মার্কিন নাগরিকত্বের জন্য রেকর্ডসংখ্যক আবেদন

apply for us citizenship

আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।

 

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের মধ্যে হঠাৎ করে নাগরিকত্ব গ্রহণের আবেদনপত্র জমা দেওয়ার হিড়িক পড়েছে। অভিবাসীদের মধ্যে যাঁরা নাগরিকত্ব গ্রহণের উপযুক্ত, তাঁরা বিষয়টি নিয়ে আর দেরি করছেন না। আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, রাজনীতিতে প্রচণ্ড অভিবাসনবিরোধিতাকে এর কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। নানা সংশয়, শঙ্কা নিয়ে অভিবাসীদের মধ্য দ্রুত মার্কিন নাগরিকত্ব গ্রহণের তাড়া সৃষ্টি হয়েছে।

গত অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া অভিবাসন বছরের প্রথম তিন মাসে নাগরিকত্বের জন্য আড়াই লাখ আবেদনপত্র জমা পড়েছে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, নাগরিকত্ব গ্রহণের আবেদন এর মধ্যে গত চার বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীরা অভিবাসনের প্রারম্ভিক প্রক্রিয়া শেষে নাগরিকত্ব গ্রহণের যোগ্যতা অর্জন করে থাকেন। প্রাথমিক অবস্থায় ‘গ্রিনকার্ডধারী’ হিসেবে অভিবাসন শুরু হয়। নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে রীতিমতো নাগরিকত্বের আবেদন করা যায়। নাগরিকত্ব পরীক্ষার জন্য বেশ কিছু গৎবাঁধা প্রশ্নের উত্তর জানতে হয়। আমেরিকার সমাজ, সরকারব্যবস্থা, ইতিহাস নিয়ে নাগরিকত্বের পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে নাগরিকত্বের সনদ প্রদান করা হয়।

পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আমেরিকায় আসা অনেক অভিবাসীই নাগরিকত্ব গ্রহণে একপর্যায়ে উদাসীন দেখা যায়। অভিবাসনের একপর্যায়ে অনেকেরই তাঁদের নিজেদের ফেলে আসা দেশের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। অনেকেই আবার নিজেদের ফেলে আসা দেশের নাগরিকত্ব ছেড়ে দিতে চান না মার্কিন নাগরিকত্ব গ্রহণ করে। নাগরিকত্বের আবেদনের জন্য ফি হিসেবে অর্থ ব্যয় করতেও অনীহা দেখা যায় কোনো কোনো অভিবাসীর মধ্যে। সাধারণত যাঁরা ফেলে আসা পরিবার-পরিজনকে আমেরিকায় আনার জন্য উন্মুখ, তাঁদের বেলায় নাগরিকত্ব গ্রহণের তাড়না থাকে। মার্কিন নাগরিকত্ব না থাকলে ভোট প্রদান করা যায় না। এমনিতে নির্বাচনের বছরে নাগরিকত্বের আবেদন অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে বলে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাচারালাইজেশন বিভাগের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়।

apply for us citizenship

এবার মার্কিন নাগরিকত্বের জন্য বেশিসংখ্যক আবেদনপত্র পড়ার ভিন্ন কারণ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে অভিবাসীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। রিপাবলিকান দলের সম্ভাব্য প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য-বিবৃতিকে এর প্রধান কারণ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। মুসলমানদের অভিবাসনে কড়াকড়ি আরোপের কথা বলেছেন। অন্যান্য পশ্চিমা দেশের মতো আমেরিকায়ও এখন অভিবাসনবিরোধী মনোভাব তুঙ্গে। ফলে একধরনের তাড়না থেকেই তড়িঘড়ি করে প্রাক-যোগ্যতা রয়েছে, এমন অভিবাসীরা ব্যাপকভাবে নাগরিকত্বের আবেদন করছেন।

গত সপ্তাহে এক দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শতাধিক নগরীতে গণশপথ গ্রহণের মাধ্যমে নাগরিকত্বের সনদ দেওয়া হয়েছে। নিউজার্সির মতো অভিবাসীবহুল রাজ্যে গত তিন মাসে নাগরিকত্ব গ্রহণের আবেদন আগের সময়ের চেয়ে ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিবাসন দপ্তর থেকে জানা গেছে। গত সপ্তাহান্তে নতুন নাগরিকদের শপথ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ডেমোক্র্যাট দলের প্রভাবশালী নেতা সিনেটর কোরি বুকার। তিনি বলেন, আমেরিকা গড়ে উঠেছে অভিবাসীদের মাধ্যমে। আমেরিকার মূল্যবোধকে আমরা পেছনে ফেলতে পারি না—উল্লেখ করে তিনি বলেন, অভিবাসনবিরোধিতা করা মানে আমেরিকাকেই ম্লান করা।

নিউইয়র্কের ফেডারেল প্লাজা থেকে শুরু করে নিউজার্সির নুয়ার্কের অভিবাসন দপ্তরে গেলে দেখা যায় উপচে পড়া ভিড়। বাংলাদেশি, ভারতীয় থেকে শুরু করে হিস্পানিকদের দীর্ঘ লাইন পড়েছে। কেউ এসেছেন পরীক্ষা দিতে। কেউ খোঁজ নিচ্ছেন, তাঁর নাগরিকত্বের আবেদনের পরিণতিটা কী হলো।

ফেডারেল প্লাজায় বাংলাদেশি সাবরিনা সৈয়দ কথা বলেন প্রথম আলোর সঙ্গে। জানালেন, অনেক ভয়ে ছিলেন পরীক্ষার নানা প্রশ্ন নিয়ে। পাস করেছেন বলে উৎফুল্ল সাবরিনা জানালেন, দেশে গিয়ে বিয়ে করবেন। নাগরিক হওয়ায় স্বামীকে দ্রুত নিয়ে আসতে পারবেন বলেও জানালেন। নিউজার্সির অভিবাসন কেন্দ্রে দেখা পেরু থেকে আসা অভিবাসী আনা মারিয়া ব্লাসিডোর সঙ্গে। তিনি জানালেন, দুবার পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছেন। স্বপ্নের দেশের নাগরিকত্ব পেয়েছেন বলে মহাখুশি মারিয়া। খোলামেলাভাবে জানালেন, ডেমোক্র্যাট দলকেই ভোট দেবেন আগামী নির্বাচনে।

আমেরিকার নাগরিকত্ব ও অভিবাসন বিভাগের মুখপাত্র ক্যাথরিন টিচাসেক সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, হঠাৎ করে নাগরিকত্বের আবেদন বৃদ্ধির কারণ নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। তবে গত বছরগুলো থেকে এবার নাগরিকত্বের আবেদন অনেক বেশি বলে তিনি জানান।

অভিবাসীপ্রধান নগরগুলোতে বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান নাগরিকত্ব গ্রহণের জন্য আবেদনকারীদের সহযোগিতা করছে। ইংরেজি ভাষা শিক্ষাসহ নাগরিকত্বের পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন অভিবাসী দলকে সহযোগিতা করা হচ্ছে। অভিবাসীদের মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প-ভীতিকে কাজে লাগাচ্ছে ডেমোক্র্যাট সংগঠকেরা। যত বেশি অভিবাসী নাগরিকত্ব গ্রহণ করে ভোট দেওয়ার উপযুক্ত হবে, নিজেদের ভোট ততটা বাড়বে বলে ডেমোক্র্যাট-সমর্থকদের প্রত্যাশা।

নিউজার্সি অভিবাসন কেন্দ্রে উপস্থিত ডেমোক্র্যাট আশোক আইওয়াতামি জানালেন, অভিবাসীরা ভোটের মাধ্যমেই অভিবাসনবিরোধিতার জবাব প্রদান করবেন। বিভিন্ন অভিবাসী গ্রুপের মধ্যে নাগরিকত্বের আবেদনের জন্য নানাভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে। নিম্ন আয়ের অভিবাসীদের আবেদনপত্রের জন্য ফি মওকুফের বিধান রয়েছে। এসবের জন্য অভিবাসীদের সহযোগিতার জন্য নাগরিক এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো এখন খুবই তৎপর আমেরিকার অভিবাসীবহুল এলাকাগুলোতে।

 

সূত্র : http://www.prothom-alo.com/international/article/911005

Similar Posts

error: Content is protected !!