১৯৬৪ সাল। বাঙালির প্রাণের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান তখনও বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেননি। দিন-তারিখ মনে না থাকলেও ঘটনাটি স্পষ্ট মনে আছে। আমি তখন কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজের ছাত্র এবং কিশোরগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। মুজিব ভাই ওই সময় কিশোরগঞ্জ আসেন আওয়ামী লীগের সমাবেশে। প্রিয় নেতাকে কাছে থেকে দেখব, তার সঙ্গে কথা বলব_ এই ইচ্ছা থেকেই ছাত্রলীগের দুই-তিনশ’ কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে ছুটে গেলাম রঙমহল সিনেমা হলের সামনে। ভেতরে জায়গা থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ নেতারা আমাদের ঢুকতে দিলেন না। তাদের বক্তব্য, এটা ছাত্রলীগের অনুষ্ঠান নয়। তারপরও আমরা বাইরে অপেক্ষা করতে থাকলাম। নেতা বের হলে প্রয়োজনে রাস্তার মধ্যেই তার সঙ্গে দেখা করব, কথা বলব।
সন্ধ্যার আগেই সমাবেশ শেষ হলো। সবাই বেরিয়ে আসছেন। খুব সহজেই আমাদের দৃষ্টি কাড়লেন দীর্ঘদেহী মানুষটি। তাৎক্ষণিক স্লোগান ধরলাম, ‘মুজিব ভাই যেখানে, আমরা আছি সেখানে’। বুঝতে পারলাম দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছি। নেতা এসে জড়িয়ে ধরতেই পরিচয় দিয়ে অভিযোগ জানালাম- ‘আমরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসেছিলাম আপনার বক্তৃতা শুনতে; কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতারা আমাদের হলের ভেতরে ঢুকতে দেননি।’ মুজিব ভাই তখন সবার সামনেই বললেন, ‘আরে আওয়ামী লীগ বাদ দে, তোরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই আমার আসল শক্তি।’ নেতার এই বক্তব্যে আমাদের উজ্জীবন তখন আর ঠেকায় কে।
‘৬৬ সালে ৬ দফা ঘোষিত হলো। আমরাও আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। সম্ভবত ‘৬৭ সালের প্রথম দিকে সিলেটে গিয়ে গ্রেফতার হলেন শেখ মুজিবুর রহমান। খবর পেলাম, পুলিশ তাকে বাহাদুরাবাদ মেইল ট্রেনে করে সিলেট থেকে ময়মনসিংহ নিয়ে যাবে। আমরা চার-পাঁচ হাজার ছাত্র জড়ো হয়ে কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশন অবরুদ্ধ করে ফেললাম। রাত ১২টায় ট্রেন এলো। আমরা তো মুজিব ভাইকে না দেখে, তার বক্তৃতা না শুনে ট্রেন যেতে দেব না। তাকে রাখা হয়েছিল ফার্সদ্ব ক্লাসের একটি কামরায়। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে সেখানে গেলাম। ‘হামিদ’ বলেই তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। বুঝলাম একবারের দেখাতেই নেতা আমার নামটি মনে রেখেছেন। আমরা একটি হ্যান্ড মাইকেরও ব্যবস্থা করে রেখেছিলাম। সেই মাইক হাতে ট্রেনের বগির দরজায় দাঁড়িয়ে সমবেত ছাত্র-জনতার উদ্দেশে তিনি ১০-১২ মিনিট বক্তৃতা করলেন। সবশেষে আমার পিঠ চাপড়ে বললেন, ‘আন্দোলন চালিয়ে যা, জয় আমাদের হবেই।’ আর বললেন, ‘সাংগঠনিক কাজের সঙ্গে সঙ্গে লেখাপড়াও কিন্তু চালিয়ে যেতে হবে।’
তৃতীয়বার দেখা হয় ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে ১৯৬৯ সালে। মুজিব ভাই তখন বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠেছেন। কিশোরগঞ্জ থেকেই তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি। প্রথমেই বললেন, ‘শুধু ছাত্রলীগ
নয়, কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতেও তোকে কাজ করতে হবে।’ কিন্তু আমার তখন আসল আগ্রহ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে যুক্ত হওয়া। সেই লক্ষ্য নিয়ে বিএ পাস করে এক বছর লস দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ল’তে ভর্তিও হয়েছি। বঙ্গবন্ধুকে পুরো বিষয়টি জানানোর পরও তিনি বললেন, ‘না ঢাকায় আসা চলবে না। তুই সেন্ট্রাল ল’ কলেজে ভর্তি হয়ে কিশোরগঞ্জ চলে যা। সেখানে গিয়ে সংগঠন আর আন্দোলনে মন দে।’ আমার তখনও মন পড়ে আছে ঢাকায়। যাতে সেন্ট্রাল ল’ কলেজে ভর্তি হতে না হয়, সে জন্য একটু চালাকি করেই বলি, যে টাকা নিয়ে এসেছিলাম সেটা দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি, এখন আবার অন্য জায়গায় ভর্তির টাকা পাব কোথায়। বঙ্গবন্ধু তাৎক্ষণিক তার পকেট থেকে তিনশ’ টাকা বের করে আমার হাতে দিলেন। ইতিমধ্যে তোফায়েল আহমেদ এসে ঢুকেছেন, তাকে বললেন, ‘হামিদকে সেন্ট্রাল ল’ কলেজে ভর্তি করে বই কিনে দিয়ে কিশোরগঞ্জ পাঠানোর ব্যবস্থা কর।’ কী আর করা, কিশোরগঞ্জে ফিরে এবার পুরো আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করার কাজে মনোনিবেশ করলাম।
‘৭০ সালের জানুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধুকে কিশোরগঞ্জে সংবর্ধনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। স্থানীয় আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তারকে আহ্বায়ক আর আমাকে সদস্য সচিব করে কমিটি গঠিত হলো। সংবর্ধনা নিতে এসে বঙ্গবন্ধু ৪৫ মিনিট দীর্ঘ বক্তৃতা করলেন। তার সানি্নধ্যে তখন একটা বড় সময় কাটল আমার।
ওই মাসেই আবার ঢাকায় নেতার সঙ্গে দেখা করি। তখনই তিনি আমাকে বললেন, ‘তোকে ইলেকশন করতে হবে। তুই এমপিএ (মেম্বার অব প্রভিন্সিয়াল অ্যাসেম্বলি) ইলেকশনের প্রস্তুতি নে।’ আমার তখন তাৎক্ষণিকভাবেই মাথায় ঢুকল ইলেকশন যদি করিই তাহলে এমপিএ কেন, এমএনএ (মেম্বার অব ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি) ইলেকশনই করব। বিষয়টি জানালাম বঙ্গবন্ধুকে, কিন্তু তিনি কোনোভাবেই রাজি হলেন না। বললেন, ‘তুই ছোট, তোকে মানুষ ভোট দেবে না। প্রথমে এমপি ইলেকশন কর। পরিচিত হ। পরে বড়টা করবি।’ বঙ্গবন্ধু জানালেন, মেসবাহ উদ্দিন নামে অবসরপ্রাপ্ত এক জজকে আমার নির্বাচনী এলাকা (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম-নিকলী-তাড়াইল) থেকে এমএনএ নির্বাচনের জন্য মনোনীত করেছেন। কী আর করা, মন খারাপ করে কিশোরগঞ্জ ফিরলাম। কিন্তু মাথার মধ্যে এমএনএ ইলেকশন করার পোকাটা থেকেই গেল।
বঙ্গবন্ধুকে কিছুদিন না দেখলে মন কেমন করে। এপ্রিল মাসে আবার ঢাকায় এলাম দেখা করতে। এবার আমাকে দেখেই তিনি অট্টহাসিতে ফেটে পড়লেন। সেই হাসি যেন থামেই না। ভাবলাম, আমার কাপড়-চোপড়ে কোনো সমস্যা হয়েছে কি-না। তিনি যত হাসতে থাকলেন আমার অস্বস্তিও ততো বাড়তে থাকল। আমাকে বসতে বলেও বঙ্গবন্ধু হাসি থামালেন না। টাঙ্গাইলের আবদুল মান্নান আর ইউসুফ আলী (পরবর্তীকালে শিক্ষামন্ত্রী) তখন উপস্থিত। এবার হাসতে হাসতেই বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘সেই জজ মারা গেছে। আমি কি আর তোর কথা না রাইখা পারি। তুই তো আমার দাদা।’ শেখ আবদুল হামিদ যে বঙ্গবন্ধুর দাদা সেটা তখন আমার জানাই ছিল না। জজ সাহেব নেই, তাই বঙ্গবন্ধুর মনোনয়ন পেয়ে আমি এমএনএ নির্বাচনে অংশ নিলাম। ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, নিকলীর জনসভায় বঙ্গবন্ধু আমার জন্য ভোটও চাইতে গেলেন। কোনো কোনো জায়গায় নৌকা থেকেও বক্তৃতা করলেন। নির্বাচিত হলাম সর্বকনিষ্ঠ এমএনএ হিসেবে। এই সর্বকনিষ্ঠ এমএনএ নিয়েও একটি মজার ঘটনা ঘটেছিল। নির্বাচনের পরই বঙ্গবন্ধু সিদ্ধান্ত নিলেন নির্বাচিত সব এমএনএ ও এমপিকে শপথ করাবেন, যাতে তারা ৬ দফার সঙ্গে এবং বাংলার জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা না করেন। রেসকোর্স ময়দানে সেই শপথে অংশ নেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ অফিস থেকে পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে হবে। কিশোরগঞ্জের তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে জিল্লুর রহমান, ফজলুর রহমান, শাহাবুদ্দিন ঠাকুর, কামরুল আহসান শাজাহান, লিয়াকত হোসাইন প্রমুখকে সঙ্গে নিয়ে গেলাম আওয়ামী লীগ অফিসে। কিন্তু পরিচয়পত্র প্রদান কার্যক্রমে নিয়োজিত কর্মীরা আমাকে ফিরিয়ে দিলেন, ‘য?ার পরিচয়পত্র সে নেবে’ এই বলে। শুধু আমি নই, আমার সঙ্গীরা অনুরোধ করার পরও আওয়ামী লীগের অফিস সেক্রেটারি বিশ্বাস করলেন না আমি নিজেই এমএনএ। তিনি বারবারই বলছিলেন, ‘আপনারা কেন বুঝতে চাচ্ছেন না। একজনের কার্ড আরেকজনকে দেওয়া যাবে না। এমএনএ সাহেবের নিজে এসে কার্ড নিতে হবে।’ কোনোভাবেই কার্ড সংগ্রহ করতে না পেরে যখন ফিরে আসছি, তখন দেখলাম তাজউদ্দীন আহমদ ঢুকছেন। তাকে বিষয়টি জানালে তিনি আমাকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন এবং তাদের বললেন, ‘তোমরা চিনতে পারো নাই, এই সেই ভাটি শার্দুল আবদুল হামিদ, দুরন্ত দুর্দান্ত যুবক।’ বিশেষণগুলো এখনও আমার কানে বাজে।
এমএনএ হিসেবে পার্লামেন্টে আমাদের দায়িত্ব পালনের সুযোগ হলো না। আন্দোলন আরও বেগবান হলো। আমরা জনগণের কাতারে থেকে জনগণের জন্যই কাজ করে যেতে থাকলাম। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে অংশ নিলাম। দেশ স্বাধীন হলো। কত ঘটনা, কত স্মৃতি।
পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরলেন। এবার সবাই মিলে দেশ গড়ার সংগ্রাম শুরু হলো। কাজ চালিয়ে যেতে থাকলাম বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনা অনুসারেই। তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাও বাড়তে থাকল।
‘৭৪-৭৫ সালে এমপি হোস্টেলে থেকে প্রায়ই ক্যান্টনমেন্টে যেতাম মামাশ্বশুর ড. মাহবুবুর রহমানের বাসায়। সেখানে থেকে ডিজিএফআই অফিস খুব কাছাকাছি। শ্যালক মাসুমকে সঙ্গে নিয়ে ওদের অনেকেরই হাবভাব, চালচলন পর্যবেক্ষণ করতাম। ভালো লাগত না। বারবারই মনে হতো খারাপ কিছু ঘটবে। কিন্তু ওরা যে বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে মেরে ফেলবে, এটা কল্পনাই করতে পারিনি। তারপরও সিদ্ধান্ত নিলাম ডিজিএফআই অফিসের লোকজনের কথাবার্তা ও রহস্যজনক আচরণের বিষয়গুলো বঙ্গবন্ধুকে জানাব। যতদূর মনে পড়ে, পঁচাত্তরের ১১ আগস্ট বিকেলে গণভবনে গিয়েছি। তৎকালীন মন্ত্রী কোরবান আলী তখন সেখানে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে বললাম আমার কিছু একান্ত কথা আছে। তিনি আমাকে ইশারায় বসতে বলে অন্যান্য কাজ সারতে থাকলেন। সন্ধ্যার পর আমাকে নিয়ে বের হলেন। গণভবনের বাগানে হাঁটতে হাঁটতে আমার কাছে জানতে চাইলেন, ‘কী বলতে চাস’। আমি ডিজিএফআই অফিসের বিষয়গুলো জানিয়ে বললাম, ওদের হাবভাব ও চলাফেরা আমার ভালো ঠেকছে না। বঙ্গবন্ধু হেসে বললেন, ‘একটু ঝামেলা ছিল, সব ঠিক হয়ে গেছে, চিন্তা করিস না।’ ফিরে এলাম আশ্বস্ত হয়ে। এটাই তার সঙ্গে আমার শেষ দেখা, শেষ কথা। এখন বুঝতে পারি, কোনো কিছুই ঠিক ছিল না তখন। আমাদের অগোচরেই জনকের রক্তে কালো হাত রঞ্জিত করতে প্রস্তুত হচ্ছিল ঘাতকরা।
১৪ আগস্ট রাতে নানা জায়গায় আড্ডা দিয়ে এমপি হোস্টেলে ফিরি। ৩টা-৪টার দিকে ঘুমাতে যাওয়ার আগেও একাধিক আওয়াজ শুনেছি। ভেবেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আনন্দ-উল্লাস হচ্ছে, পটকা ফুটছে। সকাল ৭টার দিকে পাশের রুমের খন্দকার নুরুল ইসলাম (রাজবাড়ীর এমপি) এসে দরজা ধাক্কানো শুরু করলেন। রাতে দেরিতে ঘুমিয়েছি তাই বেশ বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলতেই তার মুখে শুনলাম, ?’সর্বনাশ হয়ে গেছে’। তিনি দৌড়ে রেডিও নিয়ে এলেন। সেখানে বারবার বাজছে, ‘আমি মেজর ডালিম বলছি…’। এর পরের কথাগুলো আমি আর শুনতে পারি না। আমার কান বন্ধ হয়ে আসে। মাথা ঘুরতে থাকে। আমার নেতাকে, আমার বঙ্গবন্ধুকে, বাঙালির জাতির জনককে ওরা মেরে ফেলেছে, এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। আমরা চেয়ে দেখি এমপি হোস্টেলের বাইরেও ট্যাঙ্ক ঘুরছে। অনেক এমপি এবং নেতাকে ফোন করি, অনেককেই পাই না। এমপি হোস্টেলে হামলা হতে পারে এই আশঙ্কার মধ্যেই বের হই। স্যান্ডেল পায়ে হেঁটে হেঁটে ফার্মগেটে যাই। তারপর সেখান থেকে মহাখালীতে এক আত্মীয়ের বাসায়। কিশোরগঞ্জে গিয়েছি আরও পরে।
‘৭৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি কিশোরগঞ্জে আয়োজিত আলোচনা সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করি। বক্তব্যে বলি, হিটলার-মুসোলিনি থেকে শুরু করে কোনো স্বৈরাচারই টিকেনি, এ দেশেও টিকবে না। এই অপরাধেই বোধহয় কিছুদিন পর গ্রেফতার হই। জেলখানার ভেতরেই জিয়াউর রহমান তার সামরিক সচিব কর্নেল মাহফুজুর রহমানের মাধ্যমে মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব পাঠান। বলা হয়েছিল, প্রস্তাবটি না মানলে ২৫ বছর জেলে থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে বেইমানি করতে পারিনি বলে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিই। জীবনভর বঙ্গবন্ধুর সৈনিক হিসেবে তার আদর্শ আঁকড়ে ধরেই থাকতে চেয়েছি। এর ফলেই হয়তো অধিষ্ঠিত হতে পেরেছি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির আসনেও। আমার জীবনে আর কোনো চাওয়া-পাওয়া বাকি নেই। আমি শুধু চাই, এ দেশে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ চিরঞ্জীব থাক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। আমাদের জাতীয় ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর অবদান অপরিসীম। গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি এই জাতিকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। এ জন্য তাকে বহুবার কারাবরণসহ অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে এ দেশের জনগণকে জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে এই মহান নেতা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। এ জন্য পুনরায় তাকে কারাবরণ করতে হয়, যেতে হয় ফাঁসির মঞ্চে। তবুও তিনি শত্রুর সঙ্গে আপস করেননি। দেশ ও জনগণের স্বার্থকে সারাজীবন সমুন্নত রেখেছেন। দুঃখী মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। তাই ঘাতকচক্র জাতির জনককে হত্যা করলেও তার আদর্শ ও নীতিকে ধ্বংস করতে পারেনি। তিনি ‘সোনার বাংলা’র স্বপ্ন দেখেছিলেন। আমাদের দায়িত্ব হবে দেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করে জাতির জনকের সেই স্বপ্ন পূরণ করা। তাহলেই তার আত্মা শান্তি পাবে এবং আমরা এই মহান নেতার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে পারব।
লেখক : মহামান্য রাষ্ট্রপতি, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
সূত্র : আমার বঙ্গবন্ধু (সমকাল)