আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
আধুনিক চিকিৎসায় হেপাটাইটিস রোগ সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। লিভার বিশেষজ্ঞের মাধ্যমে পরীক্ষা ও পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবন করলে এই রোগ থেকে পূর্ণ মুক্তি পেয়ে সুস্থ জীবন যাপন করা সম্ভব। আর তাই এই রোগ নিরাময় সম্পর্কে তৃণমূলে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করতে পারে। বাসস
২৮ জুলাই বিশ্ব হেপাটাইটস দিবস ২০১৬ পালন উপলক্ষে আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা এসব কথা বলেন।
দিবসটি উপলক্ষে এসোসিয়েশন ফর দি স্টাডি অব লিভার ডিজিজেজ বাংলাদেশ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজিজ কন্ট্রোল ইউনিট, ফোরাম ফর দি স্টাডি অব দি লিভার বাংলাদেশ ও ভাইরাল হেপাটাইটিস ফাউন্ডেশন যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এর আগে এ উপরক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে সকাল সাড়ে ১১টায় এক বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি প্রেসকাব থেকে হাইকোর্টের সামনে দিয়ে সচিবালয় হয়ে আবার প্রেসক্লাবে এসে শেষ হয়।
র্যালি ও গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল হাসান খান।
বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত প্রফেসর এমিরিটাস ড. এ কে আবদুল মোমেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এসোসিয়েশন ফর দি স্টাডি অব লিভার ডিজিজেজ বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক সেলিমুর রহমান।
গোলটেবিল বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন ডা. ফয়েজ আহমদ খন্দকার ও ডা. আহমেদ লুৎফুল মুবিন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বর্তমান বিশ্বে প্রায় ৪০ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসে আক্রান্ত। সারা বিশ্বে প্রতিদিন হেপাটাইটিস ভাইরাসে আক্রান্ত ৪ হাজার রোগী মৃত্যুবরণ করছেন। আর ৮০ শতাংশ লিভার ক্যান্সারের কারণ হচ্ছে হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস। ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণকারী এক কোটি মানুষ হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসে আক্রান্ত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীতে হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ১৭ থেকে ২০ কোটি, যা পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩ শতাংশ। বাংলাদেশে প্রায় ২০ লাখ লোক এই ভাইরাসে আক্রান্ত।
অনুষ্ঠানের শুরুতে এসোসিয়েশন ফর দি স্টাডি অব লিভার ডিজিজেজ বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক ও ফোরাম ফর দি স্টাডি অব দি লিভার-এর চেয়ারম্যান ডা. মামুন আল-মাহতাব স্বপ্লীল বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
তিনি বাংলাদেশে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্তের চিত্রটি তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশে ৫.৪ শতাংশ লোক হেপাটাইটিস বি ও ০.৮ শতাংশ মানুষ হেপাটাইটিস সি ভাইরাসে আক্রান্ত। এদেশে লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের প্রধান কারণ এই ভাইরাস দুটি। এই রোগে ভুগে এদেশে প্রতি বছর প্রায় ৫ লাখ লোক মৃত্যুবরণ করছেন। আর হেপাটাইটিস বি’র চিকিৎসায় প্রতি বছর যে অর্থ ব্যয় হয়, তা দিয়ে প্রতি ৫ বছরে একটি পদ্মা সেতু বানানো সম্ভব।
এতে আরো বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ডা. ফারুক আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য দেন এসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ ডা. ফজল করিম ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শেখ মোহাম্মদ নূর-ই-আলম ডিউ।
গোলটেবিল আলোচনায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এটিএন নিউজ-এর সহযোগী বার্তা প্রধান নূরুল আমিন প্রভাষ, জুলফার বাংলাদেশ লি. জেনারেল ম্যানেজার মো. জাকির হোসেন, ভারতের হায়দ্রাবাদের যশোদা ইনস্টিটিউট অব লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন এন্ড হেপাটোবিলিয়ারী ডিজিজেজ-এর লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন বিভাগের প্রধান ডা. পি বালাচন্দ্রন মেনন প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল হাসান খান বলেন, ভাইরাল হেপাটাইটিস নির্মূলের লক্ষ্য অর্জনে বিএসএমএমইউ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাবে। পাশাপাশি তিনি হেপাটাইটিস বি ভাইরাসের গবেষণায় এদেশের লিভার বিশেষজ্ঞদের অবদানের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, মিলেনিয়াম ডেভলপমেন্ট গোলের আওতায় আমার বাংলাদেশে ২০১৩ সালের মদ্যে শিশু ও মাতৃ মৃত্যু হ্রাসের ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি।
ডা. কামরুল হাসান খান আমাদের দেশে হেপাটাইটিস বা জন্ডিসের প্রকোপ এখনও বেশি উল্লেখ করে বলেন, এটাকে কিভাবে আমরা প্রতিরোধ করবো এখন এটাই আমদের প্রধান বিবেচ্য বিষয়। এই নিরব ঘাতক হেপাটাইটিস প্রতিরোধে আমাদেরকে সমন্বিত কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। আমরা যারা চিকিৎসক তারা এই রোগ সম্পর্কে সম্যকভাবে জানি। কিন্তু এই রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে তৃণমূল মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টির ক্ষেত্রে গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
তিনি বলেন, গণমাধ্যম যে কোন তথ্য মুহূর্তে সারা দেশসহ বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে দিতে পারে। এই জন্ডিস বা হোপাটাইটিস প্রতিকার ও প্রতিরোধ কিভাবে করতে হবে তা মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। বর্তমানে হেপাটাইটিস বিষয়ে দেশের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যেভাবে কাজ হচ্ছে-এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যেই দেশ থেকে দেশ থেকে তা পরিপূর্ণভাবে নির্মূল করা সম্ভব।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে আবদুল মোমেন অনুষ্ঠানে বলেন, উন্নত দেশে হেপাটাইটিস রোগের প্রকোপ খুবই কম। কিন্তু এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীর এলাকার দরিদ্র দেশসমূহে এই রোগে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। এখানে এবটি বিষয় উল্লেখ করতে হবে, যক্ষা বা এইচআইভি এইডস-এ যে পরিমাণ মানুষের মৃত্যু হয়, তার চেয়েও নিরব ঘাতক হেপাটাইটিস রোগে বেশি মানুষ মারা যায়।
তিনি বলেন, সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে সহজেই এই রোগ থেকে নিরাময় হওয়া সম্ভব। তাই জনগনকে গণমাধ্যমের মাধ্যমে সঠিত তথ্য তুলে ধরে সচেতন করে তুলতে হবে। দেশে লিভার ক্যান্সারে যে মানুষ মারা যায়. তার মধ্যে ৮০ শতাংশ মারা যায় হেপাটাইটস বি ও সি ভাইরাসের কারণে।
ড. এ কে আবদুল মোমেন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় লিভার বিশেষজ্ঞ ও সুশীল সমাজের উদ্যোগে ২০৩০ সালের আগেই বাংলাদেশ থেকে হেপাটাইটিস বি ও সি নির্মূল করা সম্ভব হবে উল্লেখ করে বলেন, ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ এ ব্যাপারে সোচ্চার ভূমিকা পালন করছে। এমডিজি অর্জনে আমরা যেমন সফল হয়েছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার তেমনি এসডিজি অর্জনের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে আয়োজক সংস্থার সদস্য, লিভার বিশেষজ্ঞ, সাংবাদিক, নাট্যকার, বুদ্ধিজীবী, ব্যাংকারসহ দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।