কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা ।।
কিশোরগঞ্জে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় জেলা বিএনপি সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মো: ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। সোমবার ১১ জুলাই অভিযোগ গঠনের ধার্য্য তারিখে শুনানি শেষে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক এ. জি. এম. আল মাসুদ অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন।
শুনানির সময় আদালতের অনুমতি নিয়ে অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমান তার বিরুদ্ধে আনা রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ অস্বীকার করে আবেগঘন বক্তৃতা করেন। বক্তৃতায় তিনি পঁচাত্তরের পনেরো আগস্টে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ড পরবর্তী সময়ে তার নিজের প্রতিবাদী ভূমিকা ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন।
এ সময় তিনি বলেন, ইতিহাসের সত্য তুলে ধরা তার ওই নির্বাচনী বক্তৃতায় রাষ্ট্র কিংবা রাষ্ট্রপতিকে কোনোভাবেই কটাক্ষ করা হয়নি।
এর আগে দলীয় নেতাকর্মী ও আইনজীবীদের সাথে নিয়ে অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমান আদালতে হাজিরা দিতে আসেন।
২০১৪ সালের ২৩ মার্চ অনুষ্ঠিত ইটনা উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে ১৯ মার্চ রাতে বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী এসএম কামাল হোসেনের এক নির্বাচনী পথসভায় অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমান বক্তৃতা করেন। বক্তৃতায় রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে বিএনপি নেতা এডভোকেট মো. ফজলুর রহমান কুরুচিপূর্ণ ও উস্কানিমূলক কথা বলেছেন এমন অভিযোগ করে মো: আলী হোসেন নামে স্থানীয় এক আওয়ামীলীগ সমর্থক তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ এনে ইটনা থানায় একটি জিডি (নং-৫১১, তাং-১৯/০৩/১৪) করেন। ওই বছরের ১৮ আগস্ট পুলিশ এটিকে নন এফআইআর মামলা হিসেবে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেন। মেয়ের ভর্তি এবং নিজের চিকিৎসার প্রয়োজনে অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমানের যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের সময় ওই বছরের ২৭ আগস্ট কিশোরগঞ্জের ৪নং আমলি আদালতের বিচারক ও তৎকালীন অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুসাইন মুহাম্মদ ফজলুল বারী মামলাটি আমলে নিয়ে ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পরে ওই বছরের ২৭ অক্টোবর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমানকে গ্রেফতার বা হয়রানি না করতে নির্দেশ দেন। পরে ২৯ অক্টোবর হাইকোর্টের এ নির্দেশের উপর চেম্বার জজ স্থগিতাদেশ দেয়। পরবর্তিতে ২০১৪ সালের ৬ই নভেম্বর আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রেখে ফজলুর রহমানকে গ্রেফতার বা হয়রানি না করতে নির্দেশ প্রদান করেন। আপিল বিভাগের আদেশের পর ফজলুর রহমান যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে আসেন। মামলাটি কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে স্থানান্তর করা হলে ওই বছরের ১৯ নভেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করে তিনি জামিন প্রার্থনা করলে আদালতের বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে ওই বছরের ২৭ নভেম্বর তিনি মুক্তি পান।