মো: আল আমিন, বিশেষ প্রতিনিধি (কিশোরগঞ্জ) ।।
কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ার রক্তাক্ত হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। ঘটনার তিন দিনের মাথায় ১০ জুলাই রোববার দুপুরে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে এ মামলা দায়ের হয়েছে। মামলায় ঘটনায় পুলিশের হাতে আটক দুই জঙ্গীসহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়।
পাশাপাশি এই হামলায় আটক দুই জঙ্গীকে তিনদিন ধরে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করছে তদন্ত সংস্থাগুলো। তদন্তকারীরা জঙ্গীদের মদদদাতা ও কিশোরগঞ্জ আসতে তাদের কেউ সহায়তা করেছিল কিনা এ ব্যাপারেও খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করছে।
মামলার দুই আসামী হলেন শরিফুল ইসলাম ওরফে শফিউল ইসলাম ওরফে সাইফুল ইসলাম (২২)। তার বাড়ি দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলার রানীগঞ্জ বাজার এলাকায়। বাবার নাম মো: আবদুল হাই।
অপর আসামি কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিম তারাপাশা এলাকার জাহিদুল তানিম (২৪)। তার বাবার নাম মো: আবদুস সাত্তার।
আহত অবস্থায় সাইফুলকে আটক করা হয় ঘটনাস্থল শোলাকিয়া সবুজবাগ গলি থেকে। এর আগে তিনি কয়েক পুলিশকে কুপিয়ে আহত করেন। তারপর পুলিশের সাথে গোলাগুলিতে আহত হয়ে ধরা পড়ে। এলাকার হাফিজুর রহমান রেনুর বাসার সিসি ক্যামেরায়ও ধরা পড়ে তিনি পুলিশের সাথে গোলাগুলি করছিলেন।
তানিমকে আটক করা হয় একই গলির আওয়ামীলীগ নেতা আবদুল হান্নান ভূঞা বাবুলের বাসা থেকে। তিনিও ঘটনার দিন হামলার সাথে জড়িত ছিলেন বলে পুলিশ জানায়।
মামলার আসামি আহত সাইফুল র্যাব হেফাজতে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। তানিম কিশোরগঞ্জে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। আজ সোমবার দুই আসামিকে আদালতে হাজির করার সম্ভাবনা রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, তারা দুই আসামির কাছ থেকে তথ্য নেয়ার চেষ্টা করছেন, হামলায় আরো কেউ যুক্ত ছিল কিনা, কেউ সহযোগিতায় ছিল কিনা।
সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯/ সংশোধিত ২০১৩ এর ৬ (২)/ ৮/ ৯/ ১০/ ১২/ ১৩/ ধারার মামলায় উল্লেখ করা হয় সন্ত্রাসী ও জঙ্গি কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে ষড়যন্ত্র সহায়তা ও প্ররোচণার মাধ্যমে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে তারা এ হামলা চালায়। হামলায় আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্য ও ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে নৃশংসভাবে পুলিশ ও সাধারণ নাগরিক হত্যা এবং জখম করা হয় বলে উল্লেখ করা হয়।
মামলার বাদি হয়েছেন পাকুন্দিয়া থানার ওসি (তদন্ত) মো: সামসুদ্দীন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (ওসি তদন্ত) মুর্শেদ জামানকে। মামলার বাদি সামসুদ্দীন ঘটনার দিন শোলাকিয়া আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে মুফতি মোহাম্মদ আলী সমজিদের সামনের রাস্তায় মুসল্লিদের নিরাপত্তায় তল্লাশি চৌকির দায়িত্বে ছিলেন। ওইদিন তল্লাশি চৌকিতে থাকা পুলিশকে লক্ষ করে জঙ্গিরা বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে পুলিশকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলাপাতাড়ি কুপিয়ে আহত করা হয়। এ সময় জঙ্গিরা পুলিশের সাথে গোলাগুলিতেও লিপ্ত হয়। দুই আড়াই ঘণ্টা ধরে চলে পুলিশ জঙ্গি বন্দুকযুদ্ধ। এ ঘটনায় দুই পুলিশসহ চার জন নিহত হয়। আহত হয় ১২ পুলিশ সদস্য। নিহতের মধ্যে এক জঙ্গি এবং শোলাকিয়া এলাকার এক সাধারণ নারীও রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ৭ জুলাই ঈদের দিন সকাল পৌনে নয়টার দিকে শোলাকিয়া ঈদগাহের দুইশ গজ দূরে এই হামলার ঘটনা ঘটে।