জি আর শিপন, মহাস্থান (বগুড়া) সংবাদাতা ।।
গোবিন্দগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় মহাস্থানের এক পরিবারের প্রধান উপার্জনক্ষম প্রতিবন্ধী শিশুর করুণ মৃত্যু হয়েছে। মহাস্থানের ভূমিহীন, অসহায় বিকলাঙ্গ প্রতিবন্ধী শিশু সাকিল (১২) পেশায় একজন ভিক্ষুক। তার মায়ের নাম আলেয়া বেওয়া। সে গোকুল উত্তরপাড়া ভাড়ার বাড়িতে থাকতো। তার জন্মের পরপরই পিতা মারা যায়। সেই থেকে তাদের পরিবারে নেমে আসে দরিদ্রতার ঝড়। অভাব, অনটনের সংসারে একটু সচ্ছলতা আনতে তখন থেকেই প্রতিবন্ধী সাকিল বেছে নেয় ভিক্ষাবৃত্তির পথ।
তার বিকলাঙ্গ চলাফেরায় কারো কাছে হাত পাতলে কেউ তাকে না করত না। তার ভিক্ষার টাকা দিয়েই বড় বোন নাজমার ভালো পরিবারে বিয়ে হয়েছে। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিনের মতো প্রতিবন্ধী সাকিল বুধবার ১৫ জুন সকালে ভিক্ষার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৪টায় গোবিন্দগঞ্জের ফাসিতলা এলাকায় ভিক্ষা শেষে মহাসড়ক পারাপার হয়ে বগুড়ামুখী বাসস্ট্যান্ডে আসার পথে রংপুর থেকে রাজশাহীগামী একটি যাত্রীবাহী চলন্ত বাস তাকে চাপা দেয়। এতে তার ডান হাত চাকায় পৃষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই তার করুণ মৃত্যু হয়। ঘাতক বাসটিকে স্থানীয়রা ধাওয়া দিয়ে আটক করেছেন। পরে গোবিন্দগঞ্জ থানার হাইওয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে তাদের হেফাজতে রাখে।
এদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় সাকিলের বাড়িতে নিহতের সংবাদ পৌঁছিলে সেখানে শোকের ছায়া নেমে আসে। দুর্ঘটনার খবর শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে যান বগুড়া নিরাপদ সড়ক চাই-এর সদস্য ও আমাদের নিকলী ডটকম-এর মহাস্থান প্রতিনিধি সাংবাদিক গোলাম রব্বানী শিপন। তিনি রাত ১১টা পর্যন্ত উপস্থিত থেকে যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে নিহতের ভগ্নিপতি সাবলু মিয়াসহ লাশ নিয়ে বাড়ি ফেরেন। রাত সাড়ে ১২টায় তার ভগ্নিপতির বাড়িতে জানাজা শেষে লাশ দাফন করা হয়।
উল্লেখ্য, গত কয়েক মাস আগে অপর একটি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সাকিলের নানীও পঙ্গু হয়ে পড়ে আছেন। এদিকে সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে নিহতের সংবাদ পেয়ে বগুড়া জেলা নিরাপদ সড়ক চাই কমিটির সভাপতি রোটাঃ মোস্তাফিজার রহমান, সাধারণ সম্পাদক মোঃ রকিবুল ইসলাম সোহাগ, কার্যকরী সদস্য রায়হান আহম্মেদ রানা, এস আই সুমনসহ জেলা-উপজেলার বিভিন্ন “নিসচা” সংগঠন ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করে শোকসন্তপ্ত পরিবার-পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করে তাদেরকে ধৈর্য্য ধারণ করার অনুরোধ জানিয়েছেন।