স্বাস্থ্যহীন নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স!

সব আছে, তবুও নেই এর তালিকা এখানে বড়। তাই কি নেই জানতে না চেয়ে কি আছে জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষের উত্তর দেয়া সহজ হয়। সহজেই সামর্থ্যরা ছুটতে পারে শহরে বন্দরে, অসমর্থ্যদের ভাগ্য নির্ভর কেবল মৃত্যুর প্রহর গোনায়। চিকিৎসক স্বল্পতা, জরাজীর্ণ ভবন আর কর্তৃপক্ষের অবহেলায় দীর্ঘ দিন যাবৎ নিজেই স্বাস্থ্যহীন হয়ে আছে হাওর জনপদের দু’লক্ষাধিক মানুষের একমাত্র চিকিৎসা সেবার নিকলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি।

বিশ্বস্ত সূত্র ও সরজমিনে দেখা যায়, ২০০৯ সালের দিকে এক্স-রে মেশিনটি নষ্ট হলে মাত্র কয়েকদিন আগে সেটি মেরামত করা হয়। কিন্তু টেকনিশিয়ান আসাদুজ্জামান ডেপুটেশনে অন্যত্র কাজ করায় এক্স-রে বিভাগ থাকলেও রোগীরা বঞ্চিত। কর্তৃপক্ষের বারবার তাগিদের পরও তাকে স্ব-স্থলে আনা বা অন্য কাউকে নিয়োগ না দেয়ায় যেতে হচ্ছে ২৬ কিলোমিটার দূর জেলা শহরে। ডেন্টাল সার্জন ডা. খালিদ রশিদ রয়েছেন দির্ঘ দিন যাবৎ অননুমোদিত ছুটিতে। তার বিরুদ্ধে ডিপার্টমেন্টাল মামলা হলেও এখন পর্যন্ত অন্য কোন সার্জনকে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। সহকারী জামাল উদ্দিনও ডেপুটেশনে স্ব এলাকায় চলে যাওয়ায় ডেন্টাল বিভাগের যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন যাবৎ অব্যবহৃত অবস্থায় অকেজো হয়ে পড়ে আছে যত্রতত্র। বর্তমানে কক্ষটি ব্যবহৃত হচ্ছে বহিঃবিভাগ হিসাবে। দুপুর ১২টার পর বহিঃবিভাগে রোগী দেখা শেষ হলে ফেলে রাখা হয় অরক্ষিত অবস্থায়। ডেন্টাল চেয়ারটি ব্যবহৃত হয় রিপ্রেজেন্টিটিভদের বিশ্রামাগার হিসাবে। ফলে দিনে দিনে নেই হয়ে যাচ্ছে অনেক মূল্যবান যন্ত্রপাতি। ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের ভবনগুলি ২০০৮ সালে শুরু হয়েও এখন পর্যন্ত শেষ না হওয়ায় আগের জরাজীর্ণ ভবনে চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। গাইনী ডা. মাফরোহা হক এখানে বদলীর আদেশ থেকেই ২ বছর যাবৎ ডেপুটেশনে জেলা সদর হাসপাতালে। সার্জারী ও এনেসথেসিয়া ডাক্তারের অভাবে ইউসি বিভাগের জন্য আলাদা ভবন থাকলেও ভবনের নীচতলা প্রশাসনিক ভবন হিসাবে এবং উপর তলাটি ডাক্তারদের কোয়ার্টার হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। গত প্রায় ৩মাস ধরে বিকল হয়ে আছে হাসপাতালের একমাত্র এম্বুলেন্সটি। জরুরী রোগী পরিবহন অসুবিধার কারণে রোগী ও স্বজনরা পড়ছে বিপাকে। মাসখানেক আগে হাসপাতাল থেকে রেফার্ডকৃত সুলেমা নামে এক প্রসূতীকে অন্যত্র নেয়ার প্রস্তুতিকালে বাচ্চা প্রসব হয়ে রাস্তায় পড়ে নবজাতকের মৃত্যু হয়। ফলে, সব থেকেও উপজেলাবাসী শুধু কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে বঞ্চিত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা থেকে। এ ব্যপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবদুল মজিদ হাসপাতালটির নানাবিধ সমস্যার কথা স্বীকার করে জানান, ডাক্তার স্বল্পতার বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। বেশ কয়েকজন ডাক্তার দেয়াও হয়েছে। আরও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের প্রয়োজন। এম্বুলেন্সটির বিষয়ে বলেন, টেমোর কাছে পাঠিয়েছিলাম। প্রায় পৌনে ৫ লাখ টাকার মালামাল লাগবে বলে তারা জানিয়েছে। এ টাকার জন্যে কর্তৃপক্ষের নিকট এবং নতুন একটি এম্বুলেন্সের জন্য মাননীয় সংসদ সদস্যের মাধ্যমে আবেদন করেছি। ইউসি বিল্ডিংয়ে অফিস স্থানান্তর বিষয়ক বলেন, সাথে ও পরের সব উপজেলার ৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ শেষ হলেও অজ্ঞাত কারণে এখানকারটি শেষ না হওয়ায় ডাক্তারদের থাকা এবং কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যহত হচ্ছে। উর্দ্ধতনের নির্দেশ সাপেক্ষেই ইউসি বিল্ডিং ব্যবহার করা হচ্ছে।

খাইরুল মোমেন স্বপন

বিশেষ প্রতিনিধি, আমাদের নিকলী

Similar Posts

error: Content is protected !!