আমাদের নিকলী ডেস্ক ।।
আজ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে বিপথগামী কিছু সেনাসদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করে। রক্তের বন্যা বয়ে যায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে। দেশের বাইরে থাকায় এ সময় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। শোকাবহ এই দিনটি পালনে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বেতার, টিভিসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংবাদমাধ্যম বিশেষ ক্রোড়পত্রসহ বিভিন্ন নিবন্ধ প্রকাশ করছে। আজ সরকারি ছুটি।
রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ তার বাণীতে জাতীয় শোক দিবসে শোকাহত চিত্তে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহতদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন। একই সাথে রাষ্ট্রপতি জাতীয় শোক দিবসে শোককে শক্তিতে পরিণত করে দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।
পৃথক বাণীতে বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একাত্তরে পরাজিত শক্তি এখনো দেশ ও জাতির অব্যাহত অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে বিভিন্ন অপকৌশলে লিপ্ত রয়েছে। তারা জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। এ দেশের মাটিতে কোনো জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের ঠাঁই হবে না। জঙ্গিবাদকে সমূলে উৎপাটন করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করা হবে।
বঙ্গবন্ধুকে হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করে তার স্বপ্ন সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সবাইকে সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করতে হবে।
বাণীতে তিনি বলেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে বঙ্গবন্ধু যখন সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সোনার বাংলা গড়ার সংগ্রামে নিয়োজিত, তখনই স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধী চক্র বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। এর মধ্য দিয়ে তারা বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করার অপপ্রয়াস চালায়। অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোকে ভেঙে ফেলাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে আগামী ২০২১ সালের আগেই বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
দিবসটিতে আওয়ামীলীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সূর্য উদয়ণে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দলটির সবস্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন, সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সকাল সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন, মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মুনাজাত ও মিলাদ মাহফিল। এ ছাড়া সকাল ১০টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দও উপস্থিত থাকবেন।
দিবসটি উপলক্ষে বাদ জোহর দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া সুবিধামতো সময়ে মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ সব উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। দুপুরে অসচ্ছল ও দুস্থদের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করা হবে। বাদ আসর মহিলা আওয়াীলীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
আগামীকাল ১৬ আগস্ট বিকেলে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম মৃত্যুবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিতে অংশ নিতে টুঙ্গিপাড়ায় যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। পরে ফাতেহা পাঠ ও মুনাজাতে অংশ নেবেন। এ সময় তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল প্রধানমন্ত্রীকে গার্ড অব অনার প্রদান করবে।
জাতীয় শোক দিবসের এ কর্মসূচিতে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, সামরিক ও বেসামরিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।
এদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের সদস্যদের নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্তদের দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় কার্যকরের আইনি প্রক্রিয়া চলছে।
তিনি বলেন, খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের রায় কার্যকর না করা পর্যন্ত এ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪১তম শাহাদতবার্ষিকী উপলক্ষে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্প এলাকায় সরকারি শিশু পরিবারে পরিবেশিত খাবার পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো: জহিরুল হক, অতিরিক্ত সচিব মো: মোস্তাফিজুর রহমান, যুগ্মসচিব গোলাম সারোয়ারসহ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।