্যের জন্য ‘ক্রাইসিস পিরিয়ড’ আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। তবে খরিপ মৌসমে দেশের অনেক জেলা শাকসবজি এবং মসলা জাতীয় ফসলের সঙ্কাটে ভুগলেও কিশোরগঞ্জের জনগণ এই সময়টাতে মোটামুটি বাজারে এসব পণ্য কিনতে পান।
অবশ্য শীতকালে শাকসবজি এবং মসলা জাতীয় পণ্য বেশ সস্তায় পাওয়া গেলেও খরিপ মৌসুমে দামটা বেশ চড়া থাকে। শীতকালের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে এসব পণ্য বিক্রি হয়। আর শীতকালে শাকসবজি এবং মসলা জাতীয় পণ্যের জাতের বৈচিত্র্য যেমন দেখা যায়, আবার ফলনও হয় বেশি। কিন্তু খরিপ মৌসুমে শাকসবজির জাত তুলনামূলক কম এবং ফলনও হয় কম। অবশ্য যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে কৃষি বিজ্ঞানীরা শীতকালীন অনেক শাকসবজির গ্রীষ্মকালীন জাতও উদ্ভাবন করেছেন। আর অনেক উচ্চ ফলনশীল জাতও উদ্ভাবন করেছেন। যে কারণে ২০ বছর আগে যেমন খরিপ মৌসুমে বাজারে শাকসবজির প্রচ- ঘাটতি পরিলক্ষিত হতো, এখন অবস্থাটা সেরকম নয়। এখন খরিপ মৌসুমেও বাজারে পর্যাপ্ত শাকসবজি পাওয়া যায়। আর মসলা জাতীয় ফসলের মধ্যে শীতকালে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ আর মরিচের পর্যাপ্ত আবাদ হলেও সাধারণত খরিপ মৌসুমে বাজারে কাঁচা মরিচের বেশ সঙ্কট দেখা দিত। দাম থাকতো আকাশ ছোঁয়া। কিন্তু কয়েক বছর ধরে খরিপ মৌসুমে প্রচুর জমিতে মরিচের আবাদ হচ্ছে। ফলে খরিপ মৌসুমে, বিশেষ করে বর্ষাকালেও বাজারে পর্যাপ্ত কাঁচা মরিচ পাওয়া যায়। তবে আকাশ ছোঁয়া না হলেও দামটা শীতকালের চেয়ে অনেক বেশিই থাকে। শীতকালে যেখানে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ২০ টাকায় কেনা যায়, খরিপ মৌসুমে সেই মরিচটা কিনতে হয় ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। এছাড়া শীতকালীন মরিচ থেকে মৌসুমের শেষদিকে পাওয়া যায় শুকনো মরিচ। কিন্তু খরিপ মৌসুমের জমি থেকে কেবল কাঁচা মরিচই আহরণ করা হয়। আর শীতকালীন মরিচের তুলনায় খরিপ মৌসুমের মরিচে ঝালও থাকে বেশি।
শীতকালে জেলার হাওরাঞ্চলেও প্রচুর জমিতে মরিচের আবাদ হয়। কিন্তু এখন হাওরাঞ্চল বর্ষার পানিতে পুরো ডুবে আছে। ফলে কেবল জেলার উঁচু উপজেলাগুলোর জমিতেই খরিপ মৌসুমের শাকসবজি এবং মরিচের আবাদ চোখে পড়ে। তবে সর্বাধিক মরিচের জমি চোখে পড়ে পাকুন্দিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। পাকুন্দিয়ার চরফরাদী এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বহু জমিতে মরিচের আবাদ করা হয়েছে। এসব জমির মরিচ বাজারে আসতেও শুরু করেছে। জেলা খামার বাড়ি সূত্রে জানা গেছে, চলতি খরিপ মৌসুমে সারা জেলায় ৪ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন শাকসবজির আবাদ করা হয়েছে। আর মরিচের আবাদ হয়েছে ৫৯৫ হেক্টর জমিতে। তবে শীতকালে সারা জেলায় মরিচের আবাদ হয় প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে। তখন কিশোরগঞ্জের মরিচের চালান যায় দেশের নানা প্রান্তে।