বিশেষ প্রতিনিধি, কিশোরগঞ্জ ।।
শোলাকিয়া হামলার ঘটনায় জড়িত মূল হোতাদের খুঁজছে পুলিশ। হামলার ঘটনায় পুলিশের গুলিতে আহত হয়ে আটক দিনাজপুরের আসামি সাইফুল ইসলামের (২২) কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের খোঁজা হচ্ছে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রে জানা গেছে।
সাইফুলকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত অন্তত ছয়জনের নাম পায় আইনশৃংখলা বাহিনী। এদের সবাই নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জেএমবির সামরিক শাখার সদস্য বলে জানা গেছে। পুলিশ ওই ৬ জনসহ মূল হোতাদের খুঁজছে এখন।
তাদের গ্রেফতারে এই কয় দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালিত হওয়ার কথাও জানিয়েছে পুলিশ। শোলাকিয়া হামলার ঘটনায় জেএমবির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে শুরু থেকেই সন্দেহ করে আসছে পুলিশ।
এ দিকে মামলার স্থানীয় আসামি জাহিদুল হক তানিম (২৪) কিশোরগঞ্জে পুলিশ হেফাজতে ১০ দিনের রিমান্ডে আছে। তাকেও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার রিমান্ডের পঞ্চম দিন অতিবাহিত হয়েছে। তদন্তের সাথে সংশ্লিষ্ট পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, তানিমের কাছ থেকেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে।
শোলাকিয়া হামলার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে সদর থানায় মামলায় সাইফুল ইসলামকে প্রধান ও জাহিদুল হক তানিমকে দ্বিতীয় আসামি করা হয়। তানিম এ মামলায় রিমান্ডে থাকলেও সাইফুল ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে র্যাব হেফাজেতে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এদিকে জঙ্গি হামলার এক সপ্তাহের মাথায় ঢাকা থেকে আসা উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্তদল শুক্রবার ১৫ জুলাই সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। ঢাকার পুলিশ হেডকোয়ার্টারের বিশেষ অপরাধ শাখা থেকে অতিরিক্ত ডিআইজি জহিরুল ইসলামের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের অন্যরা হলেন ডিএমপির কাউন্টার টেররিজমের উপ-পুলিশ কমিশনার এএইচ এম রাকিব উদ্দিন, সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: রায়হান উদ্দিন খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পিবিআই) মোস্তফা কামাল রাশেদ, পুলিশ হেড কোয়ার্টারের তথ্য প্রযুক্তি শাখার সহকারি পুলিশ সুপার সোহান সরকার।
তদন্তদল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জে পৌঁছে। স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে তারা মতবিনিময় করেন। পরে তারা পরশমণি নামে শহরের নীলগঞ্জ রোডের যে বাসায় সন্দেহভাজন জঙ্গিরা বাসা ভাড়া নিয়েছিল সে বাসার মালিক সাবেক খাদ্য কর্মকর্তা মো: আবদুস সাত্তারের সাথেও কথা বলেন।
এদিকে কিশোরগঞ্জে শোলাকিয়ায় হামলার ঘটনায় উদ্ধার করা দু’টি পিস্তল, পিস্তলের গুলি ও ব্যবহৃত গুলির খোসা ব্যালাস্টিক পরীক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে।
শহরের নীলগঞ্জ সড়কের ‘পরশমনি’ নামে যে বাসাটি জঙ্গিরা গুরুদয়াল কলেজের ছাত্র পরিচয়ে ভাড়া নিয়েছিল, সেই বাসার মালিক আব্দুস সাত্তারকে এর আগে বৃহস্পতিবার সদর থানায় তলব করে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আব্দুস সাত্তার এ প্রতিনিধিকে জানান, জয়নাল আবেদীন নামে যে তরুণটি গুরুদয়াল কলেজের ছাত্র পরিচয় দিয়ে চারজন ছাত্র থাকার কথা বলে বাসাটি ভাড়া নিয়েছিল, তার চেহারার বর্ণনা জানার জন্যই মূলত তাকে থানায় ডাকা হয়েছিল। এছাড়া বুধবার রাতে তাকে মুখোমুখি করা হয় ১০ দিনের রিমান্ডে থাকা শহরের তারাপাশা এলাকার জাহিদুল হক তানিমের। থানায় নিয়ে তানিমকে দেখিয়ে প্রশ্ন করা হয়, এই ছেলেটি বাসা ভাড়া নিয়েছিল কিনা। তানিম বাসা ভাড়া নেয়নি বলে আব্দুস সাত্তার জানিয়েছেন।